ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

নীলাচলে বিকৃত মস্তিকের আঁচড়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
নীলাচলে বিকৃত মস্তিকের আঁচড় ছবি- জনি সাহা- বাংলানিউজটোয়েটিন্টফোর

নীলাচল (বান্দরবান) থেকে ফিরে: পায়ের নীচে হাজার ফুট গভীর খাদ, তাকালে আত্মা খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম। পা ফসকে পড়ে গেলে তো জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা জিরো।

তারওপর নীচটা জঙ্গলাকীর্ণ হওয়ায় লাশ খুঁজে পাওয়াও কষ্টকর হবে।  
 
বলছিলাম পাহাড়ের গায়ে ঝুলন্ত নীলাচলের পূর্ব-দক্ষিণ কোনের ভিউ পয়েন্টের কথা। উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয় এখানে। এর যেমন ভয়ঙ্কর দিক রয়েছে, তেমনি অসম্ভব সুন্দর রূপও রয়েছে।  
 
এখানে দাড়াঁলে দেখতে পাবেন শতশত ছোট বড় পাহাড়। দূরে পাহাড়িদের বসতী, তার উপর মেঘের ভেলা। শীতল বাতাসে ভেসে মেঘ এসে ছুঁয়ে দেবে শরীর, শীতল পরশে জুড়িয়ে দিয়ে যাবে শরীর, প্রাণ। যে ‍কারণে নীলাচলে গেলে যে কেউ ক্ষণিকের জন্য হলেও এই ভিউ পয়েণ্টে দাঁড়িয়ে পড়েন।  
 
অসম্ভব সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে কেউ যাতে জমের ভোগে না পড়েন, সে জন্য রয়েছে বুক সমান উ‍ঁচু কংক্রিটের রেলিং। অনেকে ভয়ঙ্কর দিক বিবেচনা না করেই রেলিংয়ে উঠে পড়েন। সে কারণে জেলা প্রশাসন সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।  
 
প্রমাণ সাইজের এসএস প্লেটে খোদাই করে লেখা হয়েছে, ‘রেলিংয়ের উপর না বসার জন্য ধন্যবাদ’। সচেতনতামূলক এই সাইনটি শেকল দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে রেলিংয়ে। কিন্তু কোন বিকৃত রুচির দর্শনার্থী সাইনটির ‘না’ এর কালো রং খুটে খুটে তুলে ফেলেছেন।  
 
এখন শুধু না’র ফ্রেম পড়ে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, ‘রেলিংয়ের উপর বাসার জন্য ধন্যবাদ’ লেখা রয়েছে সেখানে। খুব সহজে না উঠে যাওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই অনেক কসরত পোহাতে হয়েছে এই বিকৃত মস্তিকের দর্শনার্থীকে। এখানেই শেষ নয়।
 
এর কয়েক ফুট দূরে লাবনী পয়েন্ট। এই পয়েন্টটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম। শ্বেত পাথরে খোদাই করে বসানো হয়েছে নাম ফলক।  
 
এখানে লাবনীর ‘ব’কে কলমের খোঁচা দিয়ে ‘র’ বানানো হয়েছে। আর নীলাচলের ‘নী’কে ‘বী’ বানিয়ে বীলাচল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বান্দরবানকে বানানো হয়েছে বান্দুরবোন।  আর শুভ উদ্বোধন করেন এর পরে কলম দিয়ে ‘আমজাদ’ লেখা হয়েছে।
 
লেখাগুলোকে বিকৃত করে কি লাভ তাদের- এ প্রসঙ্গে উঠতেই সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বলে ওঠেন, এদের চৌদ্দ পুরুষ ...জাদা। না হলে এমন করে কেউ বিকৃত করতে পারে না।
 
তার ভাষায় চৌদ্দ পুরুষ ....জাদা অর্থ হচ্ছে তার দাদা, তার দাদা, তার দাদা এভাবে চৌদ্দ পুরুষ অর্থাৎ ৮ থেকে ৯’শ বছর ধরে বংশপরম্পরে এরা ...জাদা। এরা পরিবার থেকে কিছু শিক্ষা পায়নি।
 
আবুল কালাম আজাদ মনে করেন, এগুলো রোধ করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যার সামনে এমন অপকর্ম হবে তাকেই প্রতিবাদী হতে হবে। না হলে প্রশাসনের পক্ষে এই বিকৃত রুচির মানুষদের ঠেকানো সম্ভব  হবে না।
 
এতো গেলো লেখা বিকৃত করা। পাশেই ময়লা রাখার ঝুড়ি। কিন্তু সেখানে ময়লা না ফেলে পানির খালি বোতল, চিপসের প্যাকেট নিচে ফেলা হয়েছে। আর এসব  ময়লা আবর্জনা বিদঘুটে পরিবেশ তৈরি করছে।
 
বান্দরবানের নেজারত ডেপুটি কালেকটর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বাংলানিউজকে জানান, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য। প্রশাসনের একার পক্ষে কাজটি করা কঠিন।  
 
শুধু নীলাচল নয়, বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, খাগড়াছড়ির হাজাছড়া, আলুটিলার গুহা, বান্দরবানের কাপ্তাই লেক, সিলেটের বিছনাকান্দি, জাফলং, রাতারগুল ও বাইক্কার বিল ঘুরে একই অবস্থা চোখে পড়েছে।
 
বাইক্কার বিলে দর্শনার্থীরা পানির খালি বোতল, বিরিয়ানির প্লাস্টিক আর চিপসের পলিথিন প্যাকেট পানিতে ফেলে দিয়ে গেছেন। আর এগুলো সারা বিলে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বচ্ছ পানির এই বিশাল জলাশয় হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এখনই এই প্রবণতা রোধ করা না গেলে  এক সময় নির্মল বাতাস পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ