ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

মাদারীপুর-৩: প্রার্থীকেই প্রাধান্য দিতে পারে ভোটাররা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
মাদারীপুর-৩: প্রার্থীকেই প্রাধান্য দিতে পারে ভোটাররা! বাঁ থেকে সৈয়দ আবুল হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।

মাদারীপুর: মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসন। মাদারীপুর জেলার তিনটি আসনই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

কথিত রয়েছে, নৌকা প্রতীকেই ভোটারদের আস্থা এই জেলায়। তবে এই ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে বলেও অনুমান করা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং মাদারীপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার। ভোটারদের কমপক্ষে ৮০ ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থক।

মাদারীপুর-৩ আসনটিতে বিগত সময়ে চারবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। ভোটাররা জানান, চারবারের নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য কালকিনির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ব্যক্তি উদ্যোগে শিক্ষার প্রসারে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়।

তবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিমকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর পাল্টে যেতে থাকে মাদারীপুর-৩ আসনের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ।

সাধারণ ভোটাররা জানান, আবুল হোসেনের কালকিনিতে বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রবেশের পর স্থানীয় রাজনীতিতে নানা মোড় নিতে শুরু করে। তবে বাহাউদ্দিন নাছিম বিগত পাঁচ বছরে মাদারীপুর-৩ আসনের প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তার অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করেছেন। সেই ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয়তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

আরেকজন হেভি ওয়েট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপকে কেন্দ্র করে পটপরিবর্তন হতে পারে এই আসনের রাজনীতির। মাদারীপুর-৩ আসনে বাহাউদ্দিন নাছিমকে বাদ দিয়ে আব্দুস সোবাহান গোলাপকে মনোনয়ন দেওয়ার গুঞ্জনে ভোটারদের মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আব্দুস সোবাহান গোলাপ অনেকটা পিছিয়ে থাকায় তার মনোনয়ন পাওয়ার গুঞ্জনে হতাশা প্রকাশ করছেন কালকিনির অনেকে।

সাধারণ ভোটারদের ধারণা ছিল, বর্তমান সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিমকেই ফের মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। তা না হলে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পেতে পারেন আওয়ামী লীগের টিকিট। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কালকিনির জনপ্রিয় এই দুই নেতার নাম বাদ পড়ার গুঞ্জনে আলোচনার ঝড় বইছে মাদারীপুর-৩ আসনে।

ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত এই আসনে ব্যক্তির ওপর আস্থা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের। সে ক্ষেত্রে প্রতীকের প্রাধান্য কমেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ ভোটার জানান, মূলত আবুল হোসেন একজন জনপ্রিয় নেতা। তিনি বিগত সময়ে চারবার এই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর গত নির্বাচনে আসেন বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি কালকিনির উন্নয়নের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছাকাছি পৌঁছে একটা অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এ দিক থেকে ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ বেশ পিছিয়ে রয়েছেন। এলাকায় যাতায়াত কম থাকায় ভোটারদের থেকে তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। সে ক্ষেত্রে তাকেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলে ভোটারদের একটা বড় অংশই মানসিকভাবে ধাক্কা খাবেন।
এদিকে, বাহাউদ্দিন নাছিম, সৈয়দ আবুল হোসেন ও আব্দুস সোবহান গোলাপ এই হেভিওয়েট তিন নেতাকে ঘিরে মাদারীপুর-৩ আসনে তৈরি হয়েছে তিনটি বলয়। আব্দুস সোবাহান গোলাপের এলাকায় যাতায়াত কম থাকলেও তার সমর্থকেরা নিয়মিত তার পক্ষে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের জনপ্রিয়তায় তেমন কোনো কমতি হয়নি। অন্যদিকে কালকিনিতে নতুন আফম বাহাউদ্দিন নাছিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে গণসংযোগের মাধ্যমে নিজের প্রতি ভোটারদের দুর্বলতাও তৈরি করেছেন। এই অবস্থায় ভিন্ন কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে তা ভোটারদের একটা বড় অংশের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবে। আর সে ক্ষেত্রে ভোটের হিসাব-নিকাশও পাল্টে যেতে পারে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেটা বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে বলেও জানান সাধারণ ভোটার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী।  

নির্বাচন কমিশনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি জমা নেয়া সম্পন্ন করে।  

মাদারীপুর-৩ সংসদ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনেন ১৭ জন। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎ শেষে গুঞ্জন ওঠে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপকে মাদারীপুর-৩ সংসদ এলাকায় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।  

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা সিদ্দিকী জানান, কালকিনির মাটি ও মানুষের কাছে জনপ্রিয় নেতা আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বিগত পাঁচ বছর কালকিনির প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে খোঁজ-খবর রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। তাকে মনোনয়ন না দিলে তৃণমূলে হতাশা দেখা দেবে।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, মাদারীপুর-৩ আসনে ড. আব্দুস সোবহান গোলাপকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এ খবরে সাধারণ ভোটার ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ হয়েছে। আব্দুস সোবাহান গোলাপ একজন জনবিচ্ছিন্ন নেতা। এলাকায় তার কোনো যোগাযোগ নেই, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তার যোগাযোগ নেই। সেখানে তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আসনটি আওয়ামী লীগ হারাতেও পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।