ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৬)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৬)

বাবর আলী। পেশায় একজন ডাক্তার। নেশা ভ্রমণ। তবে শুধু ভ্রমণ করেন না, ভ্রমণ মানে তার কাছে সচেতনতা বৃদ্ধিও। ভালোবাসেন ট্রেকিং, মানুষের সেবা করতে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এই ডাক্তার হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সেটা আবার ৬৪ দিনে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? সেটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছেন বাংলানিউজের ট্রাভেলার্স নোটবুকে। ৬৪ দিনে থাকবে ৬৪ দিনের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা।

দিন ৫৬
নোয়াখালী-মোল্লাঘাটা (দাগনভূঁঞা, ফেনী)= ৩৮.৫৯ কিমি


এই ক'দিনের পথচলায় আজই সবচেয়ে দেরিতে বিছানা ছেড়েছি। রোজকার অভ্যাসমতো সাড়ে পাঁচটা বাজতেই ঘুম ভেঙে গেলেও দফায় দফায় ঘুমিয়েছি সাড়ে আটটা পর্যন্ত৷ এমন না যে দেশজুড়ে চলমান শৈত্যপ্রবাহ এর কারণ।

নাহিয়ানের রুমে থাকা পাতলা কম্বলেই শেষ রাতে খানিকটা গরম অনুভূত হচ্ছিল। নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আগেই সকালের নাশতার দাওয়াত দিয়ে রেখেছিলেন।  

কবিরহাট উপজেলার রাস্তা। নাহিয়ান এ ব্যাপারে আগেই বলে রাখলেও সকালের নাশতার টাইমিং শুনে আমার মাথায় বাজ। সকাল নয়টায় একসঙ্গে নাশতার দাওয়াত! ততক্ষণে সাধারণত আমার দিনের মোট হাঁটার বেশ ভালো একটা অংশ হাঁটা হয়ে যায়। আমি খানিকক্ষণ গাইগুই করলেও নাহিয়ান জানালো- 'দোস্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট হয়ে গেছে৷ নাশতা তোকে করে যেতেই হবে। ' নয়টা বাজতেই অফিস সহকারী সাইদ এসে রুমে বসাতেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চলে এলেন। সদা হাস্যময় এই ভদ্রলোকের নাম উৎপল চৌধুরী। বাড়ি চট্টগ্রামেই।

আমার অভিজ্ঞতা ও হাঁটার পেছনের কারণ জানতে চাইলেন বেশ আগ্রহভরে। আমার গল্প শেষ হতেই ওনার নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন। এখানে কর্মরত পুলিশদের উনি নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন আদালত প্রাঙ্গণে কেউ ধূমপান করলে যাতে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাজতে ঢোকানো হয়। আজ পর্যন্ত কাউকে হাজতে ঢোকানো হয়নি। তার মানে আদালত প্রাঙ্গণে কেউ ধূমপান করে না। উনি এবং ওনার অন্য কলিগেরা মিলে প্রত্যেক মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করেন। প্রত্যেক মঙ্গলবারেই ওনারা কমপক্ষে চার-পাঁচ হাজার সিগারেটের ফিল্টার পেয়ে থাকেন। আর অজস্র প্লাস্টিক তো আছেই।  

লালচে মাথার কচুরিপানা। এর মধ্যেই চলে এলেন অন্য ম্যাজিস্ট্রেটরা। কথায় কথায় আবিষ্কার করলাম এর মধ্যে একজন আমার বন্ধুর বড় ভাই। প্রিয়াংকা দিদির ক্লাসমেটও বেরিয়ে এলো একজন। আর পেশাগত কারণে ওনারা মোটামুটি সবাই আমার বোনকে চেনেন। আমার নাম-পরিচয় ছাপিয়েও বড় পরিচয় হয়ে উঠলো আমি হামীমের মেজো ভাই।

নাশতার ফাঁকে গল্প, ছবি তোলা শেষে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যখন হাঁটা শুরু করেছি তখন বাজে সাড়ে দশটা। পা চালাতেই চলে এলাম লক্ষ্মী নারায়ণপুর। ইমাম বাজার ছাড়িয়ে পূর্ব লক্ষ্মী নারায়ণপুর। নোয়াখালী খালটা বেশ এঁকেবেকে গিয়েছে। কখনো রাস্তার উপর দিয়ে কখনো বা রাস্তার পাশ ঘেঁষে। ছায়েদুল হক মিয়ার দোকানের পর সেক্রেটারি বাজার। জমি পরিমাপের আরো একটা এককের সঙ্গে পরিচিত হলাম এদিকে এসে৷ অনেকগুলো সাইনবোর্ডেই লেখা আছে- এত ডিং জমি বিক্রি হবে।  

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে। দানামিয়ার বাজার পার হয়ে কাশেম বাজারের কাছে আসতেই দুই পাশে সারিবদ্ধ কাটা গাছ। দেখেই মায়া হলো। কিসের জন্য এ বলিদান হলো কে জানে। ঘড়ির কাঁটা বারটা পেরিয়ে গেলেও দেখা নেই সূর্যদেবের। ধন্যপুর পার হতেই বিশাল সব ঝাউগাছ রাস্তার ধারে। সব কয়টা ঝাউগাছ আকার-আকৃতিতে সুবিশাল।

কালা মিয়ার পোল থেকে সদর উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে কবিরহাট উপজেলায়। নরোত্তমপুর স্কুলের মাঠের পুকুরে কড়ই গাছের ছায়া দেখে এক মুহূর্ত থমকে গেলাম। কালীর বাজার পেরিয়েই যাদবপুর। ফরাজী বাজারের কাছে এক টিউবওয়েলের পানি মুখে দিতেই মুখ হয়ে গেলো পুরোপুরি নোনতা। এখানে এত নোনতা পানি কোথা থেকে এলো কে জানে। ওটার হাট থেকে বসুরহাট- কবিরহাট রোডে। এই রাস্তায় তেমন গাড়ি নেই। বেশ ফাঁকা রাস্তা। হাবিবপুর বাজার থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমানা শুরু। এবার বামপাশে রাস্তার সমান্তরালে সঙ্গী হলো খাল। 'হাগল নি কোন?'- এই প্রশ্ন শুনতে শুনতে এগোচ্ছি। তবে আজ আবহাওয়া কিছুটা গুমোট বলে রাস্তায় লোক কম। লোকের কৌতূহল নিবৃত্ত করার জন্যও আজ সময় দিতে হচ্ছে কম।

সরকার দীঘির পরের বাজারের নাম নবীর দোকান। এই জায়গা থেকে রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। প্রচুর ধুলাবালিতে বাড়ির দেওয়াল থেকে রাস্তার পাশের সাদা ব্যানার সবকিছুই লালচে। এমনকি রাস্তার পাশের কচুরিপানার মাথাও লাল। রাস্তা খানিকটা ভালো হলো মিরেরপুল থেকে। ফেনী জেলার দাগনভূঁঞাতে প্রবেশ করলাম চৌকিদার পোল থেকে। দুধমুখা বাজার থেকে ধরলাম কোম্পানীগঞ্জ-দাগনভূঞার রাস্তা। ইয়াকুবপুর, করমূল্যাপুর হয়ে দাগনভূঁঞা পৌঁছাতেই ফোন দিলাম মেডিক্যালের জুনিয়র শিহাবকে। ওর পোস্টিং এখানের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রাস্তা থেকে খানিকটা ভেতরে হওয়ায় আমি প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে শিহাবের জোরাজুরিতে গেলাম। আমার জন্য নাকি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অপেক্ষা করছেন।  

সকালের নোয়াখালী। হাসপাতাল কম্পাউন্ডেই দেখা হয়ে গেলো আমার মেডিক্যালেরই এক ব্যাচ সিনিয়র এবং এক ব্যাচ জুনিয়র দুজন ডাক্তারের সঙ্গে। সিলেট মেডিক্যাল থেকে পাস করা আরো দুজন ডাক্তারের সঙ্গেও পরিচিত হলাম। ইউএইচএফপিও সাহেব বরণ করে নিলেন ফুল দিয়ে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে মহাসড়কে উঠতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। গাড়ির হেডলাইটে চোখ ঝলসে যাচ্ছে খানিক বাদে বাদেই। এর মধ্যেই হাঁটা অব্যাহত আছে। একে একে পার হলাম গণিপুর বাজার, বেকের বাজার, আমিরগাঁও, সিলোনিয়া বাজার। মোল্লাঘাটা বাজারে এসে ফোন দিলাম শিহাবকে। আমার আজ মহীপাল পর্যন্ত এগোনোর পরিকল্পনা থাকলেও শিহাবের মোটিভেশনে আজকের হাঁটায় ইতি টানলাম এই বাজারেই। বাজারের একদম পাশেই বাড়ি শিহাবদের। ফ্রেশ হয়ে শিহাব দেখাতে নিয়ে গেলো ওর নতুন শখ। হরেক রকমের ক্যাকটাস আর ইনডোর প্ল্যান্টে ওর পুরো ছাদ আর ব্যালকনি ভর্তি। রং আর বৈচিত্র‍্যে প্রত্যেকটা গাছই স্বতন্ত্র।

চলবে...

আরও পড়ুন...
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫৩)
**পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৩০)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৬)​
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-২০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১১)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-১০)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৯)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৮)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৭)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৬)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৫)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (পর্ব-৪)
** পায়ে পায়ে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা (দিনাজপুর-৩)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (ঠাকুরগাঁও-২)
** পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা (পঞ্চগড়-১)

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।