ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

থানচিকেন্দ্রিক পর্যটক টানবে ডিম পাথর

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
থানচিকেন্দ্রিক পর্যটক টানবে ডিম পাথর ডিম পাথরে গিয়ে জুড়াতে পারেন চোখ। ছবি: আসিফ আজিজ

বান্দরবান থেকে: ঝরনা আর জলপ্রপাতের স্বর্গ বান্দরবানের থানচি উপজেলা। নাফাখুম, অমিয়াখুম, সাতভাইখুমের মতো জলপ্রপাত রয়েছে এখানে। রয়েছে সাঙ্গু নদীর অপরূপ সৌন্দর্য কিংবা দেশের সর্বোচ্চ সড়কে রোমাঞ্চকর ভ্রমণের সুযোগ। কিন্তু যেটা নেই বা ছিল না সেটা হলো থানচি সদরকেন্দ্রিক পর্যটন।

থানচিতে এসে পর্যটকরা ঘুরতে চলে যায় সাঙ্গুনদী ধরে রেমাক্রি, তিন্দু, বড় পাথর, মোদক, আন্ধারমানিক কিংবা কেওক্রাডং। থানচিতে তাদের থাকা হয় না।

আর ভ্রমণের সময়টা যদি বর্ষাকাল হয়ে থাকে তবে ব্রিজে দাঁড়িয়ে সাঙ্গুর যৌবনবতী রূপ দেখেই ফিরতে হয়। কারণ বর্ষায় রেমাক্রির দিকে পর্যটক গমনে নিষেধাজ্ঞা থাকে নিরাপত্তার স্বার্থে। থানচি সদরে থাকার কোনো ভালো ব্যবস্থা ছিল না। আবার এখানে থেকে আশপাশে তেমন কিছু দেখা নেই বলে মনে করেন পর্যটকরা। বর্ষায় রেমাক্রির দিকে পর্যটক গমনে নিষেধাজ্ঞা থাকে নিরাপত্তার স্বার্থে।  পুরো বান্দরবানজুড়ে জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্তাব্যক্তি যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন তার সুফল ভোগ করছেন স্থানীয়রা। পর্যটনের বিকাশ মানেই অবহেলিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন। এবার বঞ্চিত হচ্ছে না থানচি সদরও। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম অন্য স্পটের পাশাপাশি অফ সিজনে সদরকেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

একজন ডিসি দিলীপ কুমার বণিক কিংবা এনডিসি হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ পর্যটন বিকাশের যে নেশা চড়িয়ে দিয়েছেন, তা প্রবাহমান এখনও। ছায়া হিসেবে তাদের সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে উত্তরসূরিদের।

থানচি সদর থেকে মাত্র আধাঘণ্টার দূরত্বের পর্যটন সম্ভাবনার একটি স্পট ডিম পাথর। থানচি বাজার থেকে পূর্ব দিকের ঝিরিটি এসে মিশেছে সাঙ্গুতে। স্পট ডিম পাথর। এই ঝিরিপথ ধরে ভোরের আলো ফুটতেই গাইড লাইটমের দেখানো পথে এগোনো। দলে আরও তিন সহকর্মী। বর্ষায় পানিতে টইটম্বুর থাকলেও গ্রীষ্মে কোথাও গোঁড়ালি কোথাও হাঁটু পানি। স্বচ্ছ সে পানিতে ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙাচিদের ছোটাছুটি দেখতে দেখতে এগিয়ে নিয়ে চললো লাইটম। এই ঝিরির পানির উপর নির্ভরশীল আশপাশের মানুষ। খাওয়া ও চাষাবাদের পানির যোগান দেয় এই ঝিরি। স্যালো মেশিন কিংবা মটরের সাহায্যে কয়েশ ফুট উপরে পানি তোলা হয়।

হাঁটার পথটি বিপজ্জনক নয়, তবে সাবধানী। হাতে ছোট একটি লাঠি নিয়ে কখনও পাড় ধরে কখনও শীতল পানিতে পা ভিজিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় নিশ্চিন্তে।  ভোরের মিষ্টি আলো আরও বুনো পাখিদের গুনগুনানি মোহনীয় করে তোলে গোটা পরিবেশ। নির্জনতা ভাঙে পানির কলকল ধ্বনি কিংবা পাখির সুরেলা কণ্ঠ। মাঝে-মধ্যে বুনো বিশালাকৃতির ডুমুর কিংবা নাম জানা কোনো ফল দৃষ্টি কাড়ে। মৃদু কথা-গল্পে শহুরে ক্লান্তি ঝেড়ে মাটি-পানির স্পর্শে মিনিট ত্রিশেক হাঁটতেই দেখা দিলো বড় ডিম্ব আকৃতির তিনটি পাথর। লাইটম বললো, আমরা ডিম পাথর এলাকায় ঢুকলাম। বড় বড় পাথর বিছানো পুরো ঝিরিজুড়ে।  আসিফ আজিজএবার সাবধানী না হয়ে উপায় নেই। ঝিরির পানিতে জেঁকে বসা স্যাঁতসেঁতে পাথরে সন্তর্পনে পা না ফেললেই সমূহ বিপদ। মূল পাথুরে এলাকায় ঢোকার মুখটি বেশ বিপজ্জনক। নামতে হয় কোমর পানিতে। না হলে পেরুতে হবে ঝুঁকি নিয়ে। কল কল পানির শব্দ জানান দিচ্ছিল পাথর ফুঁড়ে আসা সহজ নয়! একটুখানি দক্ষিণদিকে মোড় নিতেই চোখ ছানাবড়া। এতো পাথর! অসংখ্য বড় বড় পাথর বিছানো পুরো ঝিরিজুড়ে। সবগুলো প্রায় গোল ডিমের আকৃতির। এজন্য এলাকাটির নাম হয়ে গেছে ডিম পাথর। যারা বড়পাথর কিংবা নাফাকুম যেতে পারবেন না, বর্ষার সময় যাদের যাওয়া সম্ভব নয়, তারা ডিম পাথরে গিয়ে জুড়াতে পারেন চোখ। এরজন্য বেশি কষ্ট করতে হবে না। গাইড না নিয়ে নিজেই এলাকাবাসীর কাছে শুনে চলে যেতে পারেন নির্ভয়ে।  

এলাকাটি বেশি পরিচিত নয় পর্যটকদের কাছে। উপজেলা প্রশাসন পর্যটকবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, প্রচুর সংখ্যক পর্যটক প্রতিবছর থানচি সদর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যান। কেউ থানচিতে থাকেন না। তারা জানেনও না যে আশপাশেও কিছু ঘোরার জায়গা রয়েছে। যেমন ডিম পাথর। আমরা চেষ্টা করছি এই স্পটটি পরিচিত করার। ডিম পাহাড়ে‘আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে ডিম পাথর পেরিয়ে ঝরনাটি কেন্দ্র করে। ঝরনা উপভোগের জন্য আমরা ভিউ পয়েন্ট ও বসার জায়গা করে দেবো। বর্ষাকালেও যেন যাওয়া যায়, পাহাড় থেকে নামতে সমস্যা না হয় সেজন্য পোর্টেবল সিঁড়ি বানিয়ে দেবো। জায়গাটি সুন্দর। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্পটটি একটু সাজাতে পারলে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক শুধু ডিম পাথর দেখতে আসবেন বলে বিশ্বাস। ’

ডিম পাথর ছাড়াও সদর থেকে স্বল্প দূরত্বের কিছু ঝরনা ও ডিম পাহাড়ে সবচেয়ে উঁচু সড়ক কেন্দ্র করে গড়ে তুলতে যাওয়া পর্যটন কেন্দ্র থানচি সদরকেন্দ্রিক পর্যটনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

যাতায়াত:
ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, শ্যামলী থেকে সৌদিয়া, ইউনিক, ঈগলসহ বেশ কয়েকটি বাস প্রতিদিন বান্দরবান যায়। ভাড়া ৬০০-৬৫০ টাকা। চাইলে ট্রেনে চট্টগ্রাম হয়েও যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানগামী পূরবী বাসে ভাড়া নেবে ১২০ টাকা। উঠতে হবে বহদ্দার হাট থেকে। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার কিছু বেশি। বান্দরবান সদর থেকে লোকাক বাসে ৮০ কিমি দূরের থানচি যেতে সময় লাগবে ৪ ঘণ্টার কিছু বেশি। ভাড়া ২০০ টাকা। থাকতে পারেন থানচি কুটির, উপজেলা রেস্ট হাউস, বিজিবি পরিচালিত কটেজ কিংবা বাজারে আরও দু’তিনটি হোটেলে। ভাড়া গুনতে হবে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। বিজিবির কটেজে ভাড়া বেশি। শান্তি কুটিরে ঘরোয়া পরিবেশে খাবার খেতে পারবেন ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। তবে আগে অর্ডার করলে সাঙ্গুর সুস্বাদু মাছও মিলতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।