ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

বাংলাদেশকে বুলেট ট্রেনের যুগে দেখতে চান আবেদ মনসুর

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
বাংলাদেশকে বুলেট ট্রেনের যুগে দেখতে চান আবেদ মনসুর আবেদ মনসুর/ছবি: বাংলানিউজ

চীনের সেনজেন সিটি থেকে: বুলেট ট্রেনে চীনের সুজো থেকে সাংহাই ফিরছেন এক স্বপ্নবাজ। সঙ্গে ব্যবসায়ী বন্ধু জিমি। নিজের দেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন তার। উন্নত, পরিচ্ছন্ন, গোছালো দেশ তার সব সময়ের চাওয়া। যাত্রাপথেই বললেন, ‘এই ট্রেন আমি বাংলাদেশে নিয়ে যেতে চাই।’ 

বাংলাদেশকে বুলেট ট্রেনের যুগে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা এ ব্যক্তির নাম আবেদ মনসুর। তার অনেক স্বপ্নের প্রথম ধাপ বনানী-বিমানবন্দর সড়ক।

এ সড়কটি সাংহাই-হংকংয়ের মতো সাজিয়ে দিতে নিজস্ব প্রায় ১০০ কোটি টাকার বিউটিফিকেশনের কাজ করছেন তিনি। সড়কটির ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি ও সার্ভিস স্টেশন সুবিধা চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে তার মত।  

বনানী-বিমানবন্দর ৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নত বিশ্বের মতো হবে আর কিছুদিন পরেই। পুরো ঢাকা ঘিরেও এমন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন ভিনাইল ওয়ার্ল্ড-এর সিইও আবেদ মনসুর।

ঢাকার রেলস্টেশন, এয়ারপোর্টও বিউটিফিকেশনের ইচ্ছা তার। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনকে সাংহাই রেলস্টেশনের মতো আধুনিক সুবিধায় নিয়ে আসতে পরিকল্পনা করেছেন তিনি।  

চীনের একটি নির্মিয়মাণ যাত্রী ছাউনিসড়কপথ নির্মাণ ও মেরামতে যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এখন বিশ্বে চলছে তার খোঁজে গত এক সপ্তাহ থেকে চীনে ঘুরছেন আবেদ মনসুর। নতুন নতুন প্রযুক্তি আর দেশের জন্য নতুন কোনো উদ্যোগের প্রচেষ্টায় এর আগে চীনে এসেছেন কুড়িবারের বেশি। দেশে নতুন কোনো সেবা বা প্রযুক্তি সুবিধা চালু করতে পারলেই তার আনন্দ।  

তার ভাষায় ‘বিদেশ যা করছে তা আমরা করতে দোষ কোথায়। শুধু আমদানি নয়, দরকার হলে প্রযুক্তি কিনে নিয়ে দেশেই তৈরি ও উৎপাদন করবো। ’ 

সেন‌জেন সি‌টি থে‌কে শ‌নিবার বি‌কে‌লেই তি‌নি চলে যা‌চ্ছেন জার্মানিতে। সিমকার্ড ও স্ক্রাচকা‌র্ডের নতুন কিছু প্রযু‌ক্তি বাংলা‌দে‌শে শুরু কর‌তে যা‌চ্ছেন। এখা‌নে তার ব্যস্ততা এতোই বে‌শি যে শহরটা ঘু‌রে ‌দেখার সময় হয়ে‌ ওঠেনি। শুধু সড়কের পা‌শে গোছা‌নো শহ‌রের ক‌য়েক‌টি নমুনা তুলে ধ‌রে বল‌ছি‌লেন, এটা এ‌তো কঠিন কোনো কাজ নয়। আমা‌দের দেশ‌কে এমন কিছু উ‌দ্যো‌গে বদ‌লে দি‌তে পা‌রি।

দেশের জন্য তার কাজের প্রয়াস শুধু সড়কে সীমাবদ্ধ নয়। চ্যালেঞ্জ নিতে চান আরও। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে এবার যে ক'জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহ জানিয়েছেন তাদের একজন আবেদ মনসুর। অনেকের মতো পোস্টার লাগিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় যাননি তিনি। পোস্টার দিয়ে শহর নোংরা নয়, বরং পোস্টারের বদলে বিমানবন্দর সড়কপথ পোস্টারমুক্ত করতে ব্যয় করছেন নিজের অর্থ। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে তিনি মেয়র প্রার্থী হবেন নতুবা নয়- সুস্পষ্টভাবে এ মত জানালেন আবেদ মনসুর।

চীনের সিলিকন ভ্যালি খ্যাত সেনজেন সিটিতে এসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে তিনি আরও জানান, সেনজেনের মতো পরিকল্পিত, সাজানো, গোছানো ছবির মতো একটি সিটি ঢাকা চান তিনি। যার এক টুকরো এখনই করে দেখাচ্ছেন বনানী বিমানবন্দর সড়কে। এখানে সড়কের ধারে বিশ্বমানের সব যাত্রী সুবিধা আর কয়েকদিন পর থেকেই মিলবে।  

দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথ ঘিরে সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা তার। বিশ্বে প্রশস্ত ও দীর্ঘ সড়কপথ নির্মাণে চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের তৈরি সড়কপ্রযুক্তি নিচ্ছে।

আবেদ মনসুর এসব যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি বাংলাদেশে আনছেন। তার উদ্যোগে বাংলাদেশ পাচ্ছে 'প্রথম ডিজিটাল সড়ক', 'ডিজিটাল যাত্রী ছাউনি। ' 

চীনে আবেদ মনসুরসড়কের গর্ত মেরামত, সড়ক পরিচ্ছন্ন রাখার নবপ্রযুক্তিও তিনি বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। এতে সড়ক মেরামতে দীর্ঘসূত্রিতা আর অতিরিক্ত ব্যয় কমবে বলে জানিয়েছেন আবেদ মনসুর।  

তিনি জানান, প্রথমবারের মতো 'পথহোল' মেশিন তিনি আনছেন যা দিয়ে খুব দ্রত সড়কের একটি গর্ত নিমিষে মিলিয়ে ফেলা যাবে। আবার সড়কে 'রোড মার্কিং মেশিন' ও সরঞ্জামাদী তিনি নিয়ে গেছেন দেশে, যা দিয়ে নির্ভুল রোড মার্কিং করা যাবে। এটা দিয়ে ‘রিফ্লেকটিভ রোড মার্কিং' করা হবে। সড়কের ধুলোবালি তুলে নেওয়ার আরেকটি যন্ত্র 'ডাস্ট স্যাকার' মেশিন তিনি এনেছেন যা দেশে আর কোথাও এখনও দেখা যায়নি। বিমানবন্দর সড়কে এটি ব্যবহৃত হবে।  

তার পরিকল্পনায় বিমানবন্দর সড়কে যে ১২টি যাত্রী ছাউনি বসানো হচ্ছে তা চীনের চেয়েও আধুনিক। হংকং সিটিতে এমন যাত্রী ছাউনি তিনি প্রথম দেখেছিলেন। তার মতে, এটা শুধু যাত্রী ছাউনি হবে না; একই সঙ্গে হবে মোবাইল ও ল্যাপটপ চার্জিং স্টেশন। সঙ্গে থাকবে ডিজিটাল ডাস্টবিন, যেখানে ডাস্টবিন ও তাপমাত্রা প্রদর্শন করবে মনিটর। সঙ্গে থাকা সার্ভিস স্টেশনে ওয়াশরুম, ভেন্ডার মেশিন, পুলিশবুথও থাকবে।  

পুরো বনানী বিমানবন্দর সড়কপথ থাকবে সার্বক্ষণিক বিনামূল্যে  ওয়াইফাই সেবার আওতায়। পুরো সড়কপথের ফুটপাত ধরে পার্কের মতো হাঁটবেন মানুষ। ফুটপাতের দেয়াল থাকবে সবুজে আচ্ছাদিত। আর এতে সরকারের কোনো টাকা ব্যয় হচ্ছে না। সব বহন করছে তার নিজের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।