ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সূর্য ডোবে সাগরে

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
সূর্য ডোবে সাগরে ছবি: শুভ্রনীল সাগর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেন্টমার্র্টিন থেকে: দ্য সান রাইজেস ইন দ্য ইস্ট অ্যান্ড সেটস ইন দ্য ওয়েস্ট- এই ট্রানস্লেশনটি কোনো বিদ্যার্থী পড়েনি, এমন কাওকে খুঁজে পাওয়া যাবে না!


এদিন আক্ষরিক অর্থেই ছিলো ট্রানস্লেশন মুখস্ত বা পুনরাবৃত্তির দিন। দ্য সান ‘রাইজ’ করার আগে কক্সবাজার সদর থেকে বাস ধরে টেকনাফ, এরপর সোজা সেন্টমার্র্টিন।



শহর থেকে বিভিন্ন সময় বাস ছেড়ে যায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে। সময় লাগবে আড়াই ঘণ্টা, ভাড়া দুই থেকে তিনশো। এরপর টেকনাফ-সেন্টমার্র্টিন জাহাজ যায়-আসে। প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টার ভ্রমণে প্রতিবার গুনতে হবে সাড়ে পাঁচশো থেকে চৌদ্দশো (শ্রেণিভিত্তিক) টাকা।

যাইহোক, দ্বীপ দর্শনে যখন পা পড়ে বালিয়াড়ির বুকে, ততক্ষণে সূয্যিমামা রাইজ করে দক্ষিণে অবস্থান নিয়েছেন- ধীরে ধীরে শুরু করছেন পশ্চিম যাত্রা।  

সেন্টমার্র্টিন দ্বীপটি চক্রাকারে আট থেকে দশ কিমি হবে। জেটি মানে উত্তর-পূর্র্ব অঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর হয়ে আবার জেটিতে ফিরে আসতে ওইপথটুকু পাড়ি দিতে হবে। আপাতত পায়ের পাতা পূর্বাঞ্চলে কিন্তু গন্তব্য পশ্চিম দিক- ওই যে, ট্রানস্লেশন!

যাওয়ার ব্যবস্থা মূলত দু’রকম কিন্তু তিন বলাই ভালো। ট্রলার যোগে যাওয়া যায়, যেতে পারেন সাইকেল নিয়েও। মিলবে ঘণ্টাপ্রতি পঞ্চাশ টাকার সাইকেল। তৃতীয়টি সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও নির্র্ভরযোগ্য- পদযাত্রা। গণতান্ত্রিক দেশ, গণভোটে পাস হলো এটিই। অগত্যা!

একপাশে ফেনিল সমুদ্র, অন্যপাশে কেয়া বন, এর পিছনে নারকেল গাছের উঁকি- মধ্যিখানে প্রবাল-ঝিনুক-শামুক-কাঁকড়া ডিঙিয়ে আমরা চলেছি। রোদের দাপট তখনও কমেনি কিন্তু এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিচ্ছিলো কেয়া-নারকেলের ছায়া। মানে সূর্যটা ঠিক পেছনে পড়ছিলো। কিন্তু গলাচিপা গ্রাম পেরিয়ে পশ্চিম দিকে বাঁক নিতেই একেবারে মুখোমুখি দেখা!

ততোক্ষণে নীল সমুদ্রের টিলায় দৌড়াচ্ছে লাল সূর্য, রূপ পাল্টাচ্ছে দীর্ঘ বালুতট আর দিন লিখছে শেষের কবিতা। যেনো বলছে- দেখে নিও, বালির হৃদয়ে আলোর ঝিকিমিকিগুলো একটু পর তারা হবে। হতেই পারে, কেননা- ‘রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে’।

যতো পা এগিয়েছে ততো পাল্টেছে দিগন্তের রূপ। বিভূতি ভূষণের মতো করে বললে, ‘গোটা আকাশ লাল হয়ে এল, যেন পশ্চিম দিগন্তে লেগেছে আগুন, তারই ছোঁয়াচে রক্তশিখা সারা আকাশে হালকা সাদা মেঘে আগুন ধরিয়েছে। ’

ঠিক এসময় পাখিরা ফিরে আসছে নীড়ে, ফিরবে সব নদী। দিনের সব লেনদেন সেরে উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গন্তব্য খুঁজে নেবে জীবনরূপী ট্রলারগুলো। যেমনটি বলেন জীবন বাবু, ‘চার দিকে শান্ত বাতি-ভিজে গন্ধ-মৃদু কলরব; খেয়া নৌকাগুলো এসে লেগেছে চরের খুব কাছে; পৃথিবীর এ গল্প বে‍ঁচে রবে চিরকাল। ’

অন্যতম প্রিয়কবি রাইনের মারিয়া রিলকে ‘সানসেট’ কবিতা লিখেছিলেন প্রায় শতবছর আগে। কিন্তু আরেক বড় কবি তো বলেই দিয়েছেন- পৃথিবীর এ গল্প বেঁচে রবে চিরকাল। তাই, ‘স্লৌলি দ্য ওয়েস্ট রিচেস ফর ক্লথ অব নিউ কালারস/ হুইচ ইট পাসেস টু অ্যা রো অব অ্যানসিয়েন্ট ট্রিজ/ ইউ লুক অ্যান্ড সুন দেজ টু ওয়ার্র্ল্ডস বোথ লিভ ইউ/ ওয়ান পার্ট ক্লাইমস টুওয়ার্ড হ্যাভেন, ওয়ান সিঙ্কস টু আর্থ লাইনগুলো আজও থাকে। রিলকেও এই সন্ধ্যায় সবার সঙ্গে উপস্থিত থাকেন।

থাকেন গুরুদেবও, ‘অবশেষে দিবসান্তে/ নগরের এক প্রান্তে/ সমুদ্রকূলে (নদী) সন্ধ্যাস্নান সারি…’। সত্যিই তাই! তার মতো আর কে আছে, যিনি এমন করে লিখবেন?

এরপর এমিলি ডিকিনসন শুধু বলতে পারেন, ‘ব্রিং মি দ্য সানসেট ইন আ কাপ…’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এসএনএস/

** ১২ মাস কক্সবাজারকে ব্যস্ত রাখতে চায় মারমেইড
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।