ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আগরতলা

টেস্ট টিউবে আলু-কলার চারা উৎপাদন

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২১
টেস্ট টিউবে আলু-কলার চারা উৎপাদন কৃষি কর্মকর্তা ঝর্ণা দত্ত

আগরতলা, (ত্রিপুরা): ‘কেউ যদি বলে যে ল্যাবরোটারিতে ব্যবহৃত একটি টেস্ট টিউবের ভেতরে রাখা আলুর কয়েক মিলিমিটারের একটি টুকরো দিয়ে আস্ত একটি আলু গাছ তৈরি করা সম্ভব বা ছোট একটি জারের মধ্যে রয়েছে কয়েকশ কলাগাছ’।  

এ কথাগুলো বললে অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য গল্প বলে মনে হলেও ত্রিপুরার সরকারের উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিস্যু কালচার ল্যাবের গবেষকরা এমন অসাধ্য কাজ করে চলছেন প্রতিনিয়ত।

ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী নাগিছড়া এলাকায় রয়েছে উদ্যান গবেষণাকেন্দ্র। এটি ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অন্তর্গত উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালিত হয়।  

এ গবেষণাকেন্দ্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি অত্যাধুনিক টিস্যু কালচার ল্যাব। এ ল্যাবে গবেষণা করে উন্নত প্রজাতির এবং মান সম্পন্ন ট্রু পটেটো সিড (টিপিএস) উৎপাদনের জন্য পিতৃ-মাতৃ গাছের চারা উৎপাদন করা হয়। সেসঙ্গে কলাগাছে উন্নত প্রজাতির ও রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করা হয়।  

এই ল্যাবের দায়িত্বে রয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা ঝর্ণা দত্ত।  তিনি বাংলানিউজকে জানান, ল্যাবের প্রতিটি কাজ গুণগতমান বজায় রেখে এমন নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে করা হয়। সামান্য কোনো ত্রুটি থাকলে গোটা প্রক্রিয়াটাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ল্যাবে প্রবেশ করার আগে প্রত্যেকের হাত-পা ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে প্রবেশ করতে হয়। সেসঙ্গে আলু ও কলার টিস্যুগুলো যেসব টিউবের ভেতরে রেখে চার উৎপাদন করা হয়। এগুলোকে প্রথমে ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া হয়। এর পরবর্তী ধাপে বিশাল বিশাল আকারের অটোক্ল্যাপ মেশিন ও ড্রায়ার মেশিনের মাধ্যমে পানি শুকিয়ে নেওয়া হয়। এ ল্যাবে যা কাজ হয় তার সবটাই ডিস্টিল ওয়াটার দিয়ে করা হয়। তাই ল্যাবের ভেতরে রয়েছে ডিস্টিল ওয়াটার তৈরির একটি ইউনিট। তাছাড়া পানির অম্লত্ব মাপার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক পিএইচ মিটার। এরপরের ধাপে আলট্রা ভায়োলেট আলোর মাধ্যমে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা হয়। সেসঙ্গে হেপা ফিল্টারের মাধ্যমে ছোট থেকে ছোট ধূলিকণাকেও আটকে দেয়। পরবর্তী ল্যাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত আলোতে কয়েক হাজার কাচের জার এবং টিউবের মধ্যে টিস্যু রাখা হয়েছে। যেগুলো স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে। এই টিস্যুগুলো থেকে নিয়ন্ত্রিত আলো ও আবহাওয়ায় গাছের জন্ম নেয়। যা পরবর্তীতে মাঠে বা জমিতে লাগানো হয়।  

কৃষি কর্মকর্তা ঝর্ণা দত্ত জানান, ট্রু পটেটো সিড তথা টিপিএস আলুর দানা বীজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত নাগিছড়ার এ উদ্যান গবেষণাকেন্দ্রটি। এই টিপি আলু বীজ উৎপাদন করার জন্য যেসব মাতৃ-পিতৃ গাছের প্রয়োজন হয়, এই গাছগুলোর চারা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদন ও পরিচর্যা করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে চারা উৎপাদন করা ও সারাবছর এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় ল্যাবে। এরপর ডিসেম্বরে এই চারাগুলোকে জমিতে লাগানো হয় বীজ উৎপাদন করার জন্য। পাশাপাশি কলা গাছেরও চারা উৎপাদন করা হয়। সবরি কলার চাহিদা ত্রিপুরা রাজ্যে খুব বেশি তাই এই ল্যাবে এর চারা উৎপাদনও করা হয়। সেসঙ্গে জি নাইন বলে একটি প্রজাতির কলা রয়েছে যা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে খুব জনপ্রিয়, এই কলাকে ত্রিপুরাবাসীর মধ্যে জনপ্রিয় করে তোলার কাজ চলছে।  

এই ল্যাব থেকে গত মৌসুমে ২২ হাজার টিপিএস আলুর চারা উৎপাদন করা হয় এবং এ চারাগুলো উদ্যান বিভাগ তাদের নিজেদের জমিতে লাগিয়ে দানা বীজ উৎপাদন করে ও বিক্রি করে। কলার চারা বছরে সর্বোচ্চ ৫ হাজার পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আলু ও কলা চারা থেকেই উৎপাদন করা সম্ভব কিনা? ল্যাবের প্রয়োজন কি? এর উত্তর একটি আলু থেকে বা কলা গাছের কন্দ থেকে সাধারণ পদ্ধতিতে একটি গাছের জন্ম হয় সেখানে টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে একটি আলু বা কলার কন্দ থেকে কয়েকশ চারা উৎপাদন করা সম্ভব। ল্যাবে উৎপাদিত চারাগুলো সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। তাই এগুলো থেকে ভালো মানের ফলন নিশ্চিত। আর টিপিএস দান বীজের ৫০ গ্রাম দিয়ে এক হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা সম্ভব।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২১
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।