ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৬
অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: হকারদের দৌরাত্ম্য, মাত্রাতিরিক্ত কিটকট (ছাতা), পদে পদে হয়রানি, ফেলে দেওয়া আবর্জনাসহ নানান অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। খাবারের ঠোঙ্গা, প্লাস্টিক, কোমল পানীয়ের বোতল, বাদামের খোসা, ডাবের খোসাসহ পর্যটকদের ফেলে দেওয়া বিভিন্ন উচ্ছিষ্টে নোংরা হয়ে আছে কক্সবাজারের লাবনী বিচ।

মোবাইল ফোন অপারেটর রবির উদ্যোগে এসব বর্জ অপসারণের জন্য ক্লিনার নিয়োগ করলেও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেই। এক শিফটে রবির ক্লিনাররা সৈকতের বর্জ পরিষ্কার করলেও বাকি সময় সৈকতের পরিবেশ থাকে নোংরা।

মঙ্গলবার (০৫ এপ্রিল) লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলী বিচ ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য চা বিক্রেতা, কফি বিক্রেতা, মুড়ি বিক্রেতা, বাদাম বিক্রেতা, শামুক ঝিনুকের বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা, ৬শ’র অধিক তথাকথিত ফটোগ্রাফার ও ভিক্ষুক প্রতিনিয়ত পর্যটকদের বিরক্ত করছে।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বিলুনিয়া থানার হরিপুর থেকে শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখার জন্য এসেছেন প্রদীপ দেব বাসু এবং একই জেলার রাজনগর থানার রাধানগর গ্রামের আশিষ ঘোষ। তাদের সাথে সস্ত্রীক এসেছেন মহেশখালীর এক ব্যবসায়ী স্বপন।

ঘোড়ায় চড়তে তাদের কাছে ১০০ টাকা আর ঘোড়ায় চড়ে শুধু ছবি তুলতে ১০ টাকা দাবি করা হয়। তাদের একজন ঘোড়ায় উঠে ছবি তোলেন। অপর একজন স্মার্ট ফোনে ১/২ মিনিটেই ১০টি ছবি তোলেন। তাদের কাছে ১০০ টাকা দাবি করা হয়।

স্বপন ফটোগ্রাফারদের বলেন, তোমরা তো ১০ টাকা চাইলে, এখন ১০০ টাকা চাও কেন? উত্তরে ফটোগ্রাফাররা বলেন, একটি তুললে ১০ টাকা, আপনি ১০টি তুলেছেন একশ টাকা দিতে হবে।

স্বপন তর্ক না করে বলেন, ৪/৫টা ছবি একেবারে খারাপ এসেছে। তোমাদের সামনে সেগুলো ডিলিট করে দিচ্ছি তোমরা ৫০ টাকা রাখো। তাতে তারা রাজি না হয়ে বলে খারাপ-ভালো বুঝি না। ছবি তুললেই টাকা দিতে হবে। অবশেষে স্বপন তাদের ১০০ টাকা দিয়ে দেন।

ঘটনাটি আগাগোড়া দেখে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ১০০ টাকা দেওয়ার কারণ পর্যটকদের জিজ্ঞাসা করলে স্বপন জানান, ওরা ভারত থেকে এসেছে। ১০০ টাকার জন্য আবার কোনো ঝামেলায় জড়ায় এ ভয়েই তিনি এ টাকা ঘোড়ার ছেলেটিকে দিয়ে দেন।

ঘোড়ার ওই ছেলেটির নাম ইব্রাহিম খলিল। বয়স ১০ বছর। সাথে আছে তার ভাই শাকিব, ১৩ বছর। তারা জানায়, দৈনিক যা ইনকাম হয় তা ঘোড়ার মালিককে দিয়ে দিতে হয়। তারা বেতনভুক্ত কর্মচারী। ১ হাজার টাকা ইনকাম হলে তাদের দু’ভাইকে ৩শ’ টাকা দেওয়া হয়। তাই বেশি ইনকাম হলে তাদের লাভ বেশি। মালিকের ২টি ঘোড়া এখন বিচে খাটে। আগে ৩টা ছিল।

বিচে তো ঘোড়া নামানো নিষেধ, জানালে তারা জানায় মালিক কীভাবে চালায় তারা জানেন না।

কক্সবাজারের গোইল্লা পাড়া থেকে ৪ ছেলে মেয়েসহ বিচে বেড়াতে আসা ৫৫ বছর বয়সী ফরহাদ বিন সরোয়ার বাংলানিউজকে জানান, পর্যটকরাই হয়রানির শিকার হয়। তারা স্থানীয় বলে তাদের তেমন হয়রানি হতে হয় না।

বিচ ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য চা বিক্রেতা, কফি বিক্রেতা, মুড়ি বিক্রেতা, বাদাম বিক্রেতা, শামুক ঝিনুকের বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা, ৬শ’র অধিক তথাকথিত ফটোগ্রাফার ও ভিক্ষুক প্রতিনিয়ত পর্যটকদের বিরক্ত করছে। তারা নানান কায়দায় বিভিন্নভাবে পর্যটকদের হয়রানি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর তা হচ্ছে পুলিশের উপস্থিতিতেই।

হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা প্রতিদিন দুই শিফটে ৪০ টাকা করে পুলিশকে দেয়। সকালের শিফটের পুলিশদের দিতে হয় ২০ টাকা আর বিকাল শিফটের পুলিশকে দিতে হয় ২০ টাকা। ঘোড়ার মালিকদের দিতে হয় প্রতি শিফটে ১শ টাকা করে।

এখানে বেড়াতে আসা পর্যকটরা বাংলানিউজকে জানান, পুলিশদের ম্যানেজ করে তারা ব্যবসা চালায় বলে পুলিশ এসব বিষয় চোখে দেখে না।

বিচে ডিউটিতে থাকা কক্সবাজার জোনের টুরিস্ট পুলিশের এএসআই জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হকাররা পর্যটকদের হয়রানি করে এটা সত্য। কিছু হকার পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে। তবে আমরা গত ১ বছরে প্রায় ২ হাজার হকার ধরে আদালতে সোপর্দ করেছি। তারা ১শ/২শ টাকা জরিমানা দিয়ে বের হয়ে ফের এ ব্যবসায় নামে। এছাড়াও ৫৯ জন ইভটিজার ধরে মোবাইল কোর্ট করে তাদের শাস্তি দিয়েছি। সময় সময় ছিনতাইকারী ধরেও মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়।

হকারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।



বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
এমআই/এমজেএফ/

** উত্তাল সাগর, উপচে পড়া রূপ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।