ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

দলের প্রার্থী চায় আ’লীগ, সরব জাপা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৮
দলের প্রার্থী চায় আ’লীগ, সরব জাপা

পটুয়াখালী-১ আসন ঘুরে: পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ ও দুমকি উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের পটুয়াখালী-১ আসন। বর্তমানে এ আসনের জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।  
 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জোটবদ্ধ হওয়ার পর আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া।

তবে এবার জোট শরিক নয়, নিজেদের দল থেকেই প্রার্থী দেখতে চান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

তারা বলছেন, দলীয় এমপি না থাকায় গত পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কারও কাছে তাদের চাওয়া-পাওয়া, অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেননি। সে কারণে সাংগঠনিকভাবেও বেশ হতাশ নেতাকর্মীরা। উন্নয়ন ও দলকে শক্তিশালী করতে এবার নিজ দলের প্রার্থীকে এমপি হিসেবে দেখতে চান তারা।  

সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া। যদিও তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দাঁড়িয়ে গেছেন দলের আরও কয়েকজন নেতা; যাদের মধ্যে রয়েছেন তরুণও।

আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আসনটি উদ্ধারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিকল্প নেই। এরপরও যদি পরিস্থিতি এমন হয় যে, জোটবদ্ধ নির্বাচন করতে হয়-তখন হয়তো শরিক দলের এমপি জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মনোনয়ন পেতে পারেন।  

সেক্ষেত্রে বলা যায়, বেশ সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে দীর্ঘদিন এলাকায় কোণঠাসা হয়ে থাকা বিএনপি।  

হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তবে তার বিপরীতে মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপির আরেক নেতা স্নেহাংশু সরকার কুট্টি।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগ চারবার এবং বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দুইবার করে জয় পেয়েছে। আর ১৯৭৯ সালের নির্বাচন বাদ দিলে ৯টি নির্বাচনেই পটুয়াখালী-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জিতেছেন, সেই দল সরকার গঠন করেছে। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আর সরকার গঠন করে বিএনপি।

জানা যায়, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুইবার জিতেছেন শাহজাহান মিয়া। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ওই নির্বাচনে তিনি এক লাখ ২০ হাজার ১৩২ ভোট পান। আর ধানের শীষের প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী পেয়েছিলেন ৭৩ হাজার ১৭ ভোট।  

এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার ছেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুজ্জামান মনির বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা সাবেক এমপি, সফলতার সঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। গতবার এখানে মনোনয়ন পেলেও দলীয় সিদ্ধান্তে তা প্রত্যাহার করা হয়। এরপরও তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করে চলেছেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নেপ্রত্যাশী। ’

শাহজাহান মিয়া ছাড়াও এলাকায় জোরালো গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন। মনোনয়ন পেতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী আশরাফ। দলের শীর্ষ পর্যায়ে তার বেশ যোগাযোগ রয়েছে। সেখান থেকে ‘সিগন্যাল’ পেয়েই তিনিও এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আশরাফের সমর্থকরা।  

এলাকাবাসী বলছেন, ঢাকায় থাকলেও আলী আশরাফ ও আফজাল হোসেন প্রায় প্রতিমাসেই নিজ এলাকায় গণসংযোগ করেন। দলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের শুভেচ্ছাসহ নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্টার টানিয়েছেন আফজাল হোসেনসহ অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
 
যোগাযোগ করা হলে আলী আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, এলাকায় আমার নিজের উদ্যোগ ছাড়াও সরকারের পক্ষে নানা উন্নয়ন করেছি। দলের সাংগঠনিক তৎপরতায়ও নিজেকে যুক্ত রেখেছি। স্বচ্ছ ধারার রাজনীতি করছি।  

‘আর আমি ১/১১-সহ দলের দুঃসময়ে কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। আমি করছি। এখন তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। ’  

দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ মৃধাও রয়েছেন। তার স্ত্রী লুৎফন নেছা সুলতান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি।  

মনোনয়ন প্রশ্নে সরব জাপা
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাপার স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ তাদের জোট শরিক জাপাকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার পর জয়ী হন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার । তিনি ভোট পেয়েছিলেন ৭৯ হাজার ২০৩ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম; যিনি বর্তমানে পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র হিসেবে রয়েছেন। তিনিও দলের মনোনয়ন পেতে চান এমপি হিসেবে।  

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগের স্বরে বলেন, প্রায় ২৪ বছর পর আসনটিতে জাপা ক্ষমতায় আসে। তবে সেভাবে এমপির উদ্যোগে এলাকায় উন্নয়ন কাজ হয়নি। এমনকি নিজ দল জাতীয় পার্টিকেও সুসংগঠিত করতে পারেননি রুহুল আমিন হাওলাদার।  

স্থানীয় নতুন বাজারের ব্যবসায়ী মিহির কর্মকারের ভাষ্য, আমাদের এমপি এ পর্যন্ত আমরা দেখিইনি। এলাকায় কোনো প্রোগ্রাম থাকলে তিনি নিজস্ব হেলিকপ্টারে করে আসেন এবং সেখান থেকেই ঢাকায় ফিরে যান।  

তবে পটুয়াখালী জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম মামুন বলেন, বতর্মান এমপির সময়ে এলাকায় কোনো রাজনৈতিক সংঘাত হয়নি। টেন্ডারবাজি হয়নি। একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।  

‘এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। তিনি মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে,’ বলেন তিনি।
   
কোন্দল থাকলেও আলতাফে একাট্টা বিএনপি, বাধা স্নেহাংশু
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি হন তিনি।  

বিএনপি সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান, যদিও নানা বিতর্কে পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান মিয়ার কাছে হেরে যান আলতাফ চৌধুরী।  

অভিযোগ রয়েছে, দেশের অন্যান্য জায়গার মতো পটুয়াখালীতেও প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারেনি বিএনপি। তবে আড়ালে-আবডালে তৃণমূলে দোয়া মাহফিল, মৃত্যুবার্ষিকীর মতো ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চলছে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা।

আগামী নির্বাচনেও আলতাফ চৌধুরী মনোনয়ন পেলে আসনটি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও বলছেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন পেলে জয়ের জন্য আওয়ামী লীগকে শাহজাহানকেই বেছে নিতে হবে। কারণ আলতাফের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে ঠেক্কা দেওয়ার মতো অবস্থান তারই রয়েছে। যদিও লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

মোবাইলে কল দেওয়া হলে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, প্রার্থী তো তার সবই ভালো বলবে। তবে এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন আমার বাসায় কয়েকবার আক্রমণ করেছে। কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দেয়নি তারা।  

এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ সরোয়ার কালাম বলেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী দলের একক প্রার্থী। এছাড়া আর কোনো প্রার্থী নেই। তবে আমাদের ওপর ক্ষমতাসীন দল নানাভাবে নির্যাতন করছে।  

বিএনপির কিছু নেতা বলছেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর মনোনয়ন পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা স্নেহাংশু সরকার কুট্টি। তিনিও আসনটিতে মনোনয়ন চাইবেন।
 
জানা যায়, ২০০২ সালে জেলা বিএনপির সম্মেলনে আলতাফ চৌধুরীকে সভাপতি এবং স্নেহাংশু সরকার কুট্টিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একপর্যায়ে সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ হয়, যা গড়ায় দলীয় কোন্দলে।  

এরই জের ধরে স্নেহাংশু সরকারকে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা বিএনপির সেই কোন্দল এখনো রয়ে গেছে। স্নেহাংশুর সমর্থকরা বলেন, শুধু জেলাতেই নয়, সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির এ কোন্দল উপজেলাতেও গিয়ে লেগেছে। উপজেলাতেও কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন।  

তবে দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ সরোয়ার কালাম বাংলানিউজকে বলেন, স্নেহাংশু সরকার বিএনপির কেউ নন। তাকে ২০০৪ সালে আগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখনো সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। তিনিও মনোনয়ন চাইছেন- আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু এটা দলে কোনো প্রভাব ফেলবে না।  

আসনটিতে এবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মুফতি আলতাফুর রহমানের নাম। হাতপাকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে দলটির এই কেন্দ্রীয় শুরা সদস্যকে এরই মধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে পরিচয় করিয়েও দেওয়া হয়েছে।  

তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-১ আসনটির মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩১ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৭ পুরুষ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯ ৪৪ জন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৮
এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।