ঢাকা, শনিবার, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

শারদ মেঘের দেশে, পাখির ডানায় ভেসে

বাংলানিউজ ট্রাভেল টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৪
শারদ মেঘের দেশে, পাখির ডানায় ভেসে ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: ‌একখণ্ড, দু’খণ্ড, তিনখণ্ড, চারখণ্ড...দশ খণ্ড, বিশ খণ্ড, ত্রিশ খণ্ড...একশ’ খণ্ড, দু’শো খণ্ড, তিনশো’ খণ্ড...! নাহ, আর গোনা যায় না! অজুত সহস্র খণ্ড মিছিল বের করেছে নবযৌবনা শরৎ! কি সুন্দর, কি শুভ্র, কি অদ্ভুত সে অচিন দেশ! মহাপতঙ্গ যে বিস্ময় জমিয়ে রেখেছিল সেটা বুঝিনি আগে। শারদ রানী যেন  পেখম মেলে বসেছে!

ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে আনুষ্ঠানিকতা শেষে যখন কক্সবাজারের উদ্দেশে রিজেন্টের ফ্লাইটে চড়ার অপেক্ষায়, তখনও সাম্প্রতিক সময়ের প্রকৃতির বৈরী আচরণের ব্যাপারটি ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।

কিন্তু উড়োজাহাজে চড়ার জন্য যখন রানওয়েতে আসা হলো, তখন আকাশকে আগের দিনের আকাশও মনে হচ্ছিল না। কিন্তু, এরচেয়েও যে বড় বিস্ময় আকাশ রেখে দিয়েছে সেটা কে জানতো!

উড়োজাহাজে চেপে বসার পর জানিয়ে দেওয়া হলো, আমাদের আকাশযান ১৭ হাজার ফিট ওপর দিয়ে উড়বে। এতো উচ্চতায় উড়বো বলে নিচের জনপদটিকে কেমন দেখা যাবে সে কৌতূহলই বাড়ছিল বেশি।

রানওয়ের দৌড়োদৌড়ি শেষে ডানায় নিয়ে মহাপতঙ্গ যখন উপরে উঠতে শুরু করলো তখন ‘চমক’ই চমকে দিতে থাকলো। আমাদের প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমরা উপরে উঠছি আর ভাসছি আকাশে-বাতাসে। সামনে এগোনো বোঝার পথটি তৈরি করে দিলে শারদরানী।

একটু উপরে ওঠার পরই পাখির ডানায় আলতো করে ছুয়েঁ যেতে দিতে থাকলো সারি সারি সাদা মেঘ। নীলাকাশকে বাড়ি বানানো এ প্রকৃতিপ্রাণ মাটির প্রাণ মানুষকে দেখে কী যেন বলে যেতে লাগলো!

পাখির ডানায় ভর করে কক্সবাজারের উদ্দেশে উড়াল দেওয়া মানুষগুলো মেঘকন্যাদের আতিথেয়তায় মুহূর্তের জন্য যেন ভুলে যেতে থাকলো গন্তব্যের কথা। এক খণ্ড মেঘকন্যার সঙ্গে ভাব জমিয়ে কুশল বিনিময় শুরু করতে না করতেই হাজির আরেক মেঘকন্যা। নতুন মেঘকন্যার সঙ্গে ভাব জমানোর কথা জমাতেই হাসি আরেক মেঘকন্যার...! এমন ‘প্রেম শুরুর প্রচেষ্টার’ মধ্যেই পাখি উঠে গেলো ১৭ হাজার ফিট ওপরে মেঘেদের দেশ ছাড়িয়ে!

মর্ত্যলোক থেকে আকাশের পাখি হয়ে ওঠার পর এবার আর বিস্ময়ের মাত্রা চেপে রাখা গেলো না। মেঘকন্যাদের খণ্ড খণ্ড মিছিলে বিমোহিত ক’জনের পুলকিত মন্তব্য কানে বাজলো, ‘আ রে এই তো শরৎ, এইতো শারদ রানীর রাজ্য!’

শুভ্র মেঘবালিকাকে কবি কালিদাস কেন দূত করে পাঠিয়েছিল যক্ষপ্রিয়ার কাছে তা আরেকবার নতুন করে অনুভব করলাম। শারদ মেঘবরণের এমন উপলক্ষের কথা চিন্তাও করিনি আগে। আর প্রতিমুহূর্তে ভাবছিলাম রবীন্দ্রনাথ, কালিদাস যদি এভাবে উপভোগ করার সুযোগ পেতেন তবে আরো কিনা লিখতেন।

নির্দিষ্ট আসন ছেড়ে এ জানালা-ও জানালা করে স্মার্টফোন-ক্যামেরা নিয়ে শারদরানীর রূপ ফ্রেমবন্দি করছিলাম, করছিলাম রূপের বন্দনাও। গুনতে থেকেছি সাদা মেঘের আনন্দ মিছিল, ক্লান্ত হয়েছি, আবার গুনতে শুরু করেছি। মেঘপরীদের রূপের তারিফে অন্ধ হয়েই উপলব্ধি করছিলাম, কাঁশফুল আর সাদা মেঘের শরৎ কেন প্রকৃতিপ্রেমীদের গোপন প্রেমের ঋতু, সেটা বোধ হয় উড়োজাহাজ পাখির ডানায় চড়ে দেখা ছাড়া ‘প্র্যাকটিক্যালি’ বোঝা যাবে না।

রূপবতী মেঘকন্যাদের বন্দনায় যখন ক্যামেরা-স্মার্টফোনের বাটনে চাপ পড়ছিল, তখন মেঘের রাজ্যের পাহাড়াকৃতির দৈত্য-দানবগুলোও চোখ রাঙিয়ে যাচ্ছিল অজানা কারণে! তবু সেটা শারদ উৎসবে ছন্দপতন ঘটাতে পারেনি!

ঘণ্টাখানেক পাখির ডানায় ভেসে শারদ মেঘের দেশে ওড়াউড়ির পর কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে যখন পা রাখছিলাম, তখন চোখে পড়লো সাদা কাঁশফুলের বড়ো বাগান! সাগরকন্যায় হাসতে এসে ভাসতে পারা গেলো প্রকৃতি কন্যা শরতের নয়া উৎসবেও!

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৪

** গরম গরম ফিশ ফ্রাই
** মহাপতঙ্গের পেটে একঘণ্টা!
** রিজেন্টে ফ্রি কক্সবাজার দর্শন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।