ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পর্যটকদের কাছে খাগড়াছড়ির ফল-সবজির কদর

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
পর্যটকদের কাছে খাগড়াছড়ির ফল-সবজির কদর

খাগড়াছড়ি সদর থেকে: খাগড়াছড়িতে পৌঁছে পর্যটকদের বাস থেকে নামতে হয় পৌরসভা গেট অথবা শাপলা চত্বরে। সেখান থেকে একটু সামনে এগোলে হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের বাজার।

এখানে সপ্তাহে দু’দিন বাজার বসে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার পূর্ণদিবস এবং মঙ্গলবার অর্ধদিবস।

তবে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ি-বাঙালিদের ডাকে হরতাল থাকায় বাজারে লোক সমাগম অন্যদিনের চেয়ে কম। এ কারণে ভোর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পায়ে হেঁটে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এসেছেন জুম চাষিরা।
যারা বাজারে কাঁচা সবজি ফল নিয়ে আসে এদের অধিকাংশ পাহাড়ি। স্থানীয়ভাবে এদের ত্রিপুরা বলে থাকে। এ বাজারের দোকানিদের অধিকাংশই ত্রিপুরা-পাহাড়ি নারী। তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি-ফল নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে।

দোকানিদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পর্যটকরা। জানতে চাইলেই খুব আনন্দের সঙ্গে পাহাড়ি বিভিন্ন জাতের সবজি ও ফলের বর্ণনা দিচ্ছেন তারা। তবে কেউ কেউ বেচা-বিক্রির বাইরে বাড়তি কথা বলতে নারাজ। তবুও তাদের মধ্যে পর্যটকদের জন্য আন্তরিকতার অভাব নেই।

নানান রকম কেমিক্যাল ও ফরমালিন মেশানো ফল খেয়ে যারা অভ্যস্ত, তারা সবুজ পাহাড়ে এসে একটু প্রাকৃতিক ফল-সবজি পেয়ে আগ্রহভরে দেখেন এবং কেনেন।

রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসা প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাজারে শুরুতেই চোখে পড়লো গাছ পাকা পেঁপে। সতেজ হলদে ভাব দেখে মনে হবে এখনো গাছেই ঝুলে আছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর বড় আকারের (৩ কেজি) এক একটি পেঁপের দাম ১২০-১৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। তবে দাম-দর করে নিলে ৬০-৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
খাগড়াছড়ির আমলকি-জলপাইয়ের কদর সুদূর ঢাকাতেও রয়েছে। যেহেতু এখন জলপাই-আমলকির মৌসুম, তাই বাজারে এর যোগানও বেশি। পর্যটকরা চাইলে অনায়াসে নিয়ে যেতে পারেন। দাম পড়বে কেজি প্রতি ১৫ টাকা, আর আমলকি ২০ টাকা।  

এছাড়া এখানকার সবজির মধ্যে নতুন চোখে পড়লো হলুদ এ আদা ফুল। মাটিরাঙা সাপমারা থেকে হলুদ ফুল ও আদা ফুল নিয়ে এসেছেন ধীমান নামে এক জুমিয়া। ছোট ছোট আকারের একেকটি আঁটি বিক্রি করছেন ৫ টাকা দরে। বাজারে আসা ক্রেতাদের ওই হলুদ এবং আদা ফুলের প্রতি উৎসুক দৃষ্টি। মনে হলো সবজি হিসেবে এ আইটেম তাদের কাছেও নতুন। হলুদ ফুলটা সবজি হিসেবে ভেজে অথবা রান্না করে খাওয়া যায় বলে জানালেন ধীমান। আর আদা ফুল যে কোনো তরকারির সঙ্গে দিলে আলাদা একটা স্বাদ তৈরি হয়।

এছড়াও রয়েছে পাহাড়ে উৎপাদিত মাঝারি আকারের কমলা, ঢেঁকিশাক, মৈ-আলু (দেখতে কাঁটাযুক্ত), বিলাতি সিম, বাঁশ কোড়ল, ওল কচু, মাটি আলু, দেশি জাতের বেগুন, জুমের শসা, আঁখসহ হরেক রকমের পণ্য।
রাজধানী বা বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের বাজার দরের সঙ্গে তুলনা করলে এখানকার পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। দামের চেয়ে যে জিনিসটিতে সবার আগ্রহ, সেটি হলো টাটকা এবং নির্ভেজাল। কোনো ধরনের কেমিক্যাল বা ফরমালিন নেই এসব সবজি বা ফলে। তাইতো স্বাদ এবং ঘ্রাণ দু’টোই আলাদা।

জুমিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানকার উৎপাদিত সবজি-ফল দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। বিশেষ করে পর্যটকদের মাধ্যমে এখানকার জুম চাষের সবজির কদর দেশ-বিদেশে ছড়াচ্ছে।

এ জন্যই হয়তো পর্যটকদের একটু বেশিই গুরুত্ব দেন এখানকার মানুষজন। হরতালের মধ্যে খাগড়াছড়িতে এসে সেটা টের পাওয়া গেল।

** মেঘ-পাহাড়ের অকৃপণ সৌন্দর্যের আধার খাগড়াছড়ি

বাংলাদেশ সময়: ২২১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৬
এসএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।