ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আগরতলা

মৌচাষে আর্থিকভাবে লাভবান ত্রিপুরার কাঠমিস্ত্রি মানিক

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২০
মৌচাষে আর্থিকভাবে লাভবান ত্রিপুরার কাঠমিস্ত্রি মানিক

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরার মানিক ঘোষ (৫০) পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি  বাড়িতে মৌচাষের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি যুবকদের জীবিকা নির্বাহের নতুন পথ দেখাচ্ছেন।

বর্তমানে মানিক মধু বিক্রি করে বছরে প্রায় ৯০ হাজার রুপির বেশি আয় করেছেন। মানিক ত্রিপুরার খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়া এলাকার বাসিন্দা।

কাঠমিস্ত্রির পাশাপাশি কীভাবে তিনি মৌচাষি হয়ে উঠলেন বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মানিক ঘোষ বলেন, ১৯৯৪ সালে ত্রিপুরা সরকারের খাদি বোর্ডের তরফ থেকে তেলিয়ামুড়া গ্রামোন্নয়ন ব্লকের অফিসে মধু চাষ বিষয়ক এক প্রশিক্ষণে আয়োজন করা হয়। এতে তিনি অংশ নিয়ে ছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে কেন্দ্র থেকে গ্রহণকারীদের সবাইকে মৌমাছিসহ দু’টি করে মৌচাষের জন্য বক্স দেওয়া হয়। সেই থেকে তার মৌচাষের যাত্রা শুরু। এরপর তিনি ২০১৮ সালে আবারও খাদি বোর্ডের তরফে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে তিনি ফের প্রশিক্ষণ নেন।

বর্তমানে তার বাড়িতে মৌচাষের জন্য প্রায় ১৬টি বক্স রয়েছে। এগুলোকে তিনি বাড়ির আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। একটি মৌমাছির বক্স থেকে বছরে পাঁচ থেকে ছয় কেজি মধু পাওয়া যায় বলেও জানান মানিক। এ মধু তিনি স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রি করেন। সাধারণ মানুষ তার বাড়িতে খাঁটি মধু কিনতে আসেন। প্রতি কেজি মধু তিনি ৯শ' থেকে এক হাজার রুপি করে বিক্রি করেন।

মানিক বলেন, যদি মধু সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের ভালো সুবিধা থাকতো তা হলে তিনিসহ রাজ্যের অন্য মৌচাষিরা আরও বেশি দামে মধু বিক্রি করতে পারতেন।

মধু উৎপাদনে খরচ কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে মানিক বলেন, মধু উৎপাদনে তেমন একটা খরচ হয় না। প্রশিক্ষণ শেষে কেন্দ্রে থেকে কয়েকটি বক্স ও মৌমাছি দেওয়া হয়।  এছাড়া কয়েকটি বক্স বানিয়ে মধু উৎপাদন শুরু করলে অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায়। কারণ মৌমাছিকে বাড়িতে রেখে দিলেই হয়, তারা নিজেরাই উড়ে উড়ে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। শুধু নির্দিষ্ট সময়ে বক্স থেকে মধু আহরণ করতে হয়। আর যখন বিশেষ করে শীতের শেষ সময় ও বসন্তের শুরুতে গাছে ফুল থাকে না তখন মৌমাছির বক্সের সামনে চিনি গুলিয়ে রেখে দিতে হয়।  

মৌচাষের জন্য প্রতিদিন সময় দিতে হয় না তাই তিনি মৌমাছি চাষের পাশাপাশি এখনো কাঠমিস্ত্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মৌসুমী ফুলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে একটি বক্স থেকে মাসে এক থেকে দু’বার মধু আহরণ করা সম্ভব হয় বলেও জানান মানিক।

তিনি জানান, যে কেউ নিজ পেশার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নিয়ে অল্প খরচেরই মৌচাষ করে বছরে কিছু অর্থ আয় করতে পারেন।  

তিনি আরও বলেন, আমাকে দেখে তেলিয়ামুড়া এলাকার অনেকেই মৌচাষের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। পাশাপাশি রাজ্য সরকার এ পদ্ধতি মৌমাছি চাষে  সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলছেন। কারণ প্রায় কোনো পুঁজি ছাড়াই ও খুব অল্প পরিশ্রমে মৌচাষের মধ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২০
এসসিএন/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।