ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বিশ্বসেরা সার্ফিং ভিলেজ কক্সবাজার

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৬
বিশ্বসেরা সার্ফিং ভিলেজ কক্সবাজার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: সাগরের স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি। পানির নিচে নেই ধারালো কিছু কিংবা প্রবাল।

সেইসঙ্গে নেই ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক প্রাণীর কোনো ঝুঁকি।  আর এসব সুবিধাই কক্সবাজারকে করে তুলেছে সার্ফিংয়ের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ জায়গা।

উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে বহু আগে থেকেই সার্ফিং চালু থাকলেও বাংলাদেশে সার্ফিংয়ের শুরুটা ২০০০ সালে। তবে দেরিতে হলেও এখন বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে আসা বিদেশি মাত্রই মূল ঝোঁক থাকে সার্ফিংকে ঘিরে।
আদতে সার্ফিংটা কক্সবাজারে এখনও নতুনের পর্যায়ে রয়েছে। নতুন হলেও এর বেশ সম্ভাবনাও দেখছেন সার্ফাররা। সম্ভাবনার কথা বলছেন ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটক ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারাও।

সাধারণত কক্সবাজার বিচের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টে দিনভর সার্ফাররা মগ্ন থাকেন জলক্রীড়ায়।
 
গর্জন তোলা সমুদ্রের ঢেউ বেয়ে লাফিয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর জলনৃত্য উপভোগ কিংবা সৈকতে আসা পর্যটকদের চিত্তবিনোদন খোরাকই শুধু নয়, সমুদ্রে নামা মানুষের জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও কাজ করছেন সার্ফাররা। কেউ কেউ আবার একেবারেই লাইফ সেভিংয়ের কাজ করছেন।

অল্প সময়েই কক্সবাজারের শতাধিক সার্ফার জাতীয়ভাবে পরিচিত করে তুলেছেন নিজেদের। গত বছরের এপ্রিলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতাও হয় এদের নিয়ে। সেখানে ৭০ জন সার্ফার অংশ নেন।  তাদের মধ্যে ১০ জন নারীও ছিলেন। অবশ্য বর্তমানে নারী সার্ফারদের সংখ্যা ২০, আর পুরুষ সার্ফারের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
কক্সবাজারে সার্ফিংয়ের যাত্রা শুরুর গল্পটাও নেহায়েত মন্দ নয়। ১৯৯৬ সালে সার্ফিং বোট নিয়ে কক্সবাজারের উত্তাল তরঙ্গে দোল খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন লোন সার্ফার টম বাওয়ার্ডের নেতৃত্বে আসা একদল অসি-মার্কিন সার্ফার, তারা এদেশীয়দেরও অভিভূত করেছিলেন সেসময়। বিদেশি সার্ফারদের এই ঢেউয়ের নৃত্য দেখেই শখ জাগে বর্তমানে সার্ফিং আইকন হিসেবে পরিচিত জাফর আলমের। তারপর সাধনায় তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের প্রথম সার্ফার।  পরে ২০০০ সালের দিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সৈকতের অনেক শিশু হকার সার্ফিংয়ে যোগ দেয়। এখন তারা যেন একেকজন সাগরযোদ্ধা।
 
সার্ফিংকে এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সার্ফিং সংস্থার সদস্যপদও পেয়েছে সংগঠনটি।

আর কিছুদিন পরেই কক্সবাজারে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।

কক্সবাজার সৈকত সার্ফিং ক্লাবের সভাপতি রাশেদ বাংলানিউজকে জানান, কোনো কিছু শেখার আগে ট্রেনিং দরকার হয়। আর সেই ট্রেনিং গ্রাউন্ড হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত। অনেক বিদেশি এখানে সার্ফিংয়ের জন্য আসেন ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
 
সার্ফার সিফাত জানান, ছেলেদের পাশাপাশি এখন সার্ফিংয়ে কক্সবাজারের মেয়েরাও এগিয়ে আসছে। ২০ জনের মতো মেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি হিমছড়ির একটু আগে নির্জন সমুদ্র সৈকতে কয়েকজন তরুণকে সার্ফিং কৌশল শেখানোর কাজও করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ‘ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’র অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তিন কারণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সার্ফিংয়ের আকর্ষণের জায়গা। এর একটি হলো স্বচ্ছ নীল জলের ঢেউ; দ্বিতীয়টি, পানির নিচে নেই পাথরসহ কঠিন বা ধারালো কিছু, যা দ্বারা আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং তৃতীয়টি হলো কক্সবাজারে হাঙর-তিমিসহ সামুদ্রিক ভয়ঙ্কর প্রাণী না থাকা।
 
তিনি আরও বলেন, শুধু সার্ফিংয়ের মাধ্যমে বছরে কয়েক লাখ বিদেশি পর্যটক টানতে পারি আমরা, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পর্যটন করপোরেশন সার্ফিং ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজন করছে জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা। যেখানে শতাধিক সার্ফার অংশ নিয়ে বিশেষ জলক্রীড়া প্রদর্শন করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এসএ/এসআর

** আট বছর আগের মতোই আছে!
** কি করে হয় লবণ চাষ
** ছেঁড়া দ্বীপে যেতে অবশ্য করণীয়
** কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন ঘিরে নানা পরিকল্পনা
** প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ‘জেট স্কি’
** লাবনী-সুগন্ধা নয়, পুরো সৈকতে উপযোগী পরিবেশ দরকার
** বয়া ছাড়াই জাহাজ চলছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে
** প্রবাল পাথরের ভাঁজে ভাঁজে মাছের খেলা
** পঁচা মাছে নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য
** দূর থেকে ভাসমান, কাছে গেলেই দৃশ্যমান ছেঁড়া দ্বীপ
** পর্যটন নগরী‌তে বাংলা ভাষার বেহাল দশা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।