ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

আগরতলা

সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি ত্রিপুরার আগর চাষিরা

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি ত্রিপুরার আগর চাষিরা আগর গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ২০৭ কিলোমিটার দূরে উত্তরজেলার কদমতলা ও তার আশপাশ এলাকার আমটিলা, বড়গোল, জ্বালাইবাড়ী, সরসপুর, ফুলবাড়ী, লালছড়া, কালাছড়া, বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তী চুড়াইবাড়ী, মহেশপুর, রাণীবাড়ী, তারকপুর ইত্যাদি এলাকা ‘আগর গাছের দেশ’ বলে পরিচিত।

এই নামের স্বার্থকতা রয়েছে। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়।

কারণ এসব এলাকার মাটি আগর চাষের জন্য উপযুক্ত। এসব এলাকার যে দিকে তাকানো যায় সে দিকেই চোখে পড়ে আগর গাছ। বাড়ির আঙিনা, সরকারি জমি, এমনকি রাস্তার পাশে স্কুলের গণ্ডির ভেতরেও আগর গাছ জন্মায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগর গাছের বীজ বাতাসে উড়ে বা বৃষ্টির পানির সঙ্গে যেখানে গিয়ে পড়ে সেখানেই আগর গাছ জন্মায়। কোনো যত্ন ছাড়াই বেড়ে উঠছে এগুলো। এছাড়া শত শত বিঘা জমিতে রয়েছে আগর বাগান। কবে থেকে এ এলাকাগুলোতে আগরের এত ছড়াছড়ি তা কেউ বলতে পারেননি। তাদের বক্তব্য ছোট বেলা থেকেই তারা দেখে আসছেন আগর গাছ।

আগর বাগান।  ছবি: বাংলানিউজ

প্রতি বছর এসব এলাকাগুলো থেকে কয়েক কোটি রুপির আগরের ব্যবসা হলেও এর পুরটাই ছিল অবৈধ। কারণ বিপুল পরিমাণে আগর গাছ হলেও বন দপ্তর এ গাছ কেটে বিক্রির অনুমোদন দিতো না। এমনকি শিল্প দপ্তর থেকে পাওয়া যেতো না আগর কাঠ থেকে তেল বের করার অনুমোদন। তবে ব্যবসা যে বন্ধ ছিল এমনটা নয়। অবৈধভাবে আগর গাছ কাটা হতো এবং চোরাচালানকারীদের মাধ্যমে কাঠ থেকে তেল বের করে আসম রাজ্য হয়ে পাঠানো হতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব ছিল শূন্য। গাছের মালিকরাও ন্যায্য দাম পাচ্ছিলেন না।  

সম্প্রতি ত্রিপুরা রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন টিংকু রায়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বন দপ্তরসহ অন্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে আগর গাছ কাটা ও ব্যবসাকে সম্পূর্ণরূপে বৈধতা দেন। তার এ সিদ্ধান্তে খুশি রাজ্যের আগর চাষিরা। এমনকি তিনি রাজ্যে প্রথম আগর কাঠ থেকে তেল তৈরি কারখানা স্থাপনের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।

নার্সারি।  ছবি: বাংলানিউজ

টিংকু রায় বাংলানিউজকে জানান, শুধুমাত্র কদমতলা এলাকাতেই এ সময় প্রাপ্তবয়স্ক আগর গাছ রয়েছে ৫৪ লাখ। এগুলো থেকে এ মুহূর্তে আগর তেল বের করা সম্ভব যা অত্যন্ত মানসম্পন্ন হবে।

রাজ্যে আগর গাছ কাটা ও বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে চাষিরা খুশি।

বড়গোল এলাকার চাষি প্রদীপ নাথ জানান, তার প্রায় এক বিঘা জমিতে আগর বাগান করেছেন। এছাড়া বাড়ির আশেপাশে আরও ছোট বড় অনেক গাছ গজিয়ে উঠেছে। এ বছরই গাছগুলো কেটে বিক্রি করতে পারবেন। সরকার অনুমোদন দেওয়ায় তিনি খুশি। তার মতো অন্য আগর বাগানের মালিক সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি বলে জানান তিনি।  

তিনি আরও জানান, আগর চাষের বৈধতা দেওয়ার পর থেকে আগর চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন অন্য এলাকার মানুষও আগর চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তাই হঠাৎ করে আগর গাছের চারার চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে আগর গাছের নার্সারি করে আসছেন। তবে, এ বছর চারাগাছের মূল্য অনেকটা বেশি পাবেন বলে আশাবাদি তিনি। এবছর এক একটি আগার চারা ন্যূনতম ১০ রুপি করে বিক্রি করতে পারবেন।

একই এলাকার বাসিন্দা সুরেন্দ্র নাথ। পেশায় তিনি পোল্ট্রি খামারি। পাশাপাশি তার প্রায় দুই বিঘা জমিতে আগর বাগান রয়েছে। তিনি জানান, আগে বিক্রির বিষয়ে একটা ভয় কাজ করতো, যদি আগর গাছ কাটার খবর পেয়ে পুলিশ ও বন দপ্তরের কর্মীরা চলে আসে। তখন অহেতুক ঝামেলায় পড়তে হতো। এখন আর এ চিন্তা নেই।

আগর চাষি।  ছবি: বাংলানিউজ

এত সব ঝামেলার পর মানুষ কেন আগর চাষ করে আসছিল বাংলানিউজের করা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এ মাটিতে আগর খুব ভালো হয়। কোনো যত্ন ছাড়াই আগর গাছ বেড়ে উঠে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ এখানে বছরের পর বছর আগর চাষ করে আসছিলেন।

আগর বাগানে গিয়া দেখা যায়, গাছগুলোতে যেন অধিক পরিমাণে আগর ধরে তার জন্য সব গাছগুলোতে উপর থেকে নিচে পর্যন্ত লোহার পেরেক মেরে রাখা হয়েছে।

চাষিরা জানান, এ পেরেকের গোড়ায় বেশি পরিমাণে আগর ধরে। আগর হচ্ছে এক ধরনের আঠালো পদার্থ গাছের কোনো অংশ কাটলে, ক্ষত হলে বা কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে এ ক্ষতে আগর এসে জমা হয়। এজন্য তারা গাছে পেরেক মেরে রাখেন।

কদমতলা এলাকায় আগর প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি পরে রাজ্যের অন্য জায়গাতেও আগর প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানান টিংকু রায়।

সব মিলিয়ে আগর ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থনীতিতে একটা বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মত অভিজ্ঞ মহলের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এসসিএন/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।