ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

আড়াইশ বছর আগের ভূমিকম্প প্রতিরোধক জমিদার বাড়ি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
আড়াইশ বছর আগের ভূমিকম্প প্রতিরোধক জমিদার বাড়ি ছবি- আসিফ আজিজ/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

বাগেরহাট থেকে: ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ মন্দির, মসজিদ, জমিদারবাড়ি- সবই আছে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়। এসব স্থাপনার প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য কম নয়। তাই উপজেলার অলিগলি চষে বেড়ানো। জোড়া শিবমন্দির, প্রাচীন স্কুল দেখে বিকেলে গন্তব্য জমিদারবাড়ি।

শুনেছি জমিদার ছিলেন প্রজাবান্ধব। হয়তো বাড়িতেও তার কোনো ছাপ পাওয়া যাবে- এ আশা নিয়ে শুরু আষ্টে গন্ধভরা জমিদার বাড়ি।



প্রায় আড়াইশ’ বছর আগের তৈরি এ বাড়িটি জেলার ফকিরহাট উপজেলার টাউন নওয়াপাড়ায় অবস্থিত। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বাড়িটি দেখার উদ্দেশ্যে টাউন নওয়াপাড়ার আমতলার দিকে পা বাড়াতেই প্রথমে পড়লো লোহার সিলিংয়ে উপর কাঠের জোড়াতালি দেওয়া (পুল) ব্রিজ।

পাশেই নারকেলের গুদাম। ব্রিজটি পার হয়ে রকমারি গাছ-গাছালি বেষ্টিত বাড়ি। বাড়িতে রয়েছে ১শ’ বছরের পুরনো দু’টি গাছ। একটি খেজুর, অন্যটি চাঁপাফুল। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর১০ একর জমির ওপর রয়েছে তিনটি ভবন। বাড়িটির প্রবেশ পথ দোতলা বিশিষ্ট সদর ভবনের মাঝ দিয়ে। যা কাছারি ভবন হিসেবে পরিচিত। কারুকার‌্য খচিত ভবনটির ইটগুলো ক্ষয়ে পড়ছে। কাছারিতে এখন আর কেউ বসবাস করে না। দখল করে আছে কিছু আগাছা।

ভবনটির পাশে লাগোয়া আরেকটি ভবন। অতিথিদের জন্য তৈরি একতলা ভবনে এখন সপরিবারে বসবাস করছেন জমিদারে চতুর্থ পুরুষ মিলন ঘোষ।

এর পেছনে রয়েছে দোতলা বিশিষ্ট আরও একটি ভবন। ভবনটির ভূমিকস্প প্রতিরোধক বলেই জনশ্রুতি রয়েছে। এ বাড়িতেই থাকতেন জমিদার, এখন একজন সেবক থাকেন। পাশেই রয়েছে ৫ বিঘা জমির ওপর পুকুর। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

স্থানীয় বাসিন্দা অমিত মন্ডল জানান, জমিদার তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতেন। তার নাম নীলা। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে স্ত্রী নীলার জন্য ১৩৪৮ সনে একটি পুকুর কাট‍ান।  ‘নীল সরোবর’ নাম দেন।

নীল সরোবরের পাশেই বসে এখন পানহাট বাজার, বাজারটি বকুল ও বটগাছ ঘেরা। তার ঠিক উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থিত পুকুরটিতে দু’টি ঘাট থাকলেও এখন একটি ঘাট অবশিষ্ট রয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা ললিতা মিত্র জানান, জমিদার নিজের পরিবারের সদস্যদের যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি তার এলাকার প্রজা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালোবাসতেন। তাই তিনি বাড়ির পাশেই কর্মচারীদের নামে অনেক সম্পদ লিখে দিয়েছেন। ফলে একটির নাম হয়েছে ঝাড়ুদার পাড়া। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

তিনি শুধু কর্মকর্তা নন, দরিদ্র মানুষের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করেছেন। এই কেন্দ্রে এখন ইউনিয়ন উপজেলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, তিনি এই দেশ ত্যাগ করে যাওয়ার সময় ‘লক্ষ্মী নারায়ণ’ দেবতার নামে তার সমস্ত সম্পদ দেবোত্তর করে যান।

এই জমিদারের নাম শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বাগেরহাটের ফকিরহাট, মোল্লাহাট, রামপাল, মংলা, ডুমুরিয়া, কয়রা, বাটিয়া ঘাট অঞ্চলগুলোর জমিদার ছিলেন। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

জমিদার চলে যাওয়ার পর এখন এই বাড়িতে বসবাস করছেন ৮০ বছর বয়সী পুরোহিত ও তার পরিবার-পরিজন। পুরোহিত রবীন ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে জানান, দুই ছেলেসহ এখানে তারা সবাই বসবাস করেন। এই জমি জমিদার তাদের দিয়েছেন।

নিজেকে জমিদারের চতুর্থ পুরুষ দাবি করে মিলন ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, ২ থেকে আড়‍াই শ’ বছর আগের জমিদার তার বাড়ি ছেড়ে ১৯৫২ সালে ভারতে চলে যান। যাওয়ার সময় তার এই সমস্ত সম্পত্তি দেবতার নামে লিখে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, একাধিকবার বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু বাড়িটির মালিকানা নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলায় রক্ষনাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

বাগেরহাট থেকে এই জমিদার বাড়ি আসতে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়া মোড়ে নামতে হবে। এরপর টাউন নওয়াপাড়া থেকে কা‍ঁটাখালী যেতে আমতলা বাজারের উত্তর পাশে অবস্থিত জমিদার বাড়ি। বাস যাতায়াত করলে খরচ হবে ৩৫ টাকা।

আরও পড়ুন

**খান জাহান-সুন্দরবনের বাগেরহাটে আসবেন যেভাবে
** পাটুরিয়া ঘাটের অপেক্ষা-বিরতিতে খাবার-দাবার

সহযোগিতায়
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এমএফআই/এএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।