ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

কক্সবাজারে হোটেলে রুম নেই, পথেঘাটে দিনাতিপাত পর্যটকদের

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
কক্সবাজারে হোটেলে রুম নেই, পথেঘাটে দিনাতিপাত পর্যটকদের রুম না পেয়ে বারান্দায় এভাবে রাত পার করেছেন পর্যটকরা

কক্সবাজার: একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে টানা তিনদিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে বেড়াতে এসে বিপাকে পড়েছেন হাজারো পর্যটক। হোটেলে রুম না পাওয়া কিছু পর্যটককে জেলা ছাত্রলীগ নেতারা রাতযাপনের ব্যবস্থা করে দিলেও হাজারো পর্যটককে রাত কাটাতে হয়েছে সমুদ্রসৈকতের চেয়ার, রাস্তা, খোলা আকাশের নিচে।

শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে পর্যটকদের এই চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার ছিল ভাষাশহীদ দিবস উপলক্ষে ছুটি।

সঙ্গে যোগ হয়েছে শুক্র ও শনিবার দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি। টানা তিন দিনের ছুটিতে এবার কক্সবাজারে সমাগম হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় সাড়ে তিনলাখ পর্যটক।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য বছর এই দিনে স্বভাবিকের চেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হলেও এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। যে কারণে আগে থেকে হোটেল বুকিং ছাড়া ভ্রমণে আসা পর্যটকদের পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।

ঢাকার কল্যাণপুর থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মোমিনুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আমরা পাঁচ বন্ধু কক্সবাজার পৌঁছাই। কলাতলী সৈকতের আশপাশের কম করে হলেও ৫০টি হোটেল দেখেও একটি রুম পাইনি। পরে এক ছাত্রলীগ নেতার সহযোগিতায় একটি হোটেলের বারান্দার ফ্লোরে আমরা রাত কাটিয়েছি।  

কুমিল্লা থেকে আসা সুমন হোসেন বলেন, আমরা প্রায় ৩৫ জনের একটি গ্রুপ বাসভাড়া নিয়ে কক্সবাজার আসি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়ে কয়েকঘণ্টা সৈকতের চেয়ার আর রাত ১২টার পরে আমাদের বাসে বসে রাত কাটিয়েছি।

শুধু তারা নন, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হোটেলে রুম না পেয়ে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা থেকে কলাতলী মোড় পর্যন্ত হাজার হাজার পর্যটককে সমুদ্র সৈকতের চেয়ারে, বালুচরে, বাসে, খোলা আকাশের নিচে, কেউ কেউ কাঁচা-পাকা ভবনের ফ্লোরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।

খোলা প্রান্তরে দিনাতিপাতএদিকে পর্যটকদের এমন ভোগান্তিতে এগিয়ে আসে কক্সবাজার জেলা ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতারা সৈকত সংলগ্ন বিভিন্ন স্থান থেকে বিপদে পড়া এরকম শতাধিকে পর্যটককে আশ্রয় দিয়েছেন।  

কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার কল্যাণপুর ও মিরপুর থেকে আসা শতাধিক পর্যটক হোটেলে রুম না পেয়ে বেকায়দায় পড়েন। এদের ৪৫ জনকে আমার চাচার বাসায়, ১৫ জনকে ঝাউতলার হোটেল রেনেসাঁর হলরুমে, কিছু পর্যটককে সিলভার সাইন হোটেলে আমাদের একটি অফিসে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কক্সবাজারের ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া বলেন, এখানকার চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে সোয়া লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে সেই সুযোগও কমে গেছে। যে কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়।  

কক্সবাজার হোটেল মোটেল অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। আমাদের মনে হয়েছে মূলত তিনটি কারণে এবার পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

প্রথমত, ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন স্কুলে পরীক্ষা শেষ হলে নির্বাচনের কারণে নির্বাচনের আগে ও পরে প্রায় একটা মাস পর্যটকেরা কক্সবাজার ভ্রমণে আসেনি। তাই এই বন্ধে পর্যটকের চাপ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, এখানকার হোটেল-মোটেলের দু’তিনজন থাকার উপযোগী এরকম অন্তত এক হাজার কক্ষ জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তাদের মাসিক হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হোটেল প্রবাল, লাবনীসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার অফিসের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে, যে কারণে পর্যটকদের আবাসন সংকট তৈরি হয়।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সরকারি টানা ছুটির শেষদিন শনিবার। রোববার থেকে সরকারি অফিস শুরু হবে। তাই অধিকাংশই পর্যটকই শনিবার রাতেই চলে যাবেন। ফলে রোববার থেকে কক্সবাজারে এ ধরনের চাপ থাকবে না। হোটেলেও কক্ষ পেতে পোহাতে হবে না ভোগান্তি।  

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই মৌসুমে এবারই কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সমাগম হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ পর্য়টক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক পর্যটক চলে আসায় হোটেলে রুম না পেয়ে অনেক পর্যটককে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

তবে হোটেলে রুম না পাওয়া এসব পর্যটকেরা যেখানে রাত কাটাচ্ছেন, সৈকতের চেয়ার, রাস্তা, খোলা আকাশের নিচে, বিভিন্ন বাসের ভেতরে তাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ট্যুরিস্ট পুলিশ পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
এসবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।