ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বিদেশিদের চোখে বাংলাদেশ

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০০ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
বিদেশিদের চোখে বাংলাদেশ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়েছিলো বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপক সাইমন রিভের কাছে।

তার সবিনয় উত্তর ছিলো, আমি তো বাংলাদেশের ভক্ত হয়ে গেছি।

এ দেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। তারা জানে কি করে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়।

শুধু সাইমন রিভ নন, বিদেশিরা বাংলাদেশকে দেখেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও নিরাপদ স্থান হিসেবে। তাই বংলাদেশ নিয়ে লেখা তাদের শত শত ব্লগের একটিতেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। তবে তাদের কাছে বিষ্ময় ছিলো- কেন বাংলাদেশে তাদের মত বিদেশিরা আসে না।

আর তাদের অনেকেই যখন বাংলাদেশে এক বা দু’সপ্তাহের জন্য আসেন- ভালোলাগার টানে থেকে যান একমাস, কখনো কখনো তারও বেশি সময়।

নিউজিল্যান্ডের তরুণ মিউজিশিয়ান জোয়েল ভিনসেন বাংলাদেশে এসেছিলেন মাত্র এক সপ্তাহের জন্য। কিন্তু আসার পর দেশটা এত ভালো লেগেছে, থেকে গেলেন এক মাসেরও বেশি সময়।

গেল বছরের শেষদিকে স্পেন থেকে বাংলাদেশ ঘুরতে আসেন কুড়িজনের একটি বিদেশি পর্যটক দল। তাদের টিম প্রধান মিগুয়েল মাসিয়েস বাংলাদেশ নিয়ে তার মুগ্ধতা জানান এভাবে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেখানে কোনো তাজমহল নেই, রাজস্থানও নেই। কিন্তু দেশটির রাস্তায় রাস্তায় জীবনের জয়গান আছে, অফুরন্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য আছে, জীবন আছে, গঙ্গা-যমুনা আছে, ম্যানগ্রোভ আছে। এটি একটি দেশ, যেটিকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব রিভার’, বলা হয় ‘ল্যান্ড অব লাইফ’। ’
এই কুড়িজনের দল এর আগে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে ভ্রমণ করেছিলো।

সুইডেনের অধিবাসী জেনি জাস্টাফসন কাজ করেন লেবাননের একটি নিউজ এজেন্সিতে। গতবছর বাংলাদেশে ট্রাভেল করতে এসে এতোটাই অভিভূত হয়েছিলেন যে, বাংলাদেশকে নিয়ে অসাধারণ ব্লগ লিখেছিলেন। তার শিরোনাম ছিলো ‘From A to Z – what to love about Bangladesh’
এতে জেনি প্রতিটি ইংরেজি অক্ষরে বাংলাদেশে তার দেখা বৈচিত্র্য তুলে ধরেছেন যা যে কোন বিদেশিকে আকর্ষণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্রুস গত বছরের প্রথম দিকে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের অনেক স্থানে। তারপর তার ভ্রমণ নিয়ে যে ব্লগ লিখেছিলেন তাতে পৃথিবীর সু্ন্দর জায়গা বলেছিলেন বাংলাদেশের সুন্দরবনকে। সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গা বলে উল্লেখ করেছিলেন শ্রীমঙ্গলকে। তার দেখা আরও অসাধারণ জায়গা ছিলো সেন্টমার্টিনসহ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রাম।

তবে তার লেখার প্রথম কথাই ছিলো-  Get Over Here Sooner than Later!

রেনাউড নামে ৩৫ বছরের এক যুবক বাংলাদেশে ঘুরে গেছেন সপ্তাহ দুয়েক। তিনি কাজ করেন ফ্রান্সের এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে।

‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’ নামে ট্রাভেল প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি দুটো ট্যুর নিয়েছেন। শ্রীমঙ্গল আর বরিশাল ব্যাকওয়াটার।

৩২টি দেশ ভ্রমণ করা রেনাউড নিজ দেশ ফ্রান্সে ফিরে যাবার সময় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, ‘না এলে বিরাট মিস করতাম’।

কেননা যাত্রা শুরুর আগে রেনাউডের কলিগরা বাংলাদেশে যাচ্ছে শুনে নিষেধ করেছিলো। ওরা বলেছিলো- ও দেশটা ডেনজারাস, যেও না। তবু রেনাউড বাংলাদেশে এসেছেন এবং তার ভাষায় বাংলাদেশের মানুষকে সবচে ভালো, সৎ আর অতিথি পরায়ণ মনে হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে তার টাকা রাস্তায় পড়ে যায়। এক লোক কুড়িয়ে পেয়ে সেটা ফেরৎ দেয়। রেনাউড জানান, তার নিজের দেশেও এটা  চিন্তা করা যায় না।

কোন এক গ্রামে গিয়ে এক চা দোকানে চা খেলেন ২ কাপ। সিগারেট খেলেন ১টা। বিল দিতে গেলেন। কিন্তু বিল নেবে না দোকানি। কারণ তিনি বিদেশি মেহমান।

এটা ছিলো ওর জন্য বিশাল এক বিষ্ময়। রেনাউড পাশের দুয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেসব দেশে ২ মিনিট কথা বলার পরই হাত পেতে দেয় টাকার জন্য।

বাংলাদেশে ট্যুরিস্ট এতো কম আসে কেন রেনাউডের কাছে সেটা এক বিষ্ময় বটে। তিনি জানান, মায়ানমার একটা ডেনজারাস দেশ। তবু লাখো ট্যুরিস্ট যায়। আর এ দেশটা এতো সুন্দর, এতো নিরাপদ তবু ট্যুরিস্ট নেই কেন। তখন তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেশে ফিরেই বাংলাদেশ নিয়ে লেখালেখি শুরু করবেন।

তবে তার একটা জিনিসই খারাপ লেগেছে-দোকানিরা চা এর কাপ ও ভাতের প্লেট নোংরা পানি দিয়ে ধোয় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

রেনাউড আবার আসবেন বাংলাদেশে। তখন যাবেন উত্তরবঙ্গ আর সুন্দরবন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬
এসএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।