ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ডাব-তরমুজেই পকেট ফাঁকা সেন্টমার্টিনে

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
ডাব-তরমুজেই পকেট ফাঁকা সেন্টমার্টিনে ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল - সোহেল সারওয়ার - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেন্টমার্টিন থেকে: নারিকেল জিঞ্জিরাখ্যাত সেন্টমার্টিনে ডাব বা নারিকেল গাছ রয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এ গাছগুলোর সুমিষ্ট পানি, শাঁস পর্যটকদের হৃদয়ের খোরাক।

ডাবের পাশাপাশি সিজনাল ফল তরমুজও পছন্দের তালিকায় এখন এগিয়ে। আর এতেই পকেট ফাঁকা হচ্ছে পর্যটকদের।

বাংলাদেশের মানচিত্রের ঠিক লেজের আংশ ও মায়ানমারের উপকূল থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত এ দ্বীপে কোনো ফসল ফলাই যেন বিস্ময়। তাই ঘুরতে এসে স্থানীয় ডাব, তরমুজ, বাঙ্গিই আগে খোঁজেন সবাই। সবচেযে বড় বিষয় টাটকা পাওয়া যায়। চাইলে দাঁড়িয়ে থেকে গাছ থেকে পাড়ার পরপরই সেখানে বসেই খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।

মাত্র ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২ কিলোমিটার প্রস্থ (সূত্র: জেলা তথ্য বাতায়ন) এ প্রবাল দ্বীপে মাটির দেখা মেলে একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত। চারপাশে বালির বিচ আর বড় বড় কোরাল। তাই কৃষিজমির পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই কম। দ্বীপে প্রচুর নারিকেল গাছ জন্মে ও ভালো ফলন পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা একে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডাকে। তবে জিঞ্জিরা নামটি আরব বণিকদের দেওয়া বলেই মত স্থানীয়দের।

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দ্বীপ ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারিকেল, তরমুজ, বাঙ্গি ছাড়া তেমন কোনো ফল এখানে জন্মে না। আর সবজির মধ্যে আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ঢেঁড়শ, বরবটি, বেগুন হয় কিছু জমিতে।
নীল জলরাশিবেষ্টিত এ দ্বীপের জেটি থেকে নেমেই পথের দু’ধারে যে জিনিসটি বারবার প্রবুলব্ধ করবে সেটি সম্ভবত ডাব। আর ভ্রমণ ক্লান্তি এড়াতে জুড়ি নেই এ ফলটির। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে দ্বীপে পা রেখে কিংবা দ্বীপের চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে ডাবটাই হয়ে ওঠে শক্তি যোগানোর মহৌষধ। সেন্টমার্টিনে স্থানীয়দের হিসাবে বছরে লক্ষাধিক ডাব উৎপন্ন হয়। আর এর বেশি অংশেরই ভোক্তা পর্যটকরা। সহজলভ্য হওয়ার পরও দাম কিন্তু নয়। ঢাকা কিংবা বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর মতোই এখানে ৬০ থেকে ৪০ টাকায় কিনে খেতে হয়।


নীলজলের সবুজ এ দ্বীপে যাদের একখণ্ড জমি আছে তার অবশ্যই নারিকেল গাছ আছে। বছরের পাঁচ মাস এসব গাছের ডাব বিক্রি করে সারা বছর চলার সাংসারিক খরচ যোগাড় করেন কেউ কেউ। কারণ এখানে উপার্জনের উপায় খুব কম।
 
তবে আকৃতি, বাহ্যিক সৌন্দর্য, ভিতরে পানির পরিমাণে যে কোনো এলাকার ডাব থেকে অনেক এগিয়ে সেন্টমার্টিনের ডাব। ডাবের মতো সিজনাল ফল তরমুজেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এখানে। টেকনাফ থেকে তরমুজ এলেও স্থানীয় তরমুজেই আগ্রহ সবার। আর স্থানীয় তরমুজের দামও বাইরে থেকে আসা তরমুজের প্রায় দ্বিগুণ। উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু সার ব্যবহার করলে ক্ষতিকর কোনো কেমিক্যাল থাকে না বলেই জানালেন গলাচিপা, পশ্চিম পাড়ার চাষি ওমর ফারুক ও রফিক। সেন্টমার্টিনের যে তরমুজের দাম দেড় থেকে ২শ টাকা টেকনাফ থেকে আনা হলে তার দাম ৮০-১০০ টাকা মাত্র।

ফলন কোনো কারণে একটু কম হলে দাম অনেক বেশি বেড়ে যায় বলেই মত তাদের।

এখানে যেকোনো কিছু চাষ করা যে সহজ নয় তা স্পষ্ট করে জানালেন তারা। পাশের একটি খেতে গিয়ে দেখা যায় মধ্যবয়সী আকলিমা তার ২০ শতাংশ জমিতে লাগানো মরিচ তুলছেন। প্রচুর মরিচ ধরেছে তার গাছে। বেশ স্বাস্থ্যবানও। এতে তার খরচ হয়েছে চার হাজার টাকা। সার দিতে হয়েছে দু’বার।


গাছে শুকনো মৌসুমে পানি দেওয়ার কথা তুলতে তিনি পাশের খোঁড়া মাটি দেখালেন। ৫-৬ ফুট বালিমাটি খুঁড়লেই মেলে মিষ্টি পানি। এটাই বৃষ্টি ছাড়া পানির উৎস। আর ধান চাষ হয় শুধু বরষায়। চাষিরা জানালেন ধান এখানে ভালোই জন্মে।

পর্যটক আগমন থেকেই মূলত পেট চলে এখানকার মানুষের। তাই পকেট ফাঁকা হলেও যে সতেজতা, যে শুদ্ধতা সেন্টমার্টিন থেকে নিয়ে ফেরেন তারা, তার দামই লাখটাকা!


 

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এএ

**
আতঙ্ক আর আনন্দ একযোগে ভর করলো সাগরে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad