চট্টগ্রাম: ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আবাসন ব্যবসা এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তবে সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করেছে।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে ৮ম রিহ্যাব চট্টগ্রাম ফেয়ার-২০১৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের(সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, রিহ্যাব সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, চট্টগ্রাম জোনাল স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান এস এম আবু সুফিয়ান।
ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেকোন ব্যবসায় উঠানামা থাকে। আমি নিজেও একজন ব্যবসায়ী ছিলাম। সুতরাং এ অভিজ্ঞতা আমার আছে। দুঃসময়ে যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয় ব্যবসায়ীদের জন্য তা আগামী দিনের পাথেয়। আবাসন ব্যবসার সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। কারণ মানুষের সঙ্গে সবকিছু বেঈমানি করলেও সম্পত্তি কখনো বেঈমানি করবে না।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, রিয়েল এস্টেট খাতের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উন্নত বিশ্বে প্রবৃদ্ধি উঠানামা করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার উপর ভিত্তি করে। ইউরোপ-আমেরিকা এর বড় উদাহরণ। যখন আমেরিকার গৃহায়ণ ব্যবসায় ধ্বস নামলো তখনি বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলো। প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ খাত।
ভূমি প্রতিমন্ত্রী বলেন, রিয়েল এস্টেট অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি খাত। এ খাতের উন্নতিতে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। কোন সরকারই এখাতকে উপেক্ষা করতে পারবে না। সুতরাং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা যেন কোয়ালিটি প্রোডাক্ট ও বিল্ডিং কোডের ক্ষেত্রে কোন ধরণের আপোষ না করেন। রিহ্যাবের সব সদস্য ইমারত বিধিমালা নাও মানতে পারেন। কিন্তু রিহ্যাবকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
জাবেদ বলেন, নগরীর আশেপাশে উপশহর গড়ে তুলতে হবে । তাহলে নগরীর উপর চাপ কমবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ করতে হবে। আমরা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি। অতি শিগগির সেটা হবে বলে আশা করছি। বিভিন্ন জোনে ভাগ করে চট্টগ্রামকে সাজানো হবে।
তিনি বলেন, এখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। সুতরাং আয়তন কমিয়ে এনে ফ্ল্যাটের মূল্য কমাতে হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
জনবহুল দেশে কোন সরকারের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জিরো টলারেন্স রাখা সম্ভব নয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের একার পক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব নয়। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দুইটি সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর আস্থা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী দুটি দেশেই ঐতিহাসিক সফর করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগের সে বাংলাদেশ আর নেই। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের চেহারাই পাল্টে যাবে।
জাবেদ বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহী। অতি শিগগির কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে। দ্বিতীয় কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করা হবে। আগামী পাঁচবছরে চট্টগ্রামের চেহারায় পাল্টে যাবে।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীরা তাদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে এখাতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। সুতরাং কোন কারণে যদি মানুষের আস্থা হারান তাহলে অধঃপতন অনিবার্য। আবাসন ব্যবসায়ীদের এটি মাথায় রাখতে হবে।
পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। যত্রতত্র ঘর বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের ফুড সেফটির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার পর সময়মতো হস্তান্তর না করায় বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি হয়। মানুষ আবাসন ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। বিশ্বাস করতে পারে না। সময়মতো প্লট ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর করলে আস্থা বাড়বে। সৎ উদ্দেশ্য থাকলে স্বার্থ সংঘাত হবে না।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন বলেন, নির্মাণসামগ্রী ও ভূমির মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বল্প মূল্যে ফ্ল্যাট বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। মধ্যবিত্তের বাসস্থান সমস্যার সমাধানে রিহ্যাবের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে খাস জমি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
পরে ফিতা কেটে রিহ্যাব ফেয়ারের উদ্বোধন করেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী। আবাসন মেলা উপলক্ষে ১৯ জুন প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের নিয়ে ওয়ার্কশপ ও সেমিনার, ২০ জুন কিড্স ডে-আউট এবং ২২ জুন মেলার সমাপনি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
মেলায় ৬৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে আবাসন, নির্মাণ সামগ্রী ও অর্থ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলায় প্রবেশ মূল্য এককালীন ৫০টাকা ও মাল্টিপল ১০০টাকা। এ টাকা জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৪