ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভোটের-কথা

লালমনিরহাট-২

জোটের অপেক্ষায় আ’লীগ-জাপা, কোন্দলে বিএনপি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
জোটের অপেক্ষায় আ’লীগ-জাপা, কোন্দলে বিএনপি নুরুজ্জামান আহমেদ, সিরাজুল হক, রোকন উদ্দিন বাবুল ও সাহলে উদ্দিন আহমেদ হেলাল

লালমনিরহাট: লালমনিরহাট জেলার মধ্যবর্তী আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-২ আসন। দীর্ঘদিন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য থাকায় দেশের অন্য উপজেলার তুলনায় এ আসনটি বেশ অনুন্নত।

প্রতিটি নির্বাচনে এ আসনে থাকে পাওয়া না পাওয়ার বেদনা। ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করলেও কাঙ্খিত স্বাদ পায়নি এ দুই উপজেলার মানুষ।

ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়েও ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। তবে এ আসনটির নির্বাচনী মাঠ সরগরম হবে বর্তমান সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জোটকে কেন্দ্র করেই। তাদের জোটের ওপর নির্ভর করছে প্রার্থীর সংখ্যা বা মনোনয়ন।

লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আদিতমারী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নুরুজ্জামান আহম্মেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে কিছুদিন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী এরপর সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নুরুজ্জামান আহমেদ। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার মন্ত্রণালয়ের সব সেবা এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন।

তবে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নুরুজ্জামান আহমেদের দূরত্ব রয়েছে অভিযোগ করে আদিতমারী উপজেলার এক ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী স্থানীয় নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজ রাখেন না। গুটি কয়েক নব্য ও অতিথি পাখিদের নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকেন।

এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে প্রতিনিয়ত গণসংযোগ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আদিতমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। তিনি গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। কেন্দ্রের নির্দেশনায় তা প্রত্যাহার করেছেন। দলের প্রতি এ আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে এ আসনে নৌকার মনোনয়ন সিরাজুল হককে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

দেশের ইতিহাসে নির্বাচনের মাধ্যমে এ আসন বরাবরই জাতীয় পার্টির প্রার্থীর দখলে ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রায়ত মজিবর রহমান অংশ না নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ এমপি নির্বাচিত হন। টানা সাত বারের জাপার সংসদ সদস্য মজিবর রহমানের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবুলের হাতে এ আসনের দায়িত্ব তুলে দেন পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওয়ার্ড থেকে উপজেলা পর্যন্ত প্রতিটি কমিটির সমর্থক থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে তিনি মাঠ প্রস্তুত করেছেন। এজন্য এ আসনে রোকন উদ্দিন বাবুল একটি বড় ফ্যক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এ আসনে বিএনপিতে রয়েছে চরম কোন্দল। দুইজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে যারা দু’জনেই কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। একজন তারেক রহমানের আস্থাভাজন সাবেক সংসদ সদস্য সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলাল অপরজন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর অনুসারী কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব চন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। এ দু’গ্রুপের অন্তদ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেওয়ায় সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ দ্বন্দ্বের কারণে এ আসনে বিএনপি থেকে আসাদুল হাবিব দুলুও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এ আসনে জামায়াতের অবস্থান কম হলেও তারা তাদের শরীক বিএনপির ওপর ভর করে গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের চেয়ে অধিক সমর্থন জাতীয় পার্টির।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় পার্টির জোটের ওপর নির্ভর করছে এ আসনের প্রার্থিতা ও ভোটের ইমেজ। জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকলে প্রতীক হবে লাঙ্গল। এক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে সিরাজুল হকও স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন। তখন সিরাজুল হবে আদিতমারী উপজেলার একক প্রার্থী। বাকিরা সবাই কালীগঞ্জ উপজেলার। অাঞ্চলিকতার বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে এ আসনের ভোটারদের।

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, বিগত দিনের  চেয়ে এ আসনে বিএনপি অনেক শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনে লোকজন বিএনপিকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের জবাব দেবে।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সমাজকল্যাণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কোনো কমিটিই ছিল না তবুও লাঙল বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে জাতীয় পার্টির লোকজন সংগঠিত হয়ে এইচএম এরশাদের প্রতিনিধিত্ব করে নিয়মিত গণসংযোগ করছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে।

সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অবহেলিত এ আসনের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে জনগণ নৌকার পক্ষেই রায় দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।