ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ ছবি: সোহেল সারওয়ার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) থেকে: খাগড়াছড়ির অন্য অঞ্চলগুলোর মতো মানিকছড়িতেও ঢাকা-চট্টগ্রামের সবজি, ফলমূল ও কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের নিয়মিত যাতায়াত আছে। বিশেষত প্রতি শনিবার ব্যবসায়ীদের আগমনে গমগম করে পুরো উপজেলা শহরটি।

বছরের প্রায় প্রতি শনিবার মানিকছড়ি কেবল সবজি-কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের গন্তব্য হলেও শীতের শেষ থেকে ফাল্গুন-চৈত্র মাস পর্যন্ত এখানে মিছিল বেঁধে আসেন আরেক প্রকারের ব্যবসায়ীরা। তারা হলেন মৌসুমী ঝাড়ু ফুল ব্যবসায়ী।

এই ব্যবসায়ীরা মানিকছড়ি থেকে ট্রাকে ট্রাকে ঝাড়ু ফুল আঁটি বেঁধে কিনে নিয়ে যান চট্টগ্রাম-ঢাকায়। সেখানে এই ঝাড়ু ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় ঘর পরিচ্ছন্ন করার ঝাড়ু। তারপর এই ঝাড়ু ছড়িয়ে যায় সারাদেশে। এমনকি বিদেশেও।

বাংলানিউজ যখন ঘুরছিল মানিকছড়ি শহরে, তখন এই অঞ্চলের বিখ্যাত ঝাড়ু ফুল খুঁজে জানা গেলো, মৌসুম নয় (অফ-সিজন) বিধায় তেমন মিলছে না এই ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় ফুল’। কিন্তু মাস তিনেক পরেই মানিকছড়িতে অন্য শাক-সবজি-ফলমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলবে ঝাড়ু ফুল বিকিকিনি।
স্থানীয় কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো ঝাড়ু ফুলের চাহিদা আর যোগানের কথা। তারা জানালেন, বর্ষার শেষ দিকে পাহাড়ি জমিতে বেড়ে ওঠে কাশবনের মতো ঝাড়ু ফুলটি। শীত এলে এই ফুল ৪ থেকে ৫ ফুট আকারে কেটে বাজারে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। ২০-২৫টি ফুল দিয়ে বাঁধা হয় একেকটি আঁটি। আর তা বিক্রি হয় একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকায়। আর একটি ফুলের ঝাড়ু তৈরিতে লাগে ৩-৪টি ফুল। যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয় ১০-১৫ টাকায়। অবশ্য মৌসুম না থাকলে এই দামটা বাড়ে। কিন্তু সেটা যে ঢাকা চট্টগ্রামের মতো ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত গড়ায় না সেটা নিশ্চিত।

ঝাড়ু ফুল নিয়ে কথা হচ্ছিল মানিকছড়ির ছোট ট্রাক-চালক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি মানিকছড়ি থেকে শাক-সবজি, ফলমূল টানেন চট্টগ্রামের আড়তে। এখন টানছেন আখ। ঝাড়ু ফুলের মৌসুম এলে ওই ফুল টানতেই ব্যস্ত থাকেন।

মানিকছড়ির রাজবাড়ী ফটক সংলগ্ন সবজি বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে জামাল বলছিলেন, এই এলাকার ঝাড়ু ফুলের কদর ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে অনেক। তবে এই অঞ্চল ছাড়াও ঝাড়ু ফুল উৎপন্ন হয় পার্শ্ববর্তী রামগড়, দীঘিনালা, মহালছড়ি এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়াসহ পার্বত্যাঞ্চলের অন্যান্য এলাকায়।

উৎপাদন এলাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায়ই সাধারণত ঝাড়ু ফুল বেড়ে ওঠে। বিশেষ কোনো এলাকা নেই। এর কোনো চাষ লাগে না। তবে মানিকছড়িতে আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে ঝাড়ু ফুল। পাহাড় কাটা চলতে থাকায় এবং সেসব স্থানে কাঠবাগান ও অন্যান্য সবজি চাষ শুরু হওয়ায় এই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

জামালের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মিলন। তারও কিছু পাহাড়ি জমি আছে। সেখানকার কিছু জায়গায় আগে ঝাড়ু ফুল হতো। এখন তেমনটা মেলে না।

মিলন বলছিলেন, এখন সবজি চাষেই মনোযোগ বেশি। ঝাড়ু ফুল শীত মৌসুমে হলে বিক্রি করি। যা আয় হয়, খারাপ নয়।

মৌসুম না হলেও বেশ কয়েক আঁটি ঝাড়ু ফুল দেখা গেল সবজি বাজার সংলগ্ন রুম্পা অ্যান্ড ব্রাদার্সের গোডাউনে। এখানে কয়েকটি ফুল দিয়ে তৈরি প্রতিটি ঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। মৌসুম এলে এই দাম ৫-১০ টাকা কমে যেতে পারে বলে জানান দোকানটির বিক্রেতা।

মোহাম্মদ মুন্সী নামে মানিকছড়ি বাজারের আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ঝাড়ু ফুল হয়তো উৎপাদন কমে গেছে। কিন্তু এখনও মৌসুম এলে মানিকছড়ির ঝাড়ু ফুলের কদর দেখা যায়।

সারাদেশের পরিচ্ছন্নতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে যোগান দিয়ে যাওয়া এই ঝাড়ু ফুলের উৎপাদন আরও বেশি নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন মোহাম্মদ মুন্সী, জামাল উদ্দিন ও মোহাম্মদ মিলনরা।

** নট ইউজিং ‘ইউজ মি’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এইচএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।