ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আগরতলা

ত্রিপুরার আপন আলিঙ্গনে আমন্ত্রণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
ত্রিপুরার আপন আলিঙ্গনে আমন্ত্রণ উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ

একটি দেশকে বাকিদের চেয়ে আলাদা ও আকর্ষণীয় করে তোলে এর স্বতন্ত্র ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, গর্ব করার মতো ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠী, বন্ধুবাৎসল জনগণ, মুক্তবুদ্ধি ও উন্নত রাজনীতি এবং হৃদয়কাড়া পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। 

একটি দেশকে বাকিদের চেয়ে আলাদা ও আকর্ষণীয় করে তোলে এর স্বতন্ত্র ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, গর্ব করার মতো ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠী, বন্ধুবাৎসল জনগণ, মুক্তবুদ্ধি ও উন্নত রাজনীতি এবং হৃদয়কাড়া পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।  

সাংবিধানিক দিক দিয়ে ত্রিপুরা ভারতের একটি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হলেও তাকে একটি দেশের মতোই বিবেচনা করা যায়।

নিজ রাজ্য বলেই বলছি না, ত্রিপুরা উল্লিখিত সব বৈশিষ্টেই আলাদা ও আকর্ষণীয়।
 
কথায় আছে, তুমি কেমন তা দেখ অন্যের আয়নায়। সেই জায়গা থেকে যদি বলি, এর চেয়েও উচ্ছ্বসিত শংসাবাক্য পেয়েছি বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছ থেকে।
 
বেশ কয়েকবার ত্রিপুরা ঘুরে যাওয়া সহকর্মীদের বক্তব্য, ‘ত্রিপুরার মানুষের কাছ থেকে যে আন্তরিকতা ও উষ্ণ আমন্ত্রণ পাই, তা পশ্চিমবঙ্গে পাই না। ভাষা-সংস্কৃতিসহ অনেক মিল। মনে হয় বাংলাদেশেই রয়েছি’।
 নীরমহল
বাংলা ভাষাভাষী হলেও দুই রাজ্যের উচ্চারণ ও বলার ভঙ্গিমায় পার্থক্য অনেক। কলোনিয়াল হেজেমনির কারণে প্রথমে ইংরেজি, এখন হিন্দির প্রতাপে পশ্চিমবাংলায় বাংলাই কোণঠাসা। নতুন প্রজন্ম বাংলা বলায় খুব একটা আগ্রহী নয়। পাশাপাশি, ব্রিটিশ পিরিয়ডেও ত্রিপুরা ছিলো স্বাধীন, হিন্দিকেও খুব একটা আমলে নেয়নি তাই বাংলা একদম মনে-প্রাণে। দ্বিতীয় রাজ্যভাষা হিসেবে রয়েছে ‘ককবরক’।
 
ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম এ রাজ্যে গলাগলি করে বাঙালি, ত্রিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, মণিপুরি, চাকমা, কুকি, মিজো ও আরাকানিজদের বাস। ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, উৎসব, জীবন যাপন প্রভৃতি প্রত্যক্ষভাবে ত্রিপুরাকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করেছে।  

জাতি-ধর্মের সম্প্রীতি স্বরূপ আদিবাসীদের উৎসবসহ অশোকাষ্টমী, দূর্গা পূজা, গরিয়া, খারচি, পৌষ সংক্রান্তি, চড়ক, শিবের গাজনের মতো উৎসবগুলো হয়ে ওঠে সার্বজনীন।
 
পর্যটক আকর্ষণী ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনেরও কমতি নেই। নীরমহল, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, উদয়পুর মন্দির, অমরপুর, উনকোটি প্রভৃতি জায়গাগুলোতে একই পর্যটককে অনেকবার যেতে দেখেছি। ঘুরে-ফিরে নিজমুখে নিজ রাজ্যের প্রশংসাই চলে আসে, কিন্তু এ সবই অন্যের আয়নায় দেখা মূল্যায়ন।
 
সেভেন সিস্টার্সের অন্যতম এ রাজ্যটির উত্তরাংশে অরণ্যাবৃত পাহাড় ও উপত্যকা, আর দক্ষিণে ঘন জঙ্গল। প্রতি বছর এখানে চার হাজার মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এজন্য বর্ষাকালে ত্রিপুরা হয়ে ওঠে আরও সবুজ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি উঠলেও বনাঞ্চলের কারণে অসহনীয় লাগে না। এছাড়া রাজ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
 
ত্রিপুরা উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ, এ কারণেই বুঝি সেদেশের মানুষের সঙ্গে আত্মিক বন্ধন এতো মধুর। বন্ধুরা অবশ্য তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ত্রিপুরার বিশ্বাসী বন্ধুর ভূমিকাকে সবচেয়ে বেশি বড় করে দেখেন। তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে রাজ্যটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই-তিন ঘণ্টায় ত্রিপুরা যাওয়া বা আসা যায় বলেই হয়তো সেটি সম্ভব হয়েছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও চিকিৎসাসহ নানা উপকারে পাশে দাঁড়িয়েছিল সেসময়। এর মধ্য দিয়ে ত্রিপুরাবাসীর চারিত্রিক গুণাবলীও ফুটে ওঠে। যা দেশটি আজও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। বর্তমান প্রজন্ম চাইলেই খুব সহজে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য বিষয়বস্তু গুলো দেখে যেতে পারে। অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণী জায়গা-নিদর্শন তো রইলোই।
 
যুদ্ধ-রাজনীতির কথা উঠলো যখন বলে নেওয়া ভালো, এটি বাম সরকার শাসিত রাজ্য। ১৯৭৭ সালের আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলো কংগ্রেস, এরপর সিপিআই (এম)। মাঝখানে ১৯৮৮-১৯৯৩ আবার কংগ্রেস ও টি ইউ জি এস দলের জোট সরকার ছিল, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আবারও বামদের হাতে।   
 
শিরোনামে ফিরে যাই। একটি পল্লীগানে শুনেছিলাম, ‘আমার বাড়ি আইসো বন্ধু বসতে দিবো পিঁড়ি’। ত্রিপুরার বাংলাভাষী মানুষের ভাষা ও আমন্ত্রণ ঠিক এমনই। তবে আমার রাজ্যের মানুষ পিঁড়ি দিয়েই ক্ষান্ত নন, পাত পেড়ে পরম আনন্দে তুলে দেবে- ঐতিহ্যবাহী মুই বরক, মোসডেং সেরমা, ভাংগুই, কাসই বওতই, পাঁচ ফোড়ন তরকারি কিংবা ওয়াহান মোসডেং।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।