ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বিভীষিকাময় সুন্দরে-৫

গা-ভর্তি জোঁক নিয়ে আকাশছোঁয়‍া কেওক্রাডংয়ে

রিয়াসাদ সানভী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
গা-ভর্তি জোঁক নিয়ে আকাশছোঁয়‍া কেওক্রাডংয়ে ছবি: শামীমা মিতু

পূর্ব প্রকাশের পর

বান্দরবান থেকে ফিরে: আবার ব্যাগপ্যাক কাঁধে নিলাম। বগালেক থেকে চিংড়ি ঝিরি পর্যন্ত যা চোখে পড়লো তা এক কথায় অভাবনীয়।

মনে হলো ঝরনা রাজ্যে প্রবেশ করেছি। পাহাড়ের প্রত্যেকটি খাঁজ থেকে পানির ধারা গড়িয়ে নামছে। এমনকি যে চড়াই ধরে একটু একটু করে উঠছি তা থেকে পানি নামছে। অন্য সময় যারা যাবেন তারা এ গল্প বিশ্বাস না করলে কিছুই করার থাকবে না।

চিংড়ি ঝিরি অবধি যেতেই দিনের আলো মোটামুটি শেষ হয়ে এসেছে। সেখানে পায়ের গোড়ালিতে জোঁক আবিষ্কার করলাম। তেমন পাত্তা দেইনি। এর ফল টের পেয়েছিলাম দার্জিলিং পাড়ার আগে যাত্রী ছাউনিতে বসে। ছাউনিতে যখন পৌঁছালাম তখন পুরোপুরি আঁধার নেমে এসেছে। এখানে যারা একদণ্ড বসেছেন তারা জানেন এ ছাউনিতে বসলেই বাতাসের অভাবে আইটাই করা পৃথিবীতেও হাওয়া এসে ভর করে। তাতে গা জুড়িয়ে যাওয়াতে বেঞ্চিতে একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলাম।

হঠাৎ কি মনে করে টর্চ জ্বেলে পায়ের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। ঠিক একই জায়গায় তিনটি জোঁক ধরেছে। ব্যাটারা রক্ত খেয়ে একেবারে ঢোল হয়ে আছে। তাদের তাড়ালেও রক্ত ঝরলো বেশ খানিকটা। এর মধ্যে অনেকটা সময় কেটে গেছে এখনও অন্যদের আসার নাম গন্ধ নেই। অনেকক্ষণ পর তারা এসে পৌঁছালে আসল ঘটনা জানা গেলো।

সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হলো জুয়েল থেওটোনিয়াসের ‘ইয়েতে’ জোক ধরেছিলো। সেখান থেকে অবিরত রক্ত পড়ছে। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। শেষমেষ ম্যালা কসরতের পর কমলো বটে কিন্তু থামলো না। আমরা তাড়াতাড়ি কেওক্রাডংয়ের পথে রওয়ানা হলাম। সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত খাবার, আশ্রয়, জোঁকের কামড়ের চিকিৎসা কোনটাই পাওয়া যাবে না। তাই আর পথে দার্জিলিং পাড়া দাঁড়ানো হলো না।

সেভেন সামিট বিডিতে থাকা পাহাড়গুলোর মধ্যে কেওক্রাডংয়ে উঠার পথটি সম্ভবত সবচেয়ে সহজ। প্রশস্ত চড়াই ধরে একটানা উঠে যেতে হয় শুধু। বগালেকের পর রাস্তাটুকুও অবাক করেছিলো। মুনলাই পাড়া থেকে বগালেক উঠতে যে পাহাড় ভাঙার দঙ্গল পেরোতে হয়েছিলো এ পর্যন্ত আসতে তার ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি। ব্যাপারটা বেশ আশারও বটে।

ভারী বৃষ্টি ভেতরের পথগুলোর অবস্থা তাহলে খুব খারাপ করতে পারেনি। দার্জিলিং পাড়া থেকে কেওক্রাডং চূড়া পর্যন্ত যেতে মোটামুটি এক ঘণ্টা লেগেছে। বরাবরের মতোই লালা বম আর তার স্ত্রীর হাসিমুখ অভ্যর্থনা পেলাম। চূড়ায় প্রচণ্ড বাতাস। এই শ্রাবন মাসের রাতেও এখানে ভালোই ঠাণ্ডা। মেঘ এসে গা ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছিল। মাত্র একদিন আগেই পূর্ণিমা ছিলো। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে এক মাথা নষ্ট করা চাঁদ মাঝে মাঝেই মুখ দেখিয়ে গেলো। এর মধ্যেই লালা বমের কটেজ ঘরের দোতলা আমাদের থাকার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো।

লালা বম জয়েল ভাইয়ের ‘ইয়েতে’ বিশেষ এক মলম লাগিয়ে দিলো। সারারাত লাগিয়ে রাখতে হবে। রাতের খাবারের মেন্যু গরম খিঁচুড়ি আর ডিম ভুনা। সেই সকাল সাড়ে দশ এগারটায় হাঁটা শুরু করেছিলাম এখন বাজে সাড়ে নটার মতো। দুর্ভিক্ষ পীড়িত হয়ে আছে পুরো শরীর। আস্ত চাঁদটা গিলে খেতে না পারলেও আস্ত একখানা খাসি খেয়ে ফেলতে পারি। এমন সময় সামনে ধোঁয়া ওঠা খিঁচুড়ি আর ডিম এনে দিলে কি অবস্থা হতে পারে। দু’মিনিটের মধ্যে প্লেট সাবাড়। বোধহয় তিন প্লেট মতোন খেয়েছিলাম।

তারপর কটেজে আরামের বিছানায় ঘুমানোর পালা। সারা শরীর ব্যথা থাকায় পেইন কিলার খেয়ে নিলাম। পরের দিন শুরু হবে আমাদের মূল অভিযান। তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবো তো। ঘুমের অতলে হারিয়ে গেলো কেওক্রাডংয়ে আমাদের রাত।   

বাংলাদেশ সময়: ০২২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৫
এএ

** এভারেস্ট জয়ের ক্লান্তি নিয়ে যৌবনবতী বগালেকে
** ভরাযৌবনা শঙ্খ নদী হয়ে বগা লেকের পথে
** ২১ কিমি হেঁটে অবশেষে রুমায়!
** পাহাড়ের আড়ে বিধ্বস্ত বান্দরবানের অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।