ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন ঘিরে নানা পরিকল্পনা

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৬
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন ঘিরে নানা পরিকল্পনা ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চলতি বছরকে ‘পর্যটন বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষে দেশের সব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনাগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ্য করতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এছাড়া পর্যটকদের সেখানে অবস্থানের সময় বৃদ্ধিতে নেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
 
দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরইমধ্যে প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিকমানের। বিশ্বের অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে এখানেও সেইসব সুযোগ-সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
 
স্বল্প খরচে কক্সবাজার এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোতে ভ্রমণের জন্য রেলওয়ে সংযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এরইমধ্যে রেলওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন এ রেললাইন রামু হয়ে গুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত যাবে। এই রেললাইন ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এখান থেকে বার্মা হয়ে পূর্ব চীন পর্যন্ত যুক্ত হবে। এতে বার্মা, নেপাল, থাইল্যান্ড, পূর্ব চীনের পর্যটকরা সহজেই বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে পারবে।
 
শুধুমাত্র পর্যটক আকর্ষণ করলেই চলবে না, তাদের থাকার ব্যবস্থাও হতে হবে উন্নতমানের, সেই পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
 
পর্যটন করপোরেশের আওতাধীন হোটেল শৈবাল, উপল ও প্রবালকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে। শৈবালে একটি হলিডে ভিলেজ করা হচ্ছে। এখানে ‘সি ফেসিং ভিলা’, ‘ওয়াটার ফেসিং ভিলা’ ও পাঁচ  তারকা হোটেল করা হচ্ছে।
 
এছাড়া উপলে থাকবে পাঁচ তারকা হোটেল। প্রবালে থ্রি-ইন ওয়ান ফর্মুলা চালু করা হচ্ছে। এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি  ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করা  হবে। এখান থেকে প্রশিক্ষিত জনবল প্রবালের  বাণিজ্যিক পাঁচ তারকা হোটেলে চাকরির ব্যবস্থা হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এসব কাজ করা হচ্ছে। চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে এসব কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ হস্তান্তর করা হবে বলেও জানা গেছে।
 
পর্যটক আর্কষণীয় এলাকার মেরিন ড্রাইভ কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

সেন্টমার্টিন
 সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে।
 
এ দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড হতে আসা-যাওয়া করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো রয়েছে।

সেন্টমার্টিনকে ঘিরেও নেওয়া হয়েছে মহৎ পরিকল্পনা। সেন্টামার্টিনে পরিবেশ বান্ধব আবাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটকরা যেন সেন্টমার্টিনে ভ্রমণের স্থায়ীত্ব বাড়াতে পারে সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে আবাসন গড়া হবে। তবে যাই করা হোক সবই পরিবেশের কথা চিন্তা করেই করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সুন্দরবন
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন সুরক্ষা ও এর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও নেওয়া হয়েছে কিছু পরিকল্পনা। এরমধ্যে সুন্দরবনে রক্ষায় এটিকে প্রোটেকটেড হেরিটেজ ঘোষণার চিন্তাভাবনা চলছে।

সুন্দরবনকে দু’ভাগে ভাগ করা হবে পর্যটকদের জন্য। এরমধ্যে একদল স্বল্প ব্যয়ী- অধিক সংখ্যক পর্যটকদের জন্য। আরেক  ভাগ অধিক ব্যয়ী- স্বল্প পর্যটকদের জন্য। স্বল্প ব্যয়ীদের জন্য নির্ধারিত এলাকা হবে করমজল, কপিলমনিসহ কাছাকাছি এলাকা। যারা সুন্দরবন দেখতে চান তবে ব্যয়ও কম করবেন।
 
অধিক ব্যয়ী পর্যটকদের মধ্যে যারা পরিবেশ বান্ধব পর্যটক। এরা সুন্দরবনকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে। যারা গবেষণা করতে চায় তাদের জন্য গন্তব্য নির্ধারণ করা হবে মান্দারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, হিরণপয়েন্ট, পুটনিয়া দ্বীপ, দুবলার চর। এখানে তারাই যাবেন, যারা সুন্দরবনকে লালন করেন, ভালোবাসেন।
 
এছাড়া সুন্দরবনে মোটরচালিত নৌযান ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হবে। এরমধ্যে সৌরশক্তি ব্যবহার করে বোট (নৌকা) চালানো ব্যবস্থা করা হবে। ভাসমান এসব আবাসন চালু করতে পারলে সুন্দরবনের ভেতর দখল করার প্রবণতা কমে আসবে।
 
মহেশখালী
সম্ভাবনাময় সোনাদিয়া দ্বীপকে গভীর সমুদ্রবন্দর এলাকা করার সরকারি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এটি হলে মহেশখালীতে পর্যটকদের আর্কষণ বাড়বে।
 
মহেশখালীর গুরুত্বপূর্ণ  স্থানগুলো আরো বেশি আকর্ষণীয় করা হবে। এ এলাকার বৌদ্ধ মন্দিরগুলো সুরক্ষা করা হবে। আদিনাথ মন্দির, রাখাইনদের বিভিন্ন জিনিসপত্র যাতে সব সময় পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করা হবে। এছাড়াও মহেশখালীর বিখ্যাত পানকে পর্যটকদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
 
পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন বর্ষকে কেন্দ্র করেই আমাদের বৃহৎ পরিকল্পনা। আমরা চাই সারা বছর জুড়েই কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, মহেশখালীসহ সব পর্যটন এলাকাতেই বিভিন্ন প্রোগ্রাম রাখতে। পর্যটকদের ভ্রমণ সময় বৃদ্ধি করার জন্যই বিচ এলাকায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম রাখা হয়েছে। এরজন্য একটি ক্যালেন্ডার করা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, আমাদের বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনের চেহারা বদলে যাবে।
 
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হেড অব মার্কেটিং এবং ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এনএইচটিটআই’র) অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী পর্যটন এলাকাগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে পর্যটকদের বেশি সময় পর্যটন নগরীতে স্টে করানো। কারণ যত বেশি সময় থাকবে ততই অর্থ খরচ করবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে একজন পর্যটকের সঙ্গে ৩০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
 


বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
এসএম/এসএইচ

** নতুন পরিকল্পনায় সাজছে কক্সবাজার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।