ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আগরতলা

এলইডি বাল্বের কারখানা করে নজর কাড়লেন ত্রিপুরার যুবক

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২০
এলইডি বাল্বের কারখানা করে নজর কাড়লেন ত্রিপুরার যুবক

আগরতলা (ত্রিপুরা): এলইডি বাল্বের কারখানা গড়ে কর্মসংস্থানের নতুন দিশা দেখাচ্ছেন ত্রিপুরার এক যুবক। রাজ্যের রাজধানী আগরতলার উত্তর-পূর্ব দিকে এবং ১৯৫ কিমি দূরে উত্তর জেলার সদর ধর্মনগর শহর।

এই শহরের পাশের একটি গ্রামের নাম শাখাইবাড়ী। গ্রামের উদ্যমী যুবক শুভাশিস ভট্টাচার্য্য নিজ বাড়িতে রাজ্যের প্রথম এলইডি বাল্বের অ্যাসেম্বলিং কারখানা স্থাপন করেছেন এবং সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এমন নয়, দেখিয়ে দিয়েছেন যে উদ্যম ও ইচ্ছা থাকলে নতুন কিছু করা অসম্ভব কিছু নয়।

উত্তর-পূর্ব ভারতে তেমন কোনো কারখানা নেই। এর প্রধান কারণ ভৌগলিক অবস্থান। এই অবস্থায় ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর কারখানা স্থাপন করার কথা কেউ ভাবতেই পারেন না। এই অবস্থায় কী করে এলইডি অ্যাসেম্বলিং কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা মাথায় এলো? বাংলানিউজের তরফে শুভাশিস ভট্টাচার্যকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ইন্টারনেটে তিনি এমন কারখানার বিষয়টি দেখেন। বিষয়টি দেখে তার ভালো লাগে। কিন্তু ত্রিপুরার মতো রাজ্যে এমন একটি কারখানা স্থাপন যে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত তা জেনেও সম্পূর্ণ ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে কাজ শুরু করে দেন। কারখানার মেশিনের জন্য তার প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন হয়েছে দেড় লাখ রুপি। এর পর ঘর নির্মাণ ও বাল্ব তৈরির সামগ্রীর জন্য ধাপে ধাপে আরও খরচ হয়েছে।  

তিনি জানান, এই কারখানা করার জন্য আলাদা করে কোনো প্রশিক্ষন নেননি। কলেজ থেকে ডিগ্রি কোর্স সম্পন্ন করার পর ইলেক্ট্রনিক্সের উপর একটি ট্রেনিং নিয়েছেন।
তার কারখানার উৎপাদিত এলইডি বাল্বের চাহিদা কেমন? উত্তরে বলেন, চাহিদা ভালো রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তার কারখানার বাল্ব সরবরাহ করো হয়। পাশাপাশি আসাম রাজ্যের অনেক জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এই বাল্ব কিনে নিচ্ছেন। তিনিসহ আরও তিন জন কারখানায় কাজ করছেন। সব মিলিয়ে মাসে ৫০০০ পিস এলইডি বাল্ব উৎপাদিত হচ্ছে।  

‘প্রথমে মানুষের মধ্যে এই এলইডি নিয়ে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও এখন তা কেটে গেছে। কারণ ভিন্ন রাজ্য থেকে আমদানি করা নামিদামি সংস্থার এলইডি বাল্বে বিক্রির পর যে ধরনের পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে আমিও সেই পরিষেবা দিচ্ছি। বড় সংস্থাগুলোর এলইডি বাল্বের মতোই আমার কারখানায় তৈরি বাল্বের গুণমান। ফলে দিন দিন কারখানায় তৈরি বাল্বের চাহিদা বাড়ছে।

এলইডি বাল্ব তৈরির সামগ্রীগুলো তিনি দিল্লি থেকে আমদানি করছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লাভ থাকে। সরকারের এখন নানা আর্থিক প্রকল্প রয়েছে বেকারদের স্বাবলম্বী করার জন্য, এসব প্রকল্প থেকে কোনো সহায়তা নেননি এ যুবক।

কারখানা নিয়ে তার পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে উত্তরে শুভাশিস জানান, আরও দ্রুত গতিতে ও দৈনিক বেশি সংখ্যায় বাল্ব তৈরির মেশিন স্থাপনের ইচ্ছা রয়েছে। এমন একটি মেশিন কিনতে হলে হলে ন্যূনতম ১৬ লাখ রুপির প্রয়োজন। এটা স্থাপন ও পণ্য কেনার খরচ আলাদা। এই অবস্থায় সরকারি সহায়তা পেলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব হতো।

বেকার যুবক যুবতীদের প্রতি তার বার্তা কি? এই বিষয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে বেশিরভাগ সামগ্রী অন্য রাজ্য থেকে আমদানি করতে হয়। একজন বেকার যদি উদ্যোগী হয় এবং গভীর মনোযোগের সঙ্গে এসব কারখানা স্থাপন করেন তবে তারা নিজে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। সেইসঙ্গে আরও তিন চার জন যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবেন। এই অবস্থায় সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরাই যদি কোনো কিছু করার চেষ্টা করেন তবে অনেক আগে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২০
এসসিএন/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।