ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

৪ ঘণ্টায় চায়ের দেশে

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
৪ ঘণ্টায় চায়ের দেশে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল থেকে: ডানে ত্রিপুরা আর বাঁয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে রেখে ট্রেন ঢুকে পড়লো হবিগঞ্জের সীমানায়। পাল্টে গেলো দু’পাশের দৃশ্যপট।

শুরু হলো টিলার সারিতে একের পর এক লেবু, রাবার আর চায়ের বাগান।

ট্রেনের জানালা দিয়ে হু হু হাওয়া এসে শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছে। এরই মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের অনেকেই নেমে গেছেন। গতিও বেড়েছে ট্রেনের।  

আবিষ্কারের পর থেকে এই গতি নিয়েই তো ট্রেনের যতো তুলকালাম। ১৯২৫ সালে ইংল্যান্ডের স্টকটন থেকে ডার্লিংটন পর্যন্ত ট্রেন চালিয়ে নেওয়ার পর শুরু হয় উন্নতমানের যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর চিন্তা। স্টিফেনশন পিতা-পুত্র ছাড়াও আরও ক’জন শুরু করেন উন্নতমানের নির্ভরশীল ইঞ্জিন তৈরির তোড়জোড়। আরও ক’জন ইঞ্জিন তৈরি করে যে যারটাকে সেরা বলে দাবি তুলতে থাকেন।

বহুমুখী দাবির মুখে মহাবিপাকে পড়া রেল কোম্পানি ঘোষণা দেয় ‘ইঞ্জিন রেস’ বা দৌড় প্রতিযোগিতার। ১৮২৯ সালের ০১ অক্টোবর লিভারপুলের কাছে রেনহিলে রেসের জন্য প্রস্তুত হয় গোটা পাঁচ ইঞ্জিন।

শুরুতেই দেখা যায়, ইঞ্জিনের খোলের ভেতরে ঘোড়া লুকিয়ে রেখেছিলেন ব্র্যান্ডেথ নামে এক ইঞ্জিনিয়ার। জালিয়াতির অভিযোগে তার ইঞ্জিনটিকে বাদ দিয়ে শুরু হয় বিশ্বের প্রথম রেল রেস। দৌড় শুরু হওয়ার পর পিছিয়ে পড়ে বাকি তিন ইঞ্জিন। গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে কেবল স্টিফেনসনদের ইঞ্জিনটিই।      

এরপর ১৮৩০ সালে লিভারপুল-ম্যানচেস্টারে চালু হয় প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন।  এর ২৩ বছরের মাথায় ১৮৫৩ সালে ভারতে শুরু হয় রেল পরিবহন।

১৮৬২ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করে। এই লাইনকেই বর্ধিত করে ওই বছরই দর্শনা থেকে জগতী পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিমি. ব্রডগেজ রেললাইন উন্মোচন করা হয়।

পর্যায়ক্রমে স্থাপিত হয় পোড়াদহ-ভেড়ামারা, ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী, ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর রেললাইন।

এদিকে, ইউরোপে চায়ের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো চীন থেকে চা আমদানি শুরু করেছিলো আগেই। কিন্তু ১৮৩০ সালে চীন থেকে চা আমদানি বন্ধ হওয়ায় ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো হিমালয়ের দক্ষিণাংশে তৎকালীন আসামের সিলেট ও উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং ও কুচবিহারে চা বাগান স্থাপনের কাজ শুরু করে।

চা কোম্পানিগুলোর দাবির প্রেক্ষিতেই ১৮৯১ সালে স্থাপন করা হলো আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৯১০-১৯১৪ সালে টঙ্গী-আখাউড়া, ১৯১২-১৯১৫ সালে সিলেট-কুলাউড়া, ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ এবং ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ-বেল্লা ও ফেনী-বেলুনিয়া রেললাইন স্থাপন হয়।

রেলওয়ের ট্র্যাকের প্রয়োজনীয় পাথর সরবরাহের জন্য সিলেট-ছাতক লাইনে ৩৩ দশমিক ৮ কিমি রেলপথ উন্মুক্ত করা হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাস থেকে ভোলাগঞ্জের নদীবক্ষ থেকে ছাতকবাজার পর্যন্ত সংগৃহীত শিলা ও নুড়িপাথর সরবরাহের জন্য স্থাপন করা হয় ১৮ দশমিক ৫১ কিমি. মনোরেল রোপওয়ে।

শুরুতে তিন প্রকার ট্রেন লাইন স্থাপন করা হয়েছিলো দেশজুড়ে। এগুলো ছিলো ব্রডগেজ (দুই লাইনের ব্যবধান ১৬৬৭ মিমি.),  মিটার গেজ (১০০০ মিমি.) ও ন্যারো গেজ (৭৬২ মিমি.)।

বর্তমানে ন্যারোগেজ রেললাইন প্রায় উঠেই গেছে। স্টিফেনশনদের আবিষ্কার করা বাষ্পীয় ইঞ্জিনও আর চলে না এখন। ১৯৫৩-৫৪ সালে ১০টি ডিজেল ইলেকট্রিক রেল ইঞ্জিন চালু করা হয় এদেশের ট্রেন কাঠামোতে। ১৯৮৪-৮৫ সালের শেষদিকে সমস্ত বাষ্পচালিত রেল ইঞ্জিন বসিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ডিজেল ইলেক্ট্রিক ও হাইড্রো ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন চালু রয়েছে বাংলাদেশ রেলে। পারাবত এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন ডিজেল ইলেকট্রিক।

বর্তমানে পারাবত ছাড়াও উপবন, জয়ন্তিকা আর কালনী এক্সপ্রেস চলাচল করে ঢাকা-সিলেট রুটে। চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচল করে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস।

সকাল ৭টা ২৪ মিনিটে ঢাকার এয়ারপোর্ট স্টেশন পার হওয়া পারাবত এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল স্টেশনে ভিড়লো বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে। প্রায় সোয়া চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চায়ের দেশে এলো বাংলানিউজের কাফেলা।

***ট্রেন চলেছে চায়ের দেশে

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
আইএ/জেডএম/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।