ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ভোটের-কথা

নওগাঁ-৬: বিএনপি’র গায়ে জেএমবি’র রক্ত!

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
নওগাঁ-৬: বিএনপি’র গায়ে জেএমবি’র রক্ত! নওগাঁ-৬: বিএনপি’র গায়ে জেএমবি’র রক্ত!

নওগাঁ থেকে: রাজশাহী জেলার বাগমাড়া’র সীমান্তঘেঁষা উপজেলা নওগাঁর আত্রাই ও রানীনগর উপজেলা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে এই অঞ্চল পরিণত হয় এক রক্তাক্ত জনপদে।

জঙ্গি সংগঠন জেএমবি দখল করে নেয় পুরো এলাকা। দিনে দুপুরে মানুষ ধরে নিয়ে গাছে ঝোলানো, কুঁপিয়ে খন্ড খন্ড করা, সকল ধরনের লোমহর্ষক নির্যাতনের চিত্রই তারা উপহার দিয়েছে।

আর এই জনপদকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়ে বিরোধীদের শায়েস্তা করেছেন বিএনপি’র তৎকালীন সংসদ সদস্য আলমগীর কবির। সহযোগী ছিল বর্তমানে বিএনপির প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা আলমগীরের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু।

২০০৪ সালের এপ্রিল-মে এই দুই মাসের কথা ভোলেনি এখানকার মানুষ। এখনো তারা শিউরে ওঠে সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা স্মরণ করে। নওগাঁ আর রানীনগরের ভেতর দিয়ে ছোট যমুনা নদীর জল বয়েছে অনেক। কিন্তু তৎকালীন বিএনপির নেতাদের ওপর মানুষের ক্ষোভ কমেনি। ১৯৯০ সাল থেকে ১৫ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন আলমগীর কবির। তবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়িয়েও ২০০৮ সালে ভরাডুবি হয়েছে আনোয়ার হোসেন বুলুর।

ভবানীপুর বাজারে কথা হয় কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে। খোকন নামে একজন শ্রমিক বাংলানিউজকে বলেন, এখানে জেএমবি’র তাণ্ডব মানুষ আজো ভোলেনি। দিনের বেলা নয় শুধু, রাতের বেলাতেও আমরা বের হতে ভয় পেতাম। মেয়েরা বাইরে বের হতে পাতো না। মনে হতো এ যেন এক যুদ্ধাঞ্চল। আলমগীর কবির ও তার ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু যে জেএমবি’কে ইন্ধন দিয়েছেন সেটা এখানকার সবাই জানে।

রানীনগরে ভেটি মাদ্রাসায় ছিল বাংলাভাইয়ের ক্যাম্প। সেখানে নির্যাতন সেল তৈরি করে মানুষদের ধরে নিয়ে যেতো জেএমবির সদস্যরা। স্থানীয়দের মতে ঐ ক্যাম্পটি আলমগীর কবিরের নির্দেশেই করা হয়।

খোকন বলেন, এখানে মানুষ বিএনপি’কে ভোট না দেয়ার এটিই বড় কারণ হবে। কেউ আর আলমগীর কবির ও বুলুকে বিশ্বাস করে না।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে আনোয়ার হোসেন বুলু বিএনপির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছেন। আলমগীর কবির এক সময় বিএনপি ছেড়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর এলডিপি’তে গিয়ে ভেড়েন। বিএনপি’র গায়ে জেএমবি’র রক্ত লাগিয়ে নিজেও সটকে পড়েন।

রানীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলা ঘুরে আনোয়ার হোসেন বুলুর প্রচারণা চোখে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে, গাছের গায়ে টানানো হয়েছে জিয়াউর রহমানের ফেস্টুন। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সদস্য হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন বুলু। আর ভাই আলমগীর কবির আবারো বিএনপি’তে এলেও যে নাগালে মই পাবেন না, সে ধারণাও প্রবল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রানীনগর বিএনপি’র একজন সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে এখানে বিএনপি’কে টিকিয়ে রেখেছেন বুলু। যা কিছু মিছিল-মিটিং হয়, সেসবের আয়োজন তিনিই করেন। কমিটিগুলোও তিনিই দেন। এছাড়াও অ্যাড. জিল্লুর রহমান এবং এস.আর. হক আলীর নাম শোনা যায়। তবে নাম শোনা ছাড়া তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

রানীনগর স্টেশনে একজন ব্যবসায়ী বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে যে মানুষ বিএনপি’কে বেছে নেবে, তারও উপায় নেই। আলমগীর কবির জেএমবিকে জায়গা করে দিয়ে যে পাপ করেছিলেন, তার প্রায়শ্চিত্ত এতো সহজে হবার নয়। তাই মানুষ আওয়ামী লীগের মধ্যেই বিকল্প খুঁজছে।

গভীর জলের মাছ ধরা যায় না। তবে সেই মাছকে মানুষ এড়িয়েও চলে। তাই আলমগীর কবির আর তার ভাই আনোয়ার হোসেন বুলুকে এই অঞ্চলের মানুষ সহজে মেনে নিতে পারছে না।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এমএন/জেএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।