ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

এসি কিংবা পাখা নয়, দখিনা হাওয়াই যথেষ্ট

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এসি কিংবা পাখা নয়, দখিনা হাওয়াই যথেষ্ট ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাইবান্ধা থেকে ফিরে: কটেজগুলো দেখতে ঠিক কুঁড়ে ঘরের মতো। একদিকে বিশাল খোলা মাঠ অন্যদিকে পুকুর।

পুকুরের উপর ঝুলন্ত বারান্দায় ছুঁই ছুঁই করছে পানি। বারান্দায় পাতা রয়েছে চেয়ার-টেবিল। মন কাড়ে কক্ষের ইন্টেরিয়রও। রুচিশীল সব আধুনিক ফার্নিচারের সমাহার। ভেতরে শোভা পাচ্ছে পাতাবাহারও।

কাচে ঘেরা খোলা জানালা, সরালেই দখিনা মৃদুমন্দ হাওয়া। সকাল সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলী, রাতে শেয়ালের ডাক। জানালার কাছে ঝিকিমিকি করবে জোনাকির ঝাঁক। নিস্তব্ধ রাতে কান পাতলে শোনা যাবে ঝিঝি ডাক অথবা পুকুরের পানিতে মাছের লেজের ঝাপটানি।
‌এ সবই উপভোগ করতে পারবেন “এসকেএস ইন্” কটেজের বিছানায় শুয়েই। গাইবান্ধা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ছবির মত সুন্দর গ্রাম রাধাকৃষ্ণপুরে অবস্থিত নান্দনিক এই রিসোর্ট।

দরজা ও কাচের দেয়ালের অবস্থান বিপরীত মেরুতে। সে কারণে দরজা খুলে থাই ফিটিংস সরিয়ে দিলে দখিনা হাওয়া কটেজগুলিকে যেন এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবে। হু হু বাতাসে যেখানে রুমগুলোর টেবিলে কাগজ বা হালকা জিনিস রাখাই দায় সেখানে এসি কিংবা বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহারের প্রশ্নই অবান্তর। স্নিগ্ধ এই হাওয়ার শীতল পরশে এক নিমিষেই জুড়িয়ে যাবে শরীর-মন।

কটেজের রুমগুলোতে বাতাস অনায়াসে যাতায়াত করতে পারলেও চোরের প্রবেশ কিন্তু সহজ হবে না। থাই ফিটিংসের বাইরে রয়েছে মোটা গ্রিলের দরজা। চাইলেই সার্টারের মতো সরিয়ে রাখা যায়। পুরো রিসোর্ট রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। রয়েছে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টার সতর্ক প্রহরা।

বিকেলে কটেজের ঝুল বারান্দায় বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম। কানে ভেসে এলো কোকিলের কুহুতান। সেই শব্দে আনমনেই নীরবতা নেমে আসে। গলার আওয়াজে কোকিল পাছে লজ্জা পেয়ে না যায়। মিনিট খানেক ধরেই সুর তুলে যাচ্ছিল পাখিটি। একটু বিরতি দিয়ে আবার ভেসে আসতে থাকলো সেই সুমধুর আওয়াজ। বসন্তটাকে সার্থক মনে হচ্ছিল তখন।

কথা ছিল সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার। কিন্তু কোকিলার উদাস ডাক শুনে ঘরে আর মন বসাতে পারলাম না।  

কটেজগুলোর চারদিকে বাহারি বৃক্ষের সমাহার। খুব বেশি বড় নয় গাছগুলো, এখনও ছোট ছোট। এক একটার বয়স খুব বেশি হলে তিন চার বছর হবে। পুকুর পাড়ের কংক্রিটের ওয়াকওয়ে ধরে সেই সুরের তালাশ করছিলাম।

কয়েক মিনিটের মাথায় প্রধান ফটকের কাছেই একটি আম গাছের দিকে আটকে গেলো কান। তখনও সুর তুলেই যাচ্ছিলো কোকিলটি। ঘন পাতার কারণে কিছুতেই মনের সাধ পূরণ হচ্ছিল না। মনে হয় আমার উপস্থিতি টের পেয়েই কোকিলটি উড়াল দিয়ে চলে গেল অপর প্রান্তে। গায়ককে দেখার সাধ পূরণ হলেও পরক্ষণেই কিছুটা অনুশোচনায় ভুগছিলাম। শিল্পীকে বিরক্ত করবার অনুশোচনা।

কোকিলের সুর থেমে গেলে কানে ভেসে আসে দোয়েলের শিস। আগেও ছিল কিন্তু কোকিলের মুগ্ধতায় খেয়াল করা হয়নি। দূর থেকে দেখেই মনের সাধ মেটাতে হল দোয়েলের শিসে। কিন্তু বিরক্ত করতে সায় দিল না মন। চারিদিকে ঘাসের মধ্যে ঠোট খুটছিলো বেশ কিছু শালিক।
হাতের ডানে বিঘাখানেক জুড়ে বিশাল দিঘী। দিঘীতে মাছের খেলা, সে এক মোহনীয় দৃশ্য। পুকুরে নাকি আট কেজি ওজনের মাছও রয়েছে। মাছ ধরা নিষেধ, তবে চাইলে হুইল দিয়ে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে।  

গাছে-গাছে শোভা পাচ্ছে মাটির কলস। যেখানে নিশ্চিন্ত মনে সংসার পেতেছে শালিক, দোয়েল, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সারাদিন কিচিরমিচির শব্দে পাখিগুলো মাতিয়ে রাখে পুরো রিসোর্ট। কাছ দিয়ে গেলেও সেদিকে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যেনো কতদিনের আপন, কতটা চেনা।

রাতের রিসোর্ট আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন আবেশে জড়ানো। পুকুরের একপাশের ঝর্না থেকে পানি গড়িয়ে মিশছে পুকুরে। তৈরি করছে কলকল শব্দ। পল্লীর কোন ছোট নদীতে পেতে রাখা মাছ ধরার বানায় পানির স্রোত বাধা পেলে যে শব্দ তৈরি হয় অনেকটা যেন সেই শব্দই।

রিসোর্টের চারিদিকে কয়েক’শ বিঘা জুড়ে বিস্তৃত বোরো ক্ষেত। সেখানে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাং, ঝিঝি পোকার ডাক যে কারো মন পুলকিত করে তুলবে। রাতে মাঝে মাঝে চমকে উঠতে পারেন শেয়ালের ডাকেও। সব মিলিয়ে পুরো রিসোর্টটিকে যেন চাদরের মত জড়িয়ে রেখেছে গ্রামীণ আবেশ।

খাওয়া-দাওয়া নিয়ে নো টেনশন। অর্ডার দিলেই পাতে জুটবে ব্রহ্মপুত্রের তাজা বোয়াল, বাঘাআইড় থেকে শুরু করে রুই, বাইন, টেংরা, পুটিসহ মিঠাপানির সুস্বাদু সব দেশীয় মাছ। চাইলে তাজা মাছও ফ্রাই করে পরিবেশন করা হবে পাতে।

সহকর্মী অ্যাডিশনাল‍ আউটপুট এডিটর রাইসুল ইসলাম বলে উঠলেন, ভাই এখানে না এলে রাতের নিস্তব্ধ অনুভব করা হতো না। এখানে আসলে চাঁদনী রাতেই আসা উচিত। ভরা পূর্ণিমা উপভোগ করার জন্য, এর চেয়ে খুব ভালো স্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন।
 
দুই রাত অবস্থান করার কথা ছিল কটেজটিতে। কিন্তু প্রথম রাতেই বার্তা এলো কর্মসূচি কাঁটছাটের। খবরটি শুনে মনটা সায় দিতে চাইছিলো না। কিন্তু বাধ্য হয়েই পরদিনেই ফিরতি যাত্রা করতে হলো। যেভাবে চার্জ করে নতুন জীবন ফিরে পায় মোবাইল। তেমনি আমার ক্লান্ত মনকে বিদ্যুৎ বেগে চার্জের কাজটি করে দিলো এসকেএস ইন। যা অনেক দিন পর্যন্ত শক্তি সঞ্চার করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

কি ভাবে যাবেন এসকেএস ইন্ এ
গাইবান্ধা শহর থেকে ইজিবাইকের যাত্রী হয়ে পৌঁছে যেতে পারেন গন্তব্যে। রির্জাভ নিলে সত্তর টাকা। আর শেয়ারে গেলে গুণতে হবে দশ টাকা করে।

ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া করতে পারেন মাইক্রোবাস কিংবা মোটরবাইক। তবে এখন সেখানে ঘুরতে যেতে হলে হালকা শীতের কাপড় নিতে হবে। কারণ ভোর রাতে তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রিতে নেমে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
এসআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।