ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও) ছবি: ডি এইচ বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাজেক (বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি) ঘুরে: পাহাড়ি পথ উঁচু-নিচু, উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মতো। চট্টগ্রাম থেকে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, মানিকছড়ি, রামগড় ঘুরে খাগড়াছড়ি শহরে আসার সময়ই তা টের পাওয়া গেলো বেশ।

কিন্তু খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালার ওপর দিয়ে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলার সাজেক ভ্যালি যেতে যে পাহাড়ি সড়ক পেরোতে হলো, তা কেবল উঁচু-নিচু আর উথাল-পাথাল ঢেউয়ের শব্দমালা দিয়ে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। বিশেষত কাসালং ব্রিজের পর থেকে সাজেক পৌঁছানো পর্যন্ত সড়কের প্রত্যেকটি পাহাড় যেন ছিল আকাশছোঁয়ার প্রতিযোগিতায়।

দেশের এই সময়ের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন স্পট প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার সাজেকে যেতে সড়কের ভার নেওয়া পাহাড়গুলোর এমনই প্রতিযোগিতা চোখে লাগবে যে কারও। আবার কারও কাছে এই প্রতিযোগিতা অ্যাডভেঞ্চার জাগানোর ‘রাইডিং ওয়ে’ মনে হলে সেটাও বোধ হয় ভুল হবে না।
 
পর্যটকদের উদ্দীপনা-উচ্ছ্বাস থাকে প্রায় আঠারো শ’ ফুট উঁচু পাহাড়ে গড়ে ওঠা সাজেক ভ্যালি নিয়ে। যেখানে ঢেউ খেলছে ঘন সবুজ অরণ্যের সারি সারি পাহাড়, আর সেই পাহাড়ে উড়ছে ধূসর এবং দুধসাদা মেঘ। কিন্তু এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতি একমুখী আকর্ষণ-আগ্রহ কেড়ে নেয় সর্পিল এই ছন্দের সড়ক।
 
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে হয় দীঘিনালা সেনা ক্যাম্প হয়ে। এখান থেকে অনুমতি নেওয়ার পর ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও সেনা ক্যাম্প। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে রওয়ানা দিলেই মুগ্ধতা-মোহাবেশের পালা। প্রথমে দুই নদীর সংযোগস্থলে  তৈরি কাসালং ব্রিজ, এরপর টাইগার টিলা সেনা পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজার পার হলেই সাজেককে ঘিরে গড়ে ওঠা রুইলুইপাড়া পর্যটন এলাকা।
 
বিশেষত কাসালং ব্রিজের পর সড়কপথটাকে মনে হয়, এই আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে তো, এই গভীর গিরিখাদে চলে যাচ্ছে। এই U টার্ন নিচ্ছে তো, এই নিচ্ছে S এর টার্ন, এমনকি একবার একেবারে ইংরেজি ‘O’ বর্ণের মতো চক্রেই ঘুরতে থেকে গাড়ি।   মাসালং বাজারের আগে দু’টি পাহাড় বেয়ে ওঠার সময় শেষ পর্যন্ত গাড়িচালককে যাত্রী অর্ধেক নামিয়েই উঠতে হয় ওপরে।
 
এতো উঁচুতে ওঠার পর গাড়ি যখন আবার ঢেউ খেলার মতো নিচে নামতে থাকে, তখন ব্রেক নিয়ন্ত্রণে রেখে ধীরে ধীরে নামার পরিবর্তে যেন উড়তে থাকে সেই গাড়ি। চালকও যেন কেবল চেয়ে থাকেন। তার কিছু করার জো থাকে না, যখন নামার সঙ্গে সঙ্গেই সামনে আরও উঁচু পাহাড়টা ডিঙোনোর চ্যালেঞ্জে লড়ার প্রস্তুতি নিতে হয়।
 
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরত্বের সাজেকের পুরো পথটা এই ধরনের চ্যালেঞ্জে কাটলেও রুদ্ধশ্বাস অবস্থা যায় বাঘাইহাট থেকে পরবর্তী ৩৪ কিলোমিটার সড়ক। সেজন্যই যেন পর্যটকদের মুখে শোনা যায়, হৃদযন্ত্র কারও দুর্বল থাকলে তার এই পাহাড়ি রাস্তায় পা বাড়ানোর ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো।
 
অবশ্য, এতো যুদ্ধ ও রুদ্ধশ্বাস ‘অ্যাডভেঞ্চারাস রাইডিং ওয়ে’ পাড়ি দেওয়ার পর পা যখন পড়বে রুইলুইপাড়া পর্যটন এলাকায়, তখন দূরের পাহাড়ের মেঘ ছুঁয়ে আসা বাতাসের শীতল পরশ ভুলিয়ে দেবে সব ক্লান্তি-পরিশ্রান্তিকে। হয়তো এ শীতল পরশই সাজেকে  পৌঁছানোর যুদ্ধকে নস্যি করে দেয় পর্যটকদের কাছে।

**সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ
** মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ
**নট ইউজিং ‘ইউজ মি’
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।