ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’ ছবি: শুভ্রনীল সাগর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আগে শুধু শীতের সাগর দেখতে পর্যটকের আগমন ঘটতো।

এখন বর্ষার নৈসর্গিক রূপ দেখতেও অনেক পর্যটক ছুটে আসছেন কক্সবাজারে।

কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বাংলানিউজের সঙ্গে আলোচনায় এমন মন্তব্য করেছেন।
 

তিনি বলেন, কক্সবাজারকে সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে সাজিয়েছেন। এখানে একদিকে যেমন বিশাল সমুদ্র সৈকত। অন্যদিকে সারি সারি টিলা। যে কারণে শীতের শান্ত সৈকত যেমন পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয়। তেমনি বর্ষার নৈসর্গিক রূপও পর্যটকদের সমানভাবে আকর্ষণ করে।

কক্সবাজারে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে এখানে তেমন পর্যটক আসতেন না। কিন্তু এসব কাহিনী এখন সুদূর অতীত। গত এক বছরে কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কক্সবাজারে। সবার সহযোগিতায় কক্সবাজার পুলিশ এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে।

রাতে বিচে যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থা না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন শ্যামল কুমার নাথ।

তিনি বলেন, রাতে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে।

তবে, সীমাবদ্ধতার মধ্যেই বিচের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন দিনে রাতে যেকোনো সময় মন চাইলে বিচে ঘুরে আসা যায়। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।

আগে বরগুনায় ছিলেন শ্যামল কুমার নাথ। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছেন ২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট। তিনি মনে করেন, কক্সবাজারে আরও যথেষ্ট উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। শহরের ভেতর দিয়ে একটি মাত্র সড়ক রয়েছে। এতে প্রায় সময়েই জ্যাম লেগে থাকে। এতে বিরক্ত বোধ করেন ট্যুরিস্টরা। এখানে যদি একটি সার্কুলার রোড তৈরি করা যায়, তাহলে জ্যাম দূর হয়ে যাবে।

সার্কুলার রোড তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।

তিনি বলেন, বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করা হচ্ছে সাবরাং এলাকায়। এর পাশাপাশি হিমছড়ি ও ইনানীতেও বিদেশি পর্যটকদের জন্য এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করা প্রয়োজন। যেখানে তারা তাদের রুচিমতো উপভোগ করতে পারবে।

কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশের অন্তরায়গুলো কি কি? এ প্রশ্নের জবাবে শ্যামল কুমার বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে হবে। কিছু ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা মনে করেন বছরে চার মাস ব্যবসা হবে। এই চার মাসেই সারা বছরের আয় করে নিতে হবে।

এ জন্য শীতকাল এলেই হোটেল ভাড়া দ্বিগুণ করে দেন। দেখা যাবে ৫০ টাকার খাবারের দাম দু’শ টাকা আদায় করছেন। আবার কিছু পরিবহন চালক রয়েছে, যারা নতুন লোক দেখলেই দ্বিগুণ দাম হাকান। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

এসপি বলেন, অনেক সময় টাইম বলবে এক রকম, কিন্তু গাড়ি ছাড়বে অনেক পরে। আবার বলবে মাইক্রোতে করে নেবে। কিন্তু নিয়ে গিয়ে বাসে তুলে দিচ্ছে। এ কারণে কক্সবাজার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ভুল ম্যাসেস যাচ্ছে অনেক সময়। এই ধরনের চিটিং বন্ধ করতে হবে।

এই চিটিং বন্ধের জন্য কি করা উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে রুলস রেগুলেশনের পাশাপাশি সিসটেম ডেভেলপ করতে হবে। তা না হলে সম্ভব নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হোটেল মোটেলগুলোতে সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে থাকা উচিত। এ জন্য পুলিশ প্রশাসন অনেকদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারে ভালো মানের গাইডের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সেন্টমার্টিন ঘুরিয়ে আনার জন্য ভালো মানের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। প্রায়শই সেখানে যেতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন ট্যুরিস্টরা। যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেউ অভিযোগ করছে না। তারা মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করছেন বলে মন্তব্য শ্যামল কুমার নাথের।

আপনি কেমন কক্সবাজার দেখতে চান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একদিন এখানে পুলিশ সুপার থাকব না। হয়তো দেখা যাবে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসব। সেই যেমন কক্সবাজার আশা করবো। তেমন কক্সবাজারের স্বপ্ন দেখি। সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।

তবে, শুধু আইন দিয়ে কক্সবাজারের পর্যটনের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এসআই/পিসি

** তথ্যহীন পর্যটন তথ্য কেন্দ্র!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।