ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

বোস্তামীর কচ্ছপ সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২১
বোস্তামীর কচ্ছপ সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন

আগরতলা: বোস্তামীর কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রায় বিপন্ন এ প্রজাতির কচ্ছপটি।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০২ সালে বোস্তামী কচ্ছপকে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছে।  

এদের ইংরেজিতে ব্ল্যাক সফট শেল টার্টেল বলা হয়ে থাকে। আর বৈজ্ঞানিক নাম নিলসোনিয়া নিগ্রিকান। এদের কালো নরম খোলের কচ্ছপও বলা হয়।  

ওয়াইল্ড ত্রিপুরা ফাউন্ডেশনের সহ-সম্পাদক এবং হারফিটফনা কনজারভেশন রিসার্চ ডিভিশনে প্রধান চিরঞ্জীব দেবনাথ বাংলানিউজকে জানান, এই প্রজাতির কচ্ছপ ভারতের ত্রিপুরা এবং অসম রাজ্যের কয়েকটি ধর্মীয় স্থানের জলাশয়ে পাওয়া যায়। পাশাপাশি বাংলাদেশেও কিছু স্থানে এ কচ্ছপ পাওয়া যায়।

তিনি জানান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জলাশয়ের কারণে এগুলোর অস্তিত্ব এখনো আছে। তা না হলে এত দিনে এগুলো হারিয়ে যেতো। ত্রিপুরার গোমতী জেলার উদয়পুরের ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের পাশের কল্যাণ সাগর দিঘিতে এগুলো রয়েছে। রাজন্য আমলে যখন এই মন্দির স্থাপন ও দিঘি খনন করা হয় এরপর ধর্মপ্রাণ মানুষ এই কচ্ছপ গুলো দিঘিতে ছেড়ে ছিল। তারপর এদের বংশ বাগতে থাকে। ১৯৯০ দশকে এই দিঘির সুন্দর্য বর্ধনে দিঘির পাড় সিমেন্ট দিয়ে বাধাই করলে এদের প্রজননে সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে সব ধরনের কচ্ছপ পানিতে থাকলেও এরা ডিম পাড়ে ডাঙ্গায়, বিশেষ করে বালি যুক্ত মাটিতে গর্ত করে এরা ডিম পাড়ে। এসব ডিম কচ্ছপ বালি দিয়ে ঢেকে দিয়ে পানিতে চলে যায়। পরবর্তী সময় ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে এরা নিজেরাই পানিতে চলে যায়। এভাবে চলে তাদের জীবনচক্র। কিন্তু দিঘির পাড় পাকা করে দেওয়ায় এরা ডিম পাড়তে পারেনি। ফলে বংশ বাড়াতে না পারায় এবং প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে মারা যাওয়ায় কচ্ছপের সংখ্যাও কমে আসে। এমনও হয়েছে বহু কচ্ছপ পেটে ডিম নিয়েই মারা গেছে। একটা সময় এসব কচ্ছপের সংখ্যা কমতে থাকলে বিষয়টি বন মন্দির কমিটির নজরে আসে। কমিটি বিষয়টি নিয়ে বন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

তিনি আরও বলেন, বন দপ্তরের পরামর্শক্রমে ২০১৫ সালে দিঘির দুই দিকের পাড় ভেঙে দেওয়া হয়। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো ব্যবস্থা করা হয়। এরপর আবার দিঘির পাড়ে কচ্ছপ ডিম পাড়া শুরু করে। এরপর কচ্ছপের বাচ্চার জন্ম হলেও এখনো আগের মতো সেখানে কচ্ছপ নেই। এর দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো আগে যে সংখ্যাক কচ্ছপ ছিল তা অনেকটাই কমেছে এবং ডিমও আগের মতো পাড়ছে না। আর দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো দিঘিতে গজার মাছ থাকায় কচ্ছপের বাচ্চা ধরে খেয়ে ফেলায় এদের সংখ্যাও বাড়ছে না। যদিও প্রথম থেকেই দিঘিতে গজারসহ অন্যান্য ধরনের মাছ রয়েছে। কিন্তু আগে কচ্ছপ প্রতি বছর এত বেশি সংখ্যায় ডিম পাড়তো মাছের পেটে যাওয়ার পরও নতুন বাচ্চা কচ্ছপ বড় হতো। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না ফলে কচ্ছপের সংখ্যা কমে আসছে।  

তবে কি কল্যাণ সাগরে অতিবিরল প্রজাতির বোস্তামীর কচ্ছপের সংখ্যা বাড়ানোর কোনো উপায় নেই এমন এক প্রশ্নের জবাবে চিরঞ্জীব দেবনাথ জানান, উপায় আছে কিন্তু যেহেতু কল্যাণ সাগর দিঘির মাছ ও কচ্ছপের সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত রয়েছে তাই এখানে বিকল্প কিছু প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। চাইলে কচ্ছপের বাচ্চার জন্মের পর দিঘিতে জাল ফেলে মাছ থেকে বাচ্চা কচ্ছপগুলোকে আলাদা রেখে বড় করা যেতে পারে। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগের জন্য তা করা যাচ্ছে না।

ত্রিপুরা রাজ্যের আর কোথাও কি প্রাকৃতিক পরিবেশে এ ধরনের কচ্ছপ পাওয়া যায় না এমন প্রশ্নের উত্তরে চিরঞ্জীব জানান, বাংলাদেশের মতো ত্রিপুরা রাজ্যও নদীমাতৃক। নদীসহ অন্যান্য পানির স্রোতের মাধ্যমে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাই অনেক সময় এই স্রোত ধরে মাছসহ কচ্ছপও ত্রিপুরায় আসে।

রাজ্যের কল্যাণ সাগর দিঘি ছাড়া অন্য কোথাও এখনো বোস্তামীর কচ্ছপের প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়নি। তবে বিশ্বের বিরল প্রজাতির তালিকায় থাকা বোস্তামীর কচ্ছপ বাঁচাতে এবং সংখ্যা বাড়াতে খুব দ্রুত সরকারি উদ্যোগে রাজ্যে একটি প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। যদি তা করা যায় তবে বিশ্বের বিপন্ন প্রজাতিকে বাঁচাতে ত্রিপুরা নজির সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২১
এসসিএন/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।