ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভোটের-কথা

বরিশাল-৬ আসনে ছাড় দিতে নারাজ আ.লীগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
বরিশাল-৬ আসনে ছাড় দিতে নারাজ আ.লীগ ...

বরিশাল: ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ঘেরা বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা। জেলার সবচেয়ে বড় এ উপজেলা নিয়েই বরিশাল-৬ আসন। যেখানে বর্তমানে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৫৯ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৭৮৬ ও নারী ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭৩ জন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার বলে দেয় এখানে দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা মজবুত। তারপরও জাতীয় নির্বাচনে জোটের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সবসময় আসনটি ছেড়ে দিচ্ছে জাতীয় পার্টির কাছে।

আর সে হিসেবে ১৪ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা ঘিরে এ আসনে বিএনপির পর জাতীয় পার্টিই রয়েছে এগিয়ে।  

বর্তমানে বরিশাল-৬ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা আমিন। তবে এর আগে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।

আর এবারে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন হলে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান এমপি নাসরিন জাহান রতনা আমিন। জাতীয় পার্টি একক নির্বাচন করলেও এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে আসনে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগেরই বেশ কয়েকজন। আর স্থানীয় নেতাকর্মীরাও আসনটি আর জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে চান না।  

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, বাকেরগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম চুন্নু, পৌর মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া, সাবেক সংসদ (১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের) সদস্য প্রয়াত মাসুদ রেজার স্ত্রী জেলা পরিষদের সদস্য আইরীন রেজা ও বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু।

তবে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন যেহেতু দলের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিককে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় এরশাদের জাতীয় পার্টিকে। তাই এবারে এ আসনে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিককেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতারা। কিন্তু তার সাথে সাথে সামসুল আলম চুন্নু, লোকমান হোসেন ডাকুয়ার অবস্থানও এখানে বেশ ভালো রয়েছে।

তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রার্থী যেই হোক না কেন গোটা বাকেরগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের যে উন্নয়ন হয়েছে তা হয়েছে আওয়ামী লীগের এই সরকারের আমলে। সংসদীয় এলাকার হিসেবে নয় উন্নয়ন ইউনিয়ন-উপজেলা-পৌরসভা অর্থাৎ স্থানীয় সরকার বিভাগে। সংসদ নির্বাচনে তাই এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকাটা প্রয়োজন। তাহলে গোটা সংসদীয় এলাকার যেমন উন্নয়ন ঘটবে তেমনি তৃণমূল আওয়ামী লীগে চাঙ্গা মনোভাব ফিরে আসবে। যদি আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেয় সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আবির্ভাব ঘটনার সম্ভাবনাও রয়েছে।

নির্বাচনের বিষয়ে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক বলেন, ভোটের মাঠের কথা বলা হলে আওয়ামী লীগ এখানে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টি এখানে নির্বাচনে জিতলেও তার পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থন। মনোনয়ন প্রশ্নে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়গুলো চিন্তা করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এদিকে এই আসনে বিএনপির অভ্যন্তরেও রয়েছে কিছুটা বিরোধ। এর ফলে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বেশ কয়েকজন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হোসেন খান, শিকদার খলিলুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদ হাসান, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আব্দুস শুক্কুর বাচ্চু নেগাবান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার হোসেন (অব.), ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন ও জেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন।

সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন জানান, বাকেরগঞ্জে বিএনপিতে কোনো রকম অন্তর্দ্বন্দ্ব কিংবা কোন্দল নেই। যেটুকু ঝামেলা ছিলো তা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। আর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি সে অনুযায়ী এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান।

যদিও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চাচ্ছেন বিধায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাচ্ছেন বিএনপির সাবেক সদস্য আব্দুস শুকুর বাচ্চু।  

এছাড়াও এ আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীনের। আর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এ আসনে ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম আল-আমিন চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির টিকিট পেয়ে আসনটিতে সংসদ সদস্য হন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো. ইউনুস খান। তার মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা) অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ খান।  

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম আনোয়ার চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হলেও একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে হটিয়ে আসনটি দখল করেন আওয়ামী লীগের মাসুদ রেজা।  

২০০১ সালে জাসদ থেকে বিএনপিতে এসে আবুল হোসেন খান সংসদ সদস্য হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বিএনপির আবুল হোসেনকে হারিয়ে নির্বাচিত হন মহাজোটের প্রার্থী রুহুল আমিন হাওলাদার এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার স্ত্রী নাসরিন জাহান রতনা আমিন সংসদ সদস্য হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
এমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।