ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভোটের-কথা

যশোর-৪

ধারাবাহিক জয় চায় আ’লীগ, মর্যাদার লড়াই বিএনপির

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
ধারাবাহিক জয় চায় আ’লীগ, মর্যাদার লড়াই বিএনপির

যশোর: যশোর-৪ আসন গঠিত জেলা সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন এবং বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা নিয়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে গত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে আটবারই জিতেছে আওয়ামী লীগ। দুইবার জিততে পেরেছেন বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থীরা। সবশেষ নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে জিতেছেন আওয়ামী লীগের রণজিত কুমার রায়। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি যেমন হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে, তেমনি বিএনপি-জামায়াত চাইছে গোটা দেশের অন্যান্য আসনগুলোর মতো এখানেও নিজেদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নানা হিসেব-নিকেশ মাথায় রেখেই আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। দলের তৃণমূলেও তুমুল আলোচনা।

যদিও এখনো মনোনয়ন ঘোষণা হয়নি কোনো বড় জোটেরই, তবে সাংগঠনিকভাবে সবপক্ষই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়, দশম জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাবুল। আর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তালহা শাহরিয়ার (টিএস) আইয়ূব ও ফারাজি মতিয়ার রহমান। এছাড়াও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও অভয়নগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ এবং ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদও মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনে।

৮ বার নৌকার জয়ের আসনটি আওয়ামী লীগের শক্তি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ক্ষমতাসীনদের কোন্দলের কথা সবার জানা। সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনই এই কোন্দলের নজির দেখায়। হাইকমান্ড রণজিত কুমার রায়কে মনোনয়ন দিলেও ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়েন সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব। এতে নির্বাচনী মাঠ উত্যপ্ত হয়ে ওঠে। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সামনে আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে প্রকাশ হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীনদের দুর্বলতা। এই সুযোগে সহিংসতার ঘটনা ঘটে অভয়নগরের মালোপাড়ায়। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বের সমালোচিত হয়।  

স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য হয়ে পড়েছে। মনোনয়ন প্রশ্নে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। যদিও নেতারা মুখে বলছেন, হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করবেন তারা।
 
যোগাযোগ করলে বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতাকর্মীর দলের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে। নেত্রী একজনকেই দলের মনোনয়ন দেবেন। আমি এমপি হয়ে কখনো ঢাকায় পড়ে থাকিনি, সবসময় এলাকায় থেকে উন্নয়নমূক কর্মকাণ্ড আর দলের পেছনে সময় দিয়েছি। এসব আমলনামা নিশ্চয়ই নেত্রীর কাছে আছে। ফলে আমার ধারণা, তিনি আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আর আমাকে মনোনয়ন না দিলে যাকে দেবেন তার পক্ষেই কাজ করবো।  

রণজিত রায় বলেন, গতবার অন্যান্য দলের প্রার্থী না থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী ভোট করেছে। আগামী নির্বাচনে কেউ নৌকার বিপক্ষে ভোট করবে বলে বিশ্বাস করি না। এবারের নির্বাচন বাঁচা-মরার লড়াই। ফলে নির্বাচনের আগে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার পক্ষেই কাজ করবে। এই আসনে জোটের শরিকের কোনো অবস্থান আছে বলে আমার মনে হয় না।

আওয়ামী লীগের আরেকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাবুল বলেন, মনোয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তৃণমূলের সব নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছি। নেত্রী মনোনয়ন দিলে বিজয় উপহার দিতে পারবো।  

এদিকে, এই আসনে বিএনপি-জামায়াত জোটের অবস্থা খুব সুবিধের না হলেও তাদের টার্গেট অস্তিত্ব রক্ষায় আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা। বিগত ১০টি নির্বাচনে তারা দুইটিতে জয় পেলেও এবার জোটের হাইকমান্ড সারাদেশে ‘বিজয় নিশ্চিতের’ যে প্রত্যয় নিয়ে নেমেছে, সেটা এখানেও ফলাতে চায় স্থানীয় নেতৃত্ব। সেজন্য মর্যাদা রক্ষায় জোটের শরিকদের সঙ্গে রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে তৎপর বিএনপি।  

নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার তালহা শাহরিয়ার (টিএস) আইয়ুব ধানের শীষ প্রতীক চাইছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে আড়াই হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য ফারাজি মতিয়ার রহমান।  

জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব বাংলানিউজকে বলেন, আমি তৃণমূলের সঙ্গে আছি ১৯ বছর। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকি। এজন্য আমার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা দেওয়া হয়েছে। একাধিক বার জেলও খেটেছি। দলের নেতাকর্মীরা আমাকে ভালবাসে। দল আমাকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে, আশা করি ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী হবো।  

ফারাজি মতিয়ার রহমান বলেন, তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘদিন আছি। সেই হিসেবে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী। মনোনয়ন পেলে অব্যশই বিজয়ী হবো।

আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ বলেন, দলের মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
ইউজি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।