ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হালতি বিল থেকে আসিফ ও শুভ্রনীল

ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ) ছবি: শুভ্রনীল সাগর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হালতি বিল (নাটোর) থেকে: ‘ভাই নাইমতে পারবিন তো?’
 
ছোটখাটো কুনি বা দহ। সেচ দিয়ে পানি চার ভাগের তিন ভাগ কমানো।

ফলে পুরো কাদাসহ ঢাল শ্যালো ইঞ্জিনের পাশে গিয়ে থেমেছে। গন্তব্য সেখানেই। এখানে বসানো হয়েছে মাছ ধরার বিশেষ ‘ফাঁদ’। কিন্তু একটু এদিক-ওদিক হলেই, সোজা পানিতে!

শহরের ‘পাম্প সু’ পরা বাবু, তাই বোধহয় ঠিক ভরসা হচ্ছিলো না অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মুকতারের। আমরাও যে গ্রাম-মফস্বল থেকে কাদা ঠেলে উঠে আসা, তা আর তাকে কে বোঝাবে। তবু তার সতর্ক নির্দেশনায় পৌঁছে গেলাম জায়গা মতো।

নাটোর সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটারের পথ খোলবাড়িয়া। ইউনিয়ন পিপরুল আর থানা নলডাঙ্গা। যাওয়া যাবে ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত ভ্যানে চেপে।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) খোলবাড়িয়া বাজারে যখন নামি, তখন সূর্য ডুবি ডুবি। নামতেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। ‘ছবির মতো সুন্দর’ কথাটি এখানে দায়িত্ব নিয়ে লেখা যায়।

তিনটি রাস্তা গেছে তিন দিকে। যতোদূর যেখানে  গেছে ততোদূর সঙ্গে সবুজের ডালি। দৃষ্টিসীমার দূরত্বে এখানে-ওখানে কিছু বাড়ি, সামনে খড়ের গাদা। পুকুরে নৌকো বাঁধা, খেলছে হাঁসের দল। মানে সে এক… থাক, সে গল্প আরেক দিন।

বাজারের পিছন দিকটায় স্কুল মাঠ। মাঠ যেখানে শেষ, ঠিক তার পাশে চলছে মাছ ধরার কর্মযজ্ঞ। কতোদিন এ দৃশ্য দেখিনি! অমনি ছুট। গিয়ে জানা গেলো, বড় মাছ ধরা শেষ। এখন চলছে ছোটমাছের পালা। তাই সই।

কাছে গিয়ে বুঝলাম, বিশেষ এক পন্থায় চলছে মাছধরা। সেচ দিয়ে ডোবার পানি বাইরে ফেলা তো হচ্ছেই, সেই পানি আবার রিভার্স করে নালা বানিয়ে কৃত্রিম স্রোত তৈরি করে আবার পানিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, যাতে পুঁটি, খলসে, কইয়ের মতো উজসী মাছেরা উজান বেয়ে ঠিক জালের কাছে ধরা দেয়। স্রোতের ঠিক পাশে একটু নিচে করে ঝুড়ি পাতা। পানির তোড়ে মাছগুলো সোজা ঝুড়িতে আর ঝুড়ি তুললেই পুঁটি আর পুঁটি।

শুধুই কি তাই, ঝুড়িতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পুঁটিদের লম্ফ-ঝম্প। স্রোত আটকানো বেড়ার ঠিক পাশে ছোট গর্ত। গর্তভর্তি ঘোলা পানি। ঝুড়ি থাকে অনেকটা ডোবানো। সেখানে ক্রমশ মাছ ঢুকতে থাকে আর  পাশাপাশি চলতে তাকে ওই গর্তের সেচ। একসময় মাছ ভরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে পানিও। তখন মনে হয়, ঝুড়ি ভর্তি রুপার মোহরে রোদ পড়ে চকচক করছে।   
 
মাছশিকারি ফয়সাল জানালেন, দু’দিন ধরেই চলছে মাছধরা। এজন্য অস্থায়ী ‘বাড়ি’ও বানিয়েছেন ডোবার পাশে।
 
ঝুড়ি ভর্তি হতেই ছোটভাই মুকতার রেখে আসছে অন্য কুনিতে জাল দিয়ে ঘেরা পানিতে। এভাবেই থাকবে মঙ্গলবার সকাল অব্দি। এরপর পার্শ্ববর্তী মাদনগর বাজারে সেগুলো তোলা হবে। বিক্রি হবে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

এর আগেও ঝুড়ি ভরেছে বাইন, শোল আর চ্যাং মাছে। শিং-টেংরাও যায়নি। তারাও বাজার ঘুরে পাতে ওঠার অপেক্ষায়।

অঞ্চলটি মূলত চলনবিলের একাংশ। এদিকের অংশটির নাম হালতি। খোলবাড়িয়া পড়েছে একেবারে মধ্যবর্তী জায়গায়। হালতির সীমানা নির্ধারণ করলে পুবে মোহনপুর, পশ্চিমে মাদনগর স্টেশন, উত্তরে খাজুরাহ আর দক্ষিণে পড়েছে পাটুল।

এখন শুকনো মৌসুমে যা কিছু সামনে পড়ছে, বরষায় সেসব চলে যায় পানির নিচে। শুধু উঁচু করে বানানো বাড়ি আর গাছগুলো বকের মতো গলা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। সাধারণত জুন-জুলাই থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বিল স্বরূপে দেখা দেয়। বাকি ছয় মাস ঠিক তার উল্টো। তবে  ছোট-বড় ডোবাগুলোতে আটকে থাকা পানি শুকিয়ে এলে নিত্যদিন মেলে মাছ ধরার উৎসব।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
এসএস/এএ/জেডএম

** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** পর্যটন বর্ষে ব্যাপক আয়োজন: ৩০ শতাংশ ছাড়
** আহসান মঞ্জিলে নতুন রঙ, অন্দরমহলে গ্যালারি হচ্ছে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ