ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বইলদা গ্রামের শাপলা বিল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
বইলদা গ্রামের শাপলা বিল বইলদা গ্রামের শাপলা বিল। ছবি: বাংলানিউজ

গ্রামাঞ্চলে ঘুরতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। তাই অফিসের বেরসিক কাজকর্মের ফাঁকে একটু সুযোগ মিললেই চলে যাই বিভিন্ন গ্রামে। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে একদিন আবিষ্কার করে ফেলি বইলদা গ্রামের শাপলা বিল। জায়গাটা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ, সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশাযোগেই চলে যাওয়া যায় এই মনোরম স্থানে।

ছোট ভাই ওমর খৈয়ম জিনিয়াসকে নিয়ে এক বিকেলে এই বইলদা গ্রামে প্রথম যাই। আমার ধারণাও ছিল না যে এত সুন্দর একটা গ্রামের দেখা পাবো।

এই গ্রামে লাল শাপলায় ছেয়ে থাকা বিলটা যেমন সুন্দর, তেমনি সহজ-সরল ও মিশুক এখানকার মানুষেরা।  
শাপলা ফুল।                                          ছবি: বাংলানিউজ
বিলের পানি তখন থই থই। যতদূর চোখ যায় কেবল লাল শাপলার হাতছানি। শাপলার পাশাপাশি কিছু পদ্মও চোখে পড়ল। বিলের এক পাশে একটা চালিতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। এমন সময় কয়েকটা ছেলে এসে জিজ্ঞেস করে, আপনেগো কোন বাড়ি (আপনাদের বাড়ি কোনটা)?
- আমাদের কোনো বাড়ি নাই। তোমাদের গ্রামটা অনেক সুন্দর। তাই ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম এখানে।
- এই গেরামে আপনেগো পরিচিত কেউ নাই!
- না। এখানে দেখলাম অনেক লাল শাপলা। তাই নেমে পরলাম।
- মানুষ ক্যামনে অপরিচিত যায়গায় এমনে চলে আসে! (এই কথা বলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা সবার)


পদ্ম ফুল।  ছবি: বাংলানিউজতখন প্রায় সন্ধ্যা। ভাবলাম, এই জায়গায় ক্যাম্পিং করলে কেমন হয়? শাপলা দেখার আদর্শ সময় ভোর। রাতে ক্যাম্পিং করে থাকলে ভোরে শাপলার দৃশ্য খুব ভালো করে দেখা যাবে।  

দেখলাম, বিলের পাশেই তাঁবু করার জায়গা আছে। ওই জায়গার মালিক মান্নান মোল্লা তখন আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সেখানে ক্যাম্পিং করা যাবে কিনা?

দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন মান্নান মোল্লা। এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। ছোট্ট একটা মাটির ঘরে দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে বসবাস তার। আমাদের অতিথি হিসেবে গ্রহণ করতে তার কোনোই আপত্তি নেই বলে জানালেন। আমরাও খুশি মনে সেদিনের মতো ফিরে এলাম ঢাকায়।

বইলদা গ্রামের শাপলা বিল।  ছবি: বাংলানিউজ
একদিন পর ১০ জনের একটা টিম নিয়ে আবার চলে এলাম বইলদা গ্রামে আব্দুল মান্নান ভাইয়ের বাসায়। রাত হয়ে গেছে ততক্ষণে। একদল গেল বাজারে, রাতের খাবারের জন্য কেনাকাটা করতে। আরেকদল লেগে গেলাম তাঁবু টানানোর কাজে। তাঁবু টানানো শেষ হতে হতে বাজারও চলে আসে। মান্নান ভাইয়ের বাসায় হলো রান্না।  

রান্না শেষ হতে হতে প্রায় মধ্যরাত। মান্নান ভাইয়ের বাড়ির উঠানে খাওয়ার আয়োজন করা হলো। পাটি বসিয়ে সবাই গোল হয়ে বসলাম। দেশি মুরগির মাংস, কয়েক ধরনের ভর্তা ও ডাল দিয়ে আমাদের ভোজ যখন প্রায় শেষ তখন মান্নান ভাইয়ের স্ত্রী জানালেন, তালের রসের গুড় আর গরুর দুধ আছে, আমরা খেতে চাই কিনা?

বইলদা গ্রামের শাপলা বিল।  ছবি: বাংলানিউজআগে কখনও তালের রসের গুড় খাইনি। গুড় আর দুধ দিয়ে চলল আরেক প্রস্থ খাওয়া। ভোরে শাপলা দেখতে হবে, তাছাড়া সবারই অফিস আছে। তাই আর দেরি না করে ঘুমিয়ে পরলাম তাবুতে।  

ফজরের আজানের একটু পরেই উঠে পড়লাম সবাই। হেমন্তের সকালে আবছা কুয়াশায় ছেয়ে ছিল বিল। এই বিলের যতদূর চোখ যায় শুধুই লাল শাপলা। ভোরের আলোয় এই শাপলাগুলো যেন লাল-সবুজের গালিচা বিছিয়ে কাছে ডাকছিল আমাদের।  

 মাছ ধরার চাঁই।  ছবি: বাংলানিউজ
মাছ ধরার জন্য পেতে রাখা চাঁইগুলো উঠিয়ে দেখছিলেন স্থানীয়রা। এরইমাঝে তাল গাছের ডোঙ্গাতে চড়ে নেমে পড়লাম শাপলার মিছিলে। হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাচ্ছে শাপলা আর পদ্ম। মনে হলো, যেন অদ্ভুত এক প্রাকৃতিক স্বর্গে চলে এসেছি। এখান থেকে না ফিরতে পারলে আপত্তি থাকবে না একটুও।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
এনএইচটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।