ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রেলে নিয়োগ দুর্নীতি

বিচারের শুরুতেই হোঁচট খেল দুদক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
বিচারের শুরুতেই হোঁচট খেল দুদক

চট্টগ্রাম: রেলওয়ের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ১৩টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলেও, বিচারের শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়েছে সংস্থাটিকে।  দুটি দুর্নীতির মামলায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাসহ তিনজনকে দেয়া সাজায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি দুদক। 

একইসঙ্গে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ যাদের ছিল তারা খালাস পেয়ে যাওয়ায় বাকি মামলাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও শংকায় পড়েছে দুদক।

মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা প্রমাণিত হওয়ার পরও সেই ধারায় শাস্তি না দেয়ায় দুদকের কর্মকর্তা ও কৌঁসুলিরা সংক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

 তারা বলেছেন, ৫ (২) ধারায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর।   সেই ধারায় সাজা দিয়ে শাস্তি বাড়ানোর জন্য আপিল করা হবে।

দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ।   আমাদের আইনজীবীরা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা প্রমাণ করেছেন।   কিন্তু এরপরও এই ধারায় কেন সাজা দেয়া হল না বুঝতে পারছি না।   এরপরও আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আইন অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল করব।   বেনিফিশিয়ারি যাদের খালাস দেয়া হয়েছে, তাদের শাস্তির জন্যও আপিল করব।

২০১২ সালের ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে তৎকালীন রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী ওমর ফারুক তালুকদারকে বহনকারী গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।  

তোলপাড়ের মধ্যেই দুদক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ১৩টি মামলা করে।   এর মধ্যে ফুয়েল চেকার ও সহকারী কেমিস্ট পদে নিয়োগে দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল)।

দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ইউসুফ আলী মৃধা, জ্যেষ্ঠ ওয়েলফেয়ার অফিসার (বরখাস্ত) গোলাম কিবরিয়া এবং অতিরিক্ত প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (বরখাস্ত) হাফিজুর রহমান।    দুই মামলায় নিয়োগ পাওয়া পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেন বিচারক।

সূত্রমতে, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল দণ্ডবিধির ১৬৬, ১৬৭, ৪৭৭ (ক), ১০৯, ২০১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায়।   আদালত দুই বছর করে সাজা দিয়েছেন ১৬৭/১০৯ ধারায়।

তবে আদালত দুটি মামলার রায়ে উল্লেখ করেছেন, আসামি গোলাম কিবরিয়া, হাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং ইউসুফ আলী মৃধার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬৭/১০৯ তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত ধারাসমূহে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে দন্ডবিধির ১৬৭/১০৯ ধারায় দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হল।

আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেন, দণ্ডবিধির ১৬৭/১০৯ ধারায় শাস্তি প্রদান করায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় শাস্তি দেওয়া হল না।

ফুয়েল চেকার পদে নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় দুদকের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ১৬৭ ধারা এবং ৫ (২) ধারা দুটি আলাদা বিষয়, আলাদা অভিযোগ।   এক ধারায় শাস্তি দেয়ার কারণে আরেক ধারায় শাস্তি প্রদান না করা সমীচীন নয়।    

সহকারী কেমিস্ট পদে নিয়োগে দুর্নীতির মামলার কৌঁসুলি ও বিভাগীয় বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ১৬৭ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে তিন বছর।   আর ৫ (২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর।   ৫ (২) ধারায় শাস্তি দিয়ে সাজার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

ক্ষতিসাধনকল্পে সরকারী কর্মচারি কর্তৃক কোন অশুদ্ধ দলিল প্রণয়ন সংক্রান্ত দণ্ডবিধির ১৬৭ ধারায় বলা আছে, যে ব্যক্তি সরকারী কর্মচারি হইয়া এবং অনুরূপ সরকারী কর্মচারি হিসেবে কোন দলির প্রস্তুত বা অনুবাদের ভারপ্রাপ্ত হইয়া কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধিত হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে জানিয়া উক্ত দলিলটি এইরূপে প্রস্তুত ও অনুবাদ করে যে সে উহা অশুদ্ধ বলিয়া জানে বা বিশ্বাস করে সেই ব্যক্তি যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ডে-যাহার মেয়াদ তিন বৎসর পর্যন্ত হইতে পারে বা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

অপরাধমূলক অসদাচরণ সংক্রান্ত দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, কোন গণ কর্মচারি অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার চেষ্টা করিলে তিনি সাত বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সম্পর্কিত অর্থসম্পদ বা সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা যাইবে।

অভিযোগ প্রমাণে দুদকের কৌঁসুলিদের কোন ঘাটতি ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, কৌঁসুলিরা যে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন, সেটা তো আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।   অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ যারা দিল তাদের সাজা হয়েছে।   যারা নিয়োগ পেল তাদেরও তো সাজা হওয়া উচিৎ ছিল।   আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রেলওয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় মৃধার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা করে দুদক।  এর মধ্যে প্রথম দুটি মামলার রায় ঘোষণা করল আদালত।    

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

মৃধাসহ ‍তিনজনের ৪ বছরের কারাদণ্ড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।