ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সম্ভাবনার ‘হিমছড়ি পিক’ অবহেলিত

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৬
সম্ভাবনার ‘হিমছড়ি পিক’ অবহেলিত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে:  ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম সেরা পর্যটন শহর শিলং। এই শহর এক পলকে দেখার জন্য রয়েছে একটি উঁচু পাহাড়ের চূড়া।

সেই চূড়ায় উঠে পুরো শহর দেখার জন্য পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে। এটাকে বলা হয় ‘শিলং পিক’।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের দিগন্ত বিস্তৃত সাগর দেখার জন্যও রয়েছে তেমন একটি ‘পিক’। পাহাড় থেকে সমুদ্র দেখার শখ যাদের, তাদের কাছে টেনে নেয় হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের ‘টপ হিল’ নামে পরিচিত এই পিক।
 
কিন্তু ‘শিলং পিক’র তুলনায় হিমছড়ি বেশ অবহেলিত। এই ‘পিক’-এ দাঁড়িয়ে একসঙ্গে উত্তাল সাগরের ঢেউ, তার তীর ঘেঁষে ঝাউবন, এরই পাশ ধরে পাহাড়ের ভাঁজ দেখার ভীষণ উৎসাহ জাগলেও ওপরে ওঠার খাড়া সিঁড়িগুলো সেই উৎসাহ দমিয়ে দেয় অনেকখানিই। কেউ কেউ উঠতে পারলেও অনেকেই থেমে যেতে বাধ্য হন।

এ নিয়ে কথা হচ্ছিল ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফারহানা পারভিনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, শরীর একটু ভারী হলে কারও পক্ষেই ১৪৪ সিঁড়ি পেরিয়ে ওপরে ওঠা সম্ভব নয়। ‍আর তাতে পাহাড় থেকে সাগর দেখার স্বাদও পাওয়া হয়ে উঠবে না। ফারহানার মতে, যদি ‘টপ হিল’র সিঁড়ি প্রকৃতিবান্ধব করে সহজে ওঠার মতো তৈরি করা যায়, তবে ছোট-বড়, মোটা-রোগা সবাই এতে উঠতে পারবেন।
 
পর্যটনের মৌসুম নয়, তবু হিমছড়ির জাতীয় উদ্যানে ঘুরছিলেন ফারহানা পারভিনের মতো বেশ কিছু পর্যটক। তাদের মধ্যে আছেন সিলেটের হাসনাত-চামেলী দম্পতিও। ৩ বছরের শিশু মাহিরকে নিয়ে তারাও চেষ্টা করছেন ‘টপ হিলে’ ওঠার।

হাসনাত বলেন, ‘যখন শিলং গিয়েছিলাম, তখন সেখানকার পর্যটন প্রতিষ্ঠান ‘মেঘালয় ট্যুরিজম বোর্ড আমাদের ৮টি জায়গায় নিয়ে যায়। তার মধ্যে একটি ছিল ‘শিলং পিক’। সেখান থেকে পুরো শিলং শহর দেখা যায়। সেই জায়গায় পৌঁছাবার রাস্তা বেশ বড়। ‘পিক ভিউ’ দেখার জন্য যথেষ্ট টাওয়ার এবং সাবলীল সিঁড়ি ছিলো।

হাসনাত হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শিলং পিকের মতো হিমছড়ির টপ হিল থেকেও সুন্দর সাগর আর সবুজ চাদরের পাহাড় দেখা যায়। কিন্তু এই চূড়ায় ওঠার পথ বড়ই দুর্গম। বন বিভাগের অধীন এই চূড়াটি অবহেলিত বলা যায়। কর্তৃপক্ষের দেখভাল নেই বলে যেখানে সেখানে বর্জ্য ছড়ানো-ছিটানো।
নেশায় এই পর্যটক বলেন, শিলং পিকে গেলে শুধু শহরটিই দেখা যায়। কিন্তু আমাদের এই হিমছড়ি উদ্যানে নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণিরও দেখা মেলে। তাই এখানে শিলং পিকের চেয়েও পর্যটক সমাগম বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে বলে ততোটা ভিড় দেখা যায় না। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান ও টপ হিলকে পর্যটকবান্ধব করা।
 
হাসনাত ক্ষোভ ঝাড়েন পর্যটকদের ওপরও, ‘এতো ওপরে গিয়ে কেন চিপস খেয়ে, বাদাম খেয়ে– ময়লা ফেলে আসতে হবে? আর কেনইবা বন বিভাগ এই স্থানটির ক্ষেত্রে গার্ড ব্যবস্থা করবে না?’
কক্সবাজার শহর থেকে হাতের ডানে সাগরের উত্তাল ঢেউ আর বামে উঁচু পাহাড়ের কোলঘেঁষে ১২ কিলোমিটার পেরিয়ে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান। তার ঠিক ১৪৪ সিঁড়ি ওপরে ‘টপ হিল’

১৯৮০ সালে কক্সবাজারের প্রায় ১৭২৯ হেক্টর বা ১৭.২৯ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত এ অঞ্চলের বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণ, গবেষণা ও শিক্ষা এবং পর্যটনের কথা মাথায় রেখেই এটিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও উদ্যান হিসেবে গড়ে তোলা হয়।   ছোট বড় বেশ কিছু পাহাড় ও পাহাড়ের গায়ে গায়ে ছড়িয়ে থাকা বনভূমি আর বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত নিয়েই হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান।
উদ্যানের বনাঞ্চলে ১১৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ, ১৫ প্রজাতির গুল্ম, ৪ প্রজাতির তৃণ, ১৯ প্রজাতির লতা এবং ২১ প্রজাতির ভেষজ গাছ রয়েছে। এখানে দেখা যায় হাতি, মায়া হরিণ, বন্য শূকর ও বানরও। দেখা যায় ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬ প্রজাতির উভচর এবং ময়না, ফিঙ্গে ও তাল বাতাসিসহ প্রায় ২৮৬ প্রজাতির পাখি।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
এসএ/এইচএ/

** শিশুদের জন্য সেন্টমার্টিন নয়!
**‘বাবা, গোয়া সৈকতের সঙ্গে যে দারুণ মিল’
** নতুন পরিকল্পনায় সাজছে কক্সবাজার
** উত্তাল সাগর, উপচে পড়া রূপ
** সৈকতের প্রহরী, সাগরের যোদ্ধা
** খেলায়-হেলায় সমুদ্র সৈকতকে আঘাত
** সেন্টমার্টিনের বাহন ‘ভ্যানগাড়ি’
** সেন্টমার্টিন হারিয়ে যাবে!
** ছেঁড়া দ্বীপের মৌসুমী!
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।