ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভোটের-কথা

নৌকার দুর্গে লড়াই করে জিততে চায় বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৮
নৌকার দুর্গে লড়াই করে জিততে চায় বিএনপি মোহাম্মদ নাসিম, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, সেলিম রেজা ও কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: যমুনা বিধৌত কাজিপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, ১২টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি গঠিত। যার মধ্যে ১১টি ইউনিয়নই চরাঞ্চলে। 

এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৪৮ হাজার ১৬৬টি। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৩ হাজার ২০১ ও নারী ভোটার রয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯৬৫ জন।

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর স্মৃতিবিজড়িত কাজিপুরকে রাজনৈতিক বিবেচনায় দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ (রূপক অর্থে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বোঝানো হয়) বলা হয়ে থাকে। ১৯৫৬ সাল থেকেই এখানে মনসুর আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখানে শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে, আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মনোনয়ন প্রায় চুড়ান্ত।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, ১৯৮৬ ও ৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদে ১৯৫৬ সাল থেকে সব জাতীয় নির্বাচনেই এখান থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ১৫ ফ্রেব্রুয়ারির নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী জহুরুল ইসলামের কাছে হেরে যায় বিএনপি। ১৯৯১ ও ৯৬ সালে মোহাম্মদ নাসিম বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ৯৬ সালে তিনি দু’টি আসনে নির্বাচন করে জয়লাভ করায় সিরাজগঞ্জ-২ (সদর) রেখে কাজিপুর ছেড়ে দিলে সেখানে উপ-নির্বাচন হয়।

ওই নির্বাচনে তার বড় ভাই আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত ড. মোহাম্মদ সেলিম নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০১ সিরাজগঞ্জের তিনটি আসনে নির্বাচন করলেও নাসিম বিজয়ী হন এ আসন থেকেই। ২০০৮ সালে ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা মামলার কারণে নির্বাচন করতে না পারায় তার ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় নির্বাচন করে জয়ী হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।

কারিশম্যাটিক নেতা হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের উন্নয়নের গুণগান করছেন বিরোধীপক্ষও।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবহেলিত কাজিপুরকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন নাসিম। যমুনার ভাঙ্গন রোধে সাড়ে আটশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। এতে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে তার নির্বাচনী এলাকা কাজিপুর ও সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন। অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ রয়েছে শেষপর্যায়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি),  নার্সিং ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এফডব্লিউভিপিআই)।  

চরাঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চরের ছয়টি ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ ছাড়াও রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দিরসহ শত শত উন্নয়নমূলতক কাজে নাসিমের অবদান রয়েছে। আর এসব কারণে দিন দিন তার জনপ্রিয়তা বাড়ছেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজিপুর স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, যে যে দলই করি না কেন, কাজিপুরের উন্নয়নে নাসিম সাহেবের কোনো বিকল্প নেই। অবহেলিত কাজিপুরকে তিনি নতুন রূপে সাজিয়েছেন এটা সবাইকেই স্বীকার করতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, কাজিপুরবাসীর সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। এখানাকার প্রতিটি মানুষ আমাদের অন্তর দিয়ে ভালবাসেন। নৌকার দুর্গ হওয়ার কারণে আওয়ামী বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকাকালে এ অঞ্চলটি অবহেলিত ছিল। নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলো ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কাজিপুরের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আসার পর আবারও উন্নয়ন বঞ্চিত হয় কাজিপুরের মানুষ। ২০০৮ সালে আমার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের হাত ধরেই উন্নয়নের নবযাত্রায় পা রাখে কাজিপুর। গত সাড়ে নয় বছরে কাজিপুরের রূপ পাল্টে গেছে। আর উন্নয়নের কারণে আগামী নির্বাচনেও নৌকার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাবে এ এলাকার জনগণ।

এদিকে মনসুর আলী পরিবারের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে শক্ত কোনো ভিত গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। তারপরও থেমে নেই দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা। এছাড়া জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপার নাম শোনা গেলেও এলাকায় তার কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।

জাতীয় নির্বাচনগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অবস্থান গড়ে তুলতে না পারলেও বিএনপির আশার আলো যুগিয়েছে ২০১১ সালের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনপি প্রার্থী আব্দুস সালাম। অবশ্য সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বিদ্রোহী প্রার্থী বিএনপির বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিলেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। এছাড়া ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতটিতে জয় তুলে নেয় বিএনপি প্রার্থীরা।

নাসিম একজন প্রভাবশালী প্রার্থী স্বীকার করে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা বলেন, বর্তমান সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সব মানুষই আজ ঐক্যবদ্ধ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় অর্জন করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

তিনি বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, শহর বিএনপির তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি ও বর্তমানে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছি। তাছাড়া কাজিপুর উপজেলা সদরে বাড়ি এবং অনেক আত্মীয় স্বজন থাকার কারণে বাড়তি সমর্থন রয়েছে আমার। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে প্রথমবারের মতো এ আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাবো।

অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের দুর্গ হলেও এখানে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি স্থাপনে আমি কাজ করেছি। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মূল দল ছাড়াও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি আমার নেতৃত্বেই গঠন করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, দল মনোনয়ন দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থান গড়ে তুলতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।