ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

লেকের দু’ধারে প্রকৃতির সঙ্গে রোমাঞ্চ!

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
লেকের দু’ধারে প্রকৃতির সঙ্গে রোমাঞ্চ! ছবি: শামীম হোসেন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরকল (রাঙামাটি) থেকে: মাথার উপর খেলা করছে সূর্যরাশি ও নীলাভ মেঘমালা। নিচে অবিরাম বয়ে চলা শান্ত হ্রদের কূল-কূল শব্দ।

চারপাশে এই পাহাড় তো এই জনপদ।
 
পাহাড়ের সঙ্গে বিস্তীর্ণ জলরাশি আর মেঘ মল্লিকার এ মিতালি চর্মচক্ষে দেখতে হলে আসতে হবে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ হয়ে পানির রাজ্য বরকল উপজেলায়।
 
পর্যটকরা সবসময় রোমাঞ্চকর ভ্রমণ পছন্দ করেন এটা সত্য। সেই রোমাঞ্চ যদি হয় প্রকৃতির সাথে, তাহলে তো কথাই নেই। পর্যটনের শহর রাঙামাটির থেকে বরকল যাওয়ার পথে পর্যটকরা এমনই রোমাঞ্চকর ভ্রমণের অনূভূতি পাবেন এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার নৌ টার্মিনাল থেকে লঞ্চে করে বরকল যেতে পারেন পর্যটকরা। এর কোনো বিকল্প মানে সড়ক পথ নেই। নৌ পথে যেতে যেতে খরস্রোতা কর্ণফুলীর কাপ্তাই লেকের বিস্তীর্ণ জলরাশির দু’ধারে পাহাড়-বন প্রাকৃতিক ঝরনার যে সৌন্দর্য তা যেকোনো পর্যটককে মন্ত্রমুগ্ধ করবে।  

এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যতটা না বর্ণনার তার চেয়ে বেশি অনুভূতি আর উপলদ্ধির। প্রকৃতির ভাজে ভাজে কত রকমের যে লুকায়িত সৌন্দর্য আছে চর্মচোখে বরকলের পথের পানির রাজ্যের সৌন্দর্য না দেখলে বোঝানো যাবে না। যতোদূর চোখ যায় মেঘছোয়া পাহাড় আর বিস্তীর্ণ জলরাশি। আর মেঘ-পাহাড় দেখা যেন শেষই হতে চায় না।   মাছের অভয়াশ্রম কাপ্তাই লেকে জেলেদের ছোট-বড় ডিঙ্গি নৌকায় করে মাছ ধরার দৃশ্য সবার নজর কাড়বে।
বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, ১৯২৩ সালে খরস্রোতা নদী কর্ণফুলি নদী পাড়ে এ উপজেলা। এ উপজেলার নামকরণেও অন্যান্য উপজেলা বা থানার মতো বিভিন্ন ধরনের মিথ বা লোকগাথা চালু আছে। এ এলাকায় ছোট-বড় অনেক পাহাড়ি ঝরনা থাকায় দূর থেকে পানি পড়ার শব্দ শোনা যেত। সেজন্য এখানে বসবাসকারীরা মনে করতো কোনো বড় যন্ত্রের শব্দ হচ্ছে। সেই থেকে এর নাম দেওয়া হয়েছে বরকল।

রাঙামাটি শহর থেকে এ উপজেলায় বা থানায় যেতে হলে একমাত্র নৌপথই ভরসা। সেক্ষেত্রে আপনি রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে লঞ্চে করে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে বরকল পৌঁছাতে পারবেন।

লঞ্চে যেতে যেতে দু’পাশের যে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কোনো পর্যটককেই আকৃষ্ট করবে।

যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি সরু চ্যানেল চোখে পড়বে। যাদের থাইল্যান্ড বা অন্যকোনো দেশে পাহাড়ি নদীপথে ঘোরার অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা ভাল বুঝতে পারবেন। সু-উচ্চ দু’টি পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু চ্যানেল দেখতে জেসম বন্ড আইল্যান্ড বা বিদেশ যেতে হবে। আমাদের নিজ দেশেই এমন দৃশ্য দেখা যায়। আর সেটা বরকল যেতে কয়েকবার চোখে পড়বে।

আর লঞ্চ চলার শব্দের সঙ্গে আশপাশের কয়েকটি ঝরনার ঝিরিঝিরি শব্দও শুনতে পাবেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে যখর পাহাড়ি পানির প্রবাহ বেশি থাকে।
এ উপজেলার সব শেষ প্রান্ত পূর্বে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা। এছাড়া উত্তরে বাঘাইছড়ি,দক্ষিণে জুরাছড়ি, পশ্চিমে লংগদু ও রাঙামাটি সদর।
এখানকার পাহাড়গুলো দেখতে পাথরের মতো মনে হলেও মূলত বেলে পাথর দিয়ে গঠিত। আবার কোথাও কোথাও মাটির মতো মনে হবে উপরে মাটির স্তর থাকলেও ভিতরে পাথরে স্তর সারি সারি সাজানো। রাঙ্গামাটি জেলার বড় বড় পাহাড়গুলো এ অঞ্চলে অবস্থিত। তবে ভেতরে খুঁড়ে দেখলে পাথর বের হয়ে আসবে।
 
এই পাথরের কারণেই এখানে পানির খুব সঙ্কট। জানা গেছে সরকার এবং বিভিন্ন এনজির পক্ষ থেকে অনেকবার টিউবওয়েল বসানো চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তবে পূর্ব দিকের কয়েকটি ইউনিয়নে টিউবওয়েল বসানো গেছে।

বরকলে নেই কোনো পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা। ফলে বাইরে থেকে পর্যটক খুব কমই আসেন, যাওবা আসেন লঞ্চের সঙ্গে সময়ের হিসেব কষে ফিরতে হয় তাদের। এখানে  বড় সমস্যা এখানে গাড়ি বা যান চলাচলের কোনো রাস্তা নেই। উপজেলার মধ্যে সব মিলিয়ে ৩ কিলোমিটারের মতো রাস্তা চোখে পড়বে। তবে নেই কোনো যানবাহন।

** ঝুলন্ত ব্রিজ পার্কের অব্যবস্থাপনায় বিরক্ত পর্যটক
** মেঘ-পাহাড়ের অকৃপণ সৌন্দর্যের আধার খাগড়াছড়ি
** পর্যটকদের কাছে খাগড়াছড়ির ফল-সবজির কদর
**অনাবিল শান্তি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এসএইচ/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।