ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

জলের ওপর বসতভিটে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
জলের ওপর বসতভিটে ছবি: আবু বকর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাঙামাটি থেকে: রাঙামাটি শহর থেকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্দেশে যাত্রা। পথে কাপ্তাই হ্রদের ঝগড়বিল-বড়াদম সংযোগ সেতুতে গিয়ে থামলো গাড়ি।

চালক বললেন, ব্রিজে দাঁড়িয়ে মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে পারেন, কোনো ছবি তুললেও তুলতে পারেন। ছবি তুলতে নামতেই হায় হায় রব পড়লো যেন। বৃষ্টি নেই, বর্ষা নেই, ওই দূরের বাড়িটা ডুবে গেল যে! ওমা, দূরে তো আরও ক’টা বাড়ি দেখা যায়, ডুবে গেছে বুঝি!

 

সেতুর ঝগড়বিল অংশে গোসল করছিলেন অজিত তনচঙ্গা। তিনিই থামালেন হায় হায় রব। বললেন, আরে ওসব বাড়ি ডোবেনি। বাড়িগুলোই এমন। টিলার ওপর। এই টিলা খুব বড় কোনো দুর্যোগ না হলে ডোবে না। সারা কাপ্তাই হ্রদে এমন অসংখ্য বসতভিটে আছে।
 
জানা যায়, ষাটের দশকে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের (বর্তমানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র) জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ নির্মাণের ফলে কিছু সমতল এলাকা ডুবে যায়। তবে মাথা উঁচু করে থেকে যায় টিলার গ্রামগুলো। সেই গ্রাম বা বাড়িগুলোই এখন ভাসমান ভিটে।
অজিত তনচঙ্গার সঙ্গে আলাপ হলো এমন বসতভিটের জীবন-যাত্রা নিয়ে। অজিতের এক মামাতো ভাইয়েরও বাড়ি আছে এমন। সেই বাড়িতে যাতায়াতের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
 
অজিতের ভাষ্য অনুযায়ী, বাড়িগুলোতে পানি ওঠে না, কারণ কাপ্তাই হ্রদে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি জমা থাকে। সে বর্ষা হলেও। আর এসব বাড়িতে যারা থাকেন, তাদের যাতায়াত বা যোগাযোগটা পুরোপুরি নৌকানির্ভর।

স্কুল-কলেজ-অফিসগামীরাও যাতায়াত করেন নৌকায়। সাধারণত সন্ধ্যে গড়ানোর আগেই বাড়ির লোকেরা ঘরে ফেরেন।
ঝগড়বিলের বাসিন্দা অজিত বলেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িরই নৌকা আছে। এদের কেউ পেশায় জেলে, কেউ জুম চাষি। নৌকায় যাতায়াত করেন। তারা এমন জীবন-যাপনেই অভ্যস্ত।
 
সেতুর ঝগড়বিল প্রান্তে ডাব বিক্রি করছিলেন রঞ্জন তনচঙ্গা। তিনি বললেন হ্রদ আর পাহাড়ি পথের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা। বললেন হ্রদের টিলা বাড়িগুলোর মানুষের জীবনযাত্রার কথা।
 
রঞ্জন বলেন, পুরো লেক ঘিরে থাকা রাস্তাগুলো অনিন্দ্য সুন্দর। সামনে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, কোথাও গাছ বেড়ে সড়কে এসে পড়ার কারণে পথটাকে সুড়ঙ্গের মতো মনে হবে। এই সৌন্দর্য দেখতে এখন নিয়মিতই পর্যটকরা রাঙামাটি ছুটে আসছেন।
হ্রদের বুকে মাথা উঁচু করে থাকা বাড়িগুলোর মানুষের জীবনযাত্রা অন্য পাহাড়িদের মতোই স্বাভাবিক বলে জানান রঞ্জন। তিনি বলেন, এদের বেশিরভাগই জেলে। তাদের সন্তানদের কেউ স্কুলে পড়ে, কেউ হয়তো পূর্বসুরীর পেশায় নেমে পড়ে।
 
দিনের আলোতে হ্রদের বাড়িগুলো কেবল ভাসমান মনে হলেও সন্ধ্যে নামতেই চাঁদের আলোয় বসতিভিটেগুলো রূপ নেয় অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপে। সেই রূপ দেখা গেল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘুরে ফেরার পথেই, যে অনুভূতির প্রকাশ “হ্রদের জলে কার ছায়া গো!” প্রতিবেদনে।

** হ্রদের জলে কার ছায়া গো!
** সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও)
** সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ
** মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ
**নট ইউজিং ‘ইউজ মি’

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এইচএ/এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।