ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলা-ওড়িশা হয়ে হায়দ্রাবাদের পথে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
বাংলা-ওড়িশা হয়ে হায়দ্রাবাদের পথে ফালাকনুমা এক্সপ্রেসের ভিতরে যাত্রীরা/ছবি: বাংলানিউজ

ফালাকনুমা এক্সপ্রেস থেকে: শুধু বিহারটাই বাদ গেলো। নাহলে সিরাজ উদ-দৌলার বাংলা-বিহার-ওড়িশা কথাটি লেখা যেত। ছোটবেলায় সিনেমার সিরাজ আনোয়ার হোসেনের দরাজ কণ্ঠে বাংলা-বিহার-ওড়িশা শুনে শুনে অঞ্চলগুলোর প্রতি ঐতিহাসিক এক মায়া কাজ করে।

মোবাইল অপারেটরের 'ওয়েলকাম টু ওড়িশা' মেসেজ পেয়ে তাই সিরাজ আর তার রাজ্যপাটের কথা মনে পড়ে গেলো।  

ফালাকনুমা এক্সপ্রেস বিহার ঘুরে যায় না।

তার গণ্ডি হাওড়া স্টেশন টু সেকান্দারবাদ জংশন। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্যে ঢোকে। হায়দ্রাবাদ তেলেঙ্গানার রাজধানী।

সপ্তাহে সাতদিনই সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। সোমবারও (৭ আগস্ট) ব্যতিক্রম হয়নি। দূরপাল্লার ট্রেনগুলো সাধারণত হাওড়ার ২য় কমপ্লেক্স থেকে ছেড়ে যায়। এটি মেইন কমপ্লেক্সের পেছনের দিকটায়। এদিন ফালাকনুমা পেয়েছিল ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম।

হাওড়া স্টেশন/ছবি: বাংলানিউজহাওড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনের এলাহী ব্যাপার। ভারতের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে কমপ্লেক্স এবং বড় স্টেশনের মুকুট তার মাথায়। ১৬৩ বছরের পুরনো এ স্টেশনটির প্ল্যাটফর্ম সংখ্যা ২৩ ও ট্র্যাক ২৬টি।

দিন-রাত গমগমে স্টেশন। ট্রেন আসছে-যাচ্ছে। মানুষ নামছে-উঠছে। ট্রেন ধরতে যখন বেরোই তখনও কলকাতা জাগেনি। হকাররা রাস্তার ধারে পেপার ভাজ করছে। কিন্তু স্টেশনে ঢুকে সেটি বোঝার জো নেই। রীতিমতো মানুষের হাট। কেউ শুয়ে, কেউ বসে-- একেকজন মানুষ একেকটি আলাদা গল্প।

স্টেশন রোডের সকাল/ছবি: বাংলানিউজনির্ধারিত সময়ের আগেই প্ল্যাটফর্মে ছিলো ফালাকনুমা, ছাড়েও নির্ধারিত সময়ে। ফালাকনুমা নামটি এসেছে 'ফালাকনুমা প্যালেস' থেকে। উর্দু ফালাকনুমা শব্দের অর্থ আকাশের মতো বা আকাশের আয়না। পয়গাহ পরিবারের এ প্রাসাদটি পরে হায়দ্রাবাদের নিজামের মালিকানায় আসে। সে গল্প অন্যদিন।

ফালাকনুমা এক্সপ্রেসে ফেরা যাক। সুপার ফাস্ট ট্রেনটি হায়দ্রাবাদ পৌঁছাতে সময় নেয় ২৬ ঘণ্টা, অর্থাৎ পৌঁছাবে মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ। এতে সব মিলে বগি রয়েছে ২৪টি, প্যাসেঞ্জার বগি ২১টি। এর মধ্যে এসি বগি ৫টি, নন এসি স্লিপার বগি ১৩টি ও জেনারেল বগি ৩টি।

ভাড়া ওয়ান টায়ার এসি ৪১৪৫ রুপি, টু-টায়ার এসি ২৪২৭ রুপি, থ্রি-টায়ার এসি ১৬৭৫ রুপি, নন এসি স্লিপার ৬৩০ রুপি ও জেনারেল ৩৫৪ রুপি।  

হাওড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম/ছবি: বাংলানউজট্রেনে চেপেই একদিনের সংসার পেতে নিয়েছেন কেউ কেউ। বাড়ি থেকে কোনো জিনিস আনতে বোধহয় বাকি নেই। যতো সময় গড়াচ্ছে ততো পোটলা বেরোচ্ছে। কেউ চেপেই বিছানা পেতে সেই যে ঘুম দিয়েছে, ওঠার নাম নেই। ট্রেনে-বাসে এক টাইপের লোক থাকে যারা হকার যে জিনিসই আনুক না কেন, কিনতে থাকে-- এখানেও রয়েছে। দুটো বাচ্চা নিজেদের মতো খেলছে। ছোটখাটো পাড়া যেনো। একদিনের পাড়া, একদিনের প্রতিবেশী।

ফালাকনুমা এক্সপ্রেস ছুটে চলে শ' ছুঁই ছুঁই গতিতে। তার সর্বোচ্চ গতি অবশ্য ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। বিরামহীন ঝিঁঝিঁ পোকার মতো ঝিক ঝিক আওয়াজ তুলে ট্রেন এগোয়। মৃদু দুলুনিতে ঘুম আসে। অবাঙালি হকারদের 'চায়ে চায়ে গারাম' 'চায়ে চায়ে গারাম' হাকে তন্দ্রা কাটে।

**ট্রেন ধরার তাড়াহুড়ো পেরোয় ‘হাওড়া’ ব্রিজ

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৭
এসএনএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।