ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

আগরতলা

ত্রিপুরায় বাঁশ-প্লাস্টিকের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে পণ্য

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
ত্রিপুরায় বাঁশ-প্লাস্টিকের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে পণ্য ...

আগরতলা (ত্রিপুরা): বাঁশের ফেলে দেওয়া অংশ এবং বর্জ্য প্লাস্টিকের সংমিশ্রণে পণ্য তৈরির নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে আগরতলায়।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নানা কাজে প্লাস্টিক ব্যবহার করে থাকি।

এর মধ্যে অনেকটাই থাকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক।

আগরতলা পুর নিগম এলাকায় গড়ে প্রতিদিন ১৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে একবার ব্যবহার করা হাল্কা প্লাস্টিক। পৃথিবীতে উৎপাদিত প্লাস্টিকের বেশিরভাগের শেষ গন্তব্য সমুদ্র। তবে পাহাড় নদী-নালা, খাল-বিল সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত সারাবিশ্বের গবেষকরা, কি করে সিঙ্গেল প্লাস্টিককে রিসাইকেল করে কাজে লাগানো যায়। এই কাজে পিছিয়ে নেই ভারতীয় গবেষকরাও। ভারত সরকারের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ পেট্রো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংস এন্ড টেকনোলজির আগরতলা সেন্টারের ইঞ্জিনিয়াররা ফেলে দেওয়া সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিককে রিসাইকেল করে কাজে লাগানোর একটি অভিনব পদ্ধতি খুঁজে বের করেছেন।  

ভারত সরকারের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ পেট্রো কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংস এন্ড টেকনোলজির আগরতলা সেন্টারের ম্যানেজার পি বিজয় কুমার বলেন, এই পদ্ধতিতে ফেলে দেওয়া বাঁশ কাজে লাগানো যাবে এবং ত্রিপুরা রাজ্যে আর্থিক উন্নতি হবে।

এই প্রতিষ্ঠানের এক ইঞ্জিনিয়ার গোপাল ছেত্রী তাদের ল্যাবে নিয়ে গিয়ে দেখান পুরো বিষয়টি। তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক বর্জ্য তারা প্রথমে ক্রাশার মেশিন ক্রাশ করে পাউডার তৈরি করেন, একই ভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত বাঁশের ফেলে দেওয়া অংশও ক্রাশ করে পাউডার তৈরি করা হয়। তারপর এগুলিকে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। সবশেষে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ছাঁচে ফেলে প্লেট, বাটি ইত্যাদি তৈরি করা হয়ে থাক।

তিনি আরো জানান, এগুলো দিয়ে টাইলসসহ নিত্য প্রয়োজনীয় আরো অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। ইতোমধ্যে তারা পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু বাটি এবং প্লেট তৈরি করেছেন। তবে নতুন এই মিশ্রিত বস্তু দিয়ে তৈরি সামগ্রী স্থায়িত্ব প্লাস্টিকের তুলনায় অনেক বেশি বললেও জানিয়েছেন তিনি। কোনো সংস্থা আগ্রহী থাকলে তাদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তারা বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করবেন।

তাদের এই কাজে সহায়তা করেছেন ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের কর্মী এবং ব্যাম্বো সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার আজীবন সদস্য সমীর জমাতিয়া। মূলত তিনি প্রথম বাঁশের এই অবশিষ্ট অংশগুলিকে কি করে কাজে লাগানো যায় এই বিষয়টি নিয়ে সব সময় চিন্তা ভাবনা করেন। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই প্লাস্টিকের সঙ্গে বাঁশ মিশিয়ে পণ্য সামগ্রী তৈরি করার পরিকল্পনা এসেছে।

তিনি জানান ত্রিপুরা রাজ্যে বর্তমানে বাঁশ ভিত্তিক অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আগরবাতির শলা তৈরির কারখানা, বাঁশ দিয়ে টাইলস তৈরির কারখানা ইত্যাদি। তাছাড়া বর্তমান সরকার শিল্পমুখী নীতি গ্রহণ করায় আরো নতুন নতুন শিল্প ত্রিপুরা রাজ্যে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম আগরবাতি তৈরির শলা। আগরবাতি তৈরির শলা শিল্প একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের টুকরো কেটে নেওয়া হয় তাই গিটসহ বাঁশে প্রায় ৯০শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এগুলি পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া আপাতত আর কোনো কাজে লাগে না। পুড়িয়ে ফেললে প্রচুর পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়। যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এদিক থেকে বাঁশ এবং প্লাস্টিক মিশিয়ে সামগ্রী তৈরি করলে একদিকে যেমন অবশিষ্ট অংশ গুলো কাজে লাগবে এতে করে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে পাশাপাশি রাজ্যের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে আর্থিক ভাবে লাভ হবে।

প্লাস্টিক দূষণ রোধের জন্য ত্রিপুরার বর্তমান সরকারও কাজ করে যাচ্ছে। তাই এবছর আগরতলা একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে বিটুমিনের সঙ্গে বর্জ্য প্লাস্টিক মিশিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
এসসিএন/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।