ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

গেওয়ার ঘন বনে আটকে পড়ে চোখ!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
গেওয়ার ঘন বনে আটকে পড়ে চোখ! সুন্দরবনের গেওয়ার ঘন বন- ছবি: আবু বকর

শীতে সবাই কাঁপছেন আর দ্রুত পায়ে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জের টাইগার পয়েন্ট থেকে হেঁটে চলছেন। ছাড়ছেন হিম শীতল নিশ্বাস। পৌষের সকালের শীতে সবাই হয়ে পড়ছেন জড়সড়। বিবর্ণ হলুদ দুই একটি পাতা চুপিসারে খসে পড়ছে পথে। শিশিরভেজা পথ আর কুয়াশা চারি ধার।

কুয়াশার ফাঁদ গলে সূর্য দিচ্ছে উঁকি। এভাবে খানিকটা হেঁটে উঠা হলো ইজিবাইকে।

কয়েক মিনিট পর নীল ডুমুর ঘাট থেকে ট্রলার যোগে শুরু হলো সুন্দরবন যাত্রা।

প্রথমে খোল পেটুয়া তারপর হার পাঙ্গাসিয়া নদী বেয়ে ক্রমান্বয়ে বনের গহীনে প্রবেশ। আঁকা বাঁকা নদীর দুই ধারে উঁকি দিচ্ছে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, গরান, সিংড়াসহ বিভিন্ন গাছ। এর মাঝে চোখ আটকে যাচ্ছে গেওয়ার অপুর্ব সমারোহে। বন্য হরিণের ছুটোছুটি, বানরের লাফালাফি, বকের উড়াউড়ি এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে সবাই পৌঁছে যাই চাঁদনী মুখা বাজার ঘাটে।

এ সময় কথা হয় স্থানীয় বাউয়ালী আবুল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, খোল পেটুয়া নদীর বাম পাশের বেশির ভাগ গাছই গেওয়া। এ গাছগুলোতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেন তার।
সুন্দরবনের গেওয়ার ঘন বন- ছবি: আবু বকরএকই স্থানে ফারুক হোসেন নামের এক এনজিও কর্মী বলেন, গেওয়া নোনা পানির গাছ। একটা গাছ ৪০-৪৫ ফুট লম্বা হয়। এম মণ গেওয়া গাছের দাম ১০০ টাকা।

বনকর্মী মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরী সুন্দরবনের প্রধান গাছ হলেও এ বনকে সুন্দর করে তুলেছে গেওয়া, কেওড়া, গরান, সিংড়া, আমুর, ধুন্দুল, গোলপাতা, পশুর, বাইন, কাকড়াসহ অসংখ্য গাছ।

তিনি জানান, গেওয়া গাছের দুই বার পাতা ঝরে। একবার এপ্রিল- মে মাসে। আর একবার সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে। জুন জুলাই মাসে গেওয়া ফুল ফুটে। তখন অসংখ্য মৌমাছি গেওয়া ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। গেওয়া ফুল হতে সংগ্রহকৃত মধুকে গেওয়া মধু বলে। গেওয়া ফল আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পাকে। গাছে ফল থাকতেই অংকুরিত হয়। নদীর স্রোতে বনের এক স্থান হতে অন্য স্থানে বীজ ছড়ায়ে গেওয়া বন সৃষ্টি হয়। নিউজপ্রিন্ট তৈরি ও ম্যাচ তৈরিতে গেওয়া গাছ ব্যবহৃত হয়।
সুন্দরবনের গেওয়ার ঘন বন- ছবি: আবু বকর
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে সাতক্ষীরা রেঞ্জে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এ অংশে গেওয়া বন বেশি। কোথাও একক ভাবে আবার কোথাও মিশ্রভাবে গড়ে উঠেছে গেওয়া বন। ভ্রমনের সময় নদীর পাড়ের গেওয়ার অপুর্ব সমারোহে নয়ন জুড়িয়ে যাচ্ছে। যা মূলত জ্বালানি ও বাড়ির বেড়া হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া গেওয়া গাছ ঢোল ও তবলার খোল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, বনের গেওয়া গাছের কারণে তাদের জ্বালানি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। গেওয়া গাছ কেটে রোদে শুকিয়ে নিলেই তা দিয়ে রান্না করা যায়। গেওয়া গাছের কস বা রস অতি বিষাক্ত। গায়ে বা চোখে পড়লে ভীষন কষ্ট হয়। শরীরের যেখানে লাগে সেখানে ঘষতে ঘষতে ব্যথা হয়। অনেক সময় ঘা হয়ে যায়।

তারা আরও জানান, গেওয়া ফল নদীতে ভেসে গিয়ে বনের আশে পাশের গ্রামে চলে যায়। তাই সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামের পথে ঘাটেও এ গাছ দেখা যায়।

আরও পড়ুন...
** সড়কই সাতক্ষীরার সুন্দরবনের পর্যটনে বাধা
** ভালো সড়কে পর্যটক টানছে বাগেরহাট
** মুড়ি ভাজার শব্দে ঘুম ভাঙে! (ভিডিও)
** নারকেল-সুপারির বাগানে ভরপুর বাগেরহাট

সহযোগিতায়বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এমআরএম/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ