ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

হুমকির মুখে প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র পিলাকের টেরাকোটা

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
হুমকির মুখে প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র পিলাকের টেরাকোটা

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে পিলাক। আগরতলা থেকে প্রায় ১০৩ কিমি দূরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পিলাক অবস্থিত।

 

প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পিলাক'র অবস্থান। স্থানীয় এলাকাবাসীদের বক্তব্য অনুসারে, এই এলাকাজুড়ে মাটির তলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন যুগের নানান মূর্তি। মাটি খোঁড়ার সময় এসকল মূর্তিগুলি পাওয়া গিয়েছিল। এখনো কোথাও কোথাও মাটি খুড়লে মূর্তির টুকরো ও ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় বলে বাংলানিউজকে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রাচীন সংস্কৃতি এবং ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু জানার জন্য পিলাক একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বর্তমানে এই স্থানটি ভারত সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা বিভাগের মিজোরাম আঞ্চলিক অফিসের অধীনে রয়েছে (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া)।  

প্রাচীন আমলের মূর্তিগুলো এবং স্থাপত্য মূলত তিনটি আলাদা আলাদা জায়গায় সংরক্ষিত করে রাখা আছে। এই তিনটি জায়গা শ্যামসুন্দর আশ্রম টিলা, দেববাড়ী এবং ঠাকুরানী টিলা।

এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হওয়ার পরও পিলাক চরম অবহেলার মধ্যে যে পড়ে আছে তা যেকোন পর্যটকের নজরে আসে। আগরতলা থেকে সাব্রুম গামী ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে আলাদা হয়ে প্রায় ৩ কিমি দূরে সর্বশেষ দর্শনীয় স্থানটি হল ঠাকুরানী টিলা। জাতীয় সড়কের যে জায়গা থেকে পিলাকে যাওয়ার রাস্তা শুরু হয়েছে সেখানে দর্শনীয় স্থানটির তথ্য ও গুরুত্ব সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণে সাইনবোর্ড জঙ্গলে ঢাকা পড়ে আছে। খুব ভালো করে লক্ষ্য না করলে পর্যটকদের কাছে এটা বোঝাই কষ্টকর হয়ে যায়।

একইভাবে পিলাক’র তিনটি দর্শনীয় স্থান চরম অবহেলায় পড়ে আছে। তিনটি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি হল শ্যামসুন্দর আশ্রম টিলা। এখানে বিশালাকৃতির পুরাতন দুটি মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি ছোট মূর্তি। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্যের কিছু অংশ। স্থাপত্যের গায়ে চারিদিকে সুন্দর করে সাজানো অবস্থায় লাগানো রয়েছে টেরাকোটার কাজ। এগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে নৃত্যরত নারী, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে দাঁড়ানো নারী পুরুষ, বাদ্যযন্ত্র বাজানো অবস্থায় পুরুষ, হাতি, ঘোড়া, মাছসহ নানা ধরনের প্রাণী।

 

কিছু কিছু স্থাপত্যের জায়গা থেকে এই টেরাকোটার কাজগুলি চুরি হয়ে গেছে তা দেখেই বোঝা যায়। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীদের বক্তব্য, এগুলি কবে চুরি হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কিনা তা তারা বলতে পারেন না। তবে এখনো যে চুরি সম্ভাবনা রয়েছে তা এখানে কর্মরত একজন কর্মচারীর কথা থেকেই বোঝা যায়।  

প্রশান্ত বিশ্বাস নামে এক কর্মচারী জানান, শ্যামসুন্দর আশ্রম টিলা পর্যটনস্থলে রয়েছেন মোট তিন জন। এদের মধ্যে একজন মহিলা যার কাজ হচ্ছে পর্যটকদের জন্য বানানো শৌচালয় পরিষ্কার করা এবং তিনিসহ আরো একজন পুরুষ কর্মচারী রয়েছেন। তারা দুইজনের কাজ হচ্ছে গোটা পর্যটন স্থলটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। তারা সকলেই ঠিকা কর্মচারী বলেও জানান তিনি। তাই রাতের আধারে দুর্মূল্য ও অতি প্রাচীন এই টেরাকোটার কাজগুলি চুরি করে নিয়ে যেতে পারে পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী চুরির সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক চোরাচালানকারীরা।  

ইতোমধ্যে এই স্থান থেকে অনেক টেরাকোটার কাজ চুরি হয়ে গেছে। এই জায়গা থেকে যদি আবারো পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী চুরি হয় তাহলে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অর ইন্ডিয়ার মিজোরাম শাখার উদাসীনতাই একমাত্র দায়ী থাকবে। ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও এই স্থানটিতে নেই কোন সিসিটিভির ব্যবস্থা। ফলে রাতের আধারে দুর্মূল্য সামগ্রী চুরি করে নেওয়া অত্যন্ত সহজ।

ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, মূলত ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্মের সংমিশ্রণে পিলাকের এই স্থাপত্যগুলো গড়ে উঠেছিল। চিত্রশিল্পের শৈলী এবং ভাস্কর্যগুলোতে বাংলার পাল ও গুপ্ত যুগের ভাস্কর্যর সাদৃশ্য রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
এসসিএন/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।