ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

যাত্রী হয়রানি

ইউনাইটেডকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৪
ইউনাইটেডকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

ঢাকা: ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের যাত্রী হয়রানির ইতিহাসে যোগ হলো আরও একটি লজ্জার পালক।

এবার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ হাতেনাতে প্রমাণ হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য হলো ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

  

ঘটনার সূত্রপাত, গত শুক্রবার। সৌদি আরব প্রবাসী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের মো. শাহজাহান  ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে সপরিবারে দেশে ফেরেন এদিন। দুপুরে শাহজালালে নেমেই তিনি পড়েন লাগেজ বিড়ম্বনায়। তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর ৮টি লাগেজের মধ্যে ৫টি লাগেজ পান তিনি। অবশিষ্ট ৩টি লাগেজের হদিস না পেয়ে বিমানবন্দরে অনেক্ষণ ছোটাছুটির পর সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তার খোঁজ পান তিনি। ওই কর্মকর্তা তাকে জানান তার (শাহজাহান) ৩টি লাগেজ এসে পৌঁছেনি (লাগেজ লেফট বিহাইন্ড)। লাগেজ পৌঁছালে পরবর্তীতে তাকে ফোন করে জানানো হবে।

এরপর রোববার ইউনাইটেডের লস্ট এন্ড ফাউন্ড বিভাগ থেকে মো. শাহজাহানকে ফোন করে তার লাগেজগুলো নিয়ে যেতে বলা হয়। ফোন পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভাড়া করা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে সোমবার লাগেজ ফেরত নিতে আসেন তিনি। কিন্তু এবারও হয়রানির শিকার হতে হয় তাকে। তিনটি লাগেজের মধ্যে তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় দু‘টি লাগেজ। অবশিষ্ট লাগেজের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে জানানো হয় ওই লাগেজটি এখনও পৌঁছেনি। পৌঁছালে আবারও তাকে ফোন করা হবে।

এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় যাত্রী শাহজাহানের। তিনি এয়ারলাইন্স কর্মকর্তার কাছে এর ব্যাখ্যা দাবি করেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি আগেই পরিষ্কার করে তাকে জানানো হলে একবারেই তিনটি লাগেজ নিয়ে যেতেন তিনি। এভাবে বারেবারে তাকে হয়রানির শিকার হতে হতো না।

এনিয়ে ইউনাইটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শাহজাহানের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে বিমানবন্দরে কর্তব্যপালনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফের দৃষ্টিগোচর হয় বিষয়টি। পরে মোবাইল কোর্ট করে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যাত্রী শাহজাহানের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান ম্যাজিস্ট্রেট।

যাত্রী হয়রানির অভিযোগ প্রমাণ হওয়া সংশ্লিষ্ট ইউনাইটেড কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। পাশাপাশি  আদায়কৃত জরিমানার অর্থের ২৫% ক্ষতিগ্রস্তকে প্রদানের নির্দেশ দেন তিনি।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মুহাম্মদ ইউছুফ এর সাথে ফোনে যোগাগোগ করা হলে তিনি  জানান, লাগেজ হয়রানি শাহজালালে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যে কোনো ফ্লাইটে লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হতেই পারে। তবে এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের কাছে প্রত্যেকটি ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার এবং লেফট বিহাইন্ড লাগেজের লিস্ট থাকে। নিয়ম অনুযায়ী লাগেজ বেল্টে দেয়া শুরু হলে লেফট  বিহাইন্ড লাগেজধারী প্যাসেঞ্জারদের ইনফর্ম করার কথা তাদের। জনাব শাহজাহানকে এ ধরনের ইনফরমেশন না দেয়ায় বেল্টের শেষ লাগেজটি নামানো পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে, তিনি সপরিবারে হয়রানির শিকার হয়েছেন; যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪৫ ধারা মতে প্রতিশ্রুত সেবা প্রদানে ব্যর্থতায় দণ্ডনীয় অপরাধ।

অপরদিকে লাগেজগুলো এসেছে খবর দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ঢাকায় ডেকে এনে ৩টির মধ্যে দু’টি লাগেজ ধরিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট লাগেজ পৌঁছলে আবার আসতে বলাও আরেক ধরনের হয়রানি। দু’টি লাগেজ পৌঁছানোর খবর পেলে তিনি আসতেন না, তিনটি লাগেজ  এক-বারে নেয়ার জন্যই আসতেন। ভোক্তা অধিকার আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী ইহা অবহেলাজনিত অর্থহানির অপরাধ।

সঙ্গতকারণে উভয় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়, বর্ণিত আইনের ৪৫ এবং ৫৩ ধারামতে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয় এবং ৭৬ ধারার বিধানমতে আদায়কৃত অর্থের ২৫% অভিযোগকারীকে প্রদান এবং ৭৫% সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যাত্রী হয়রানি ‍রোধে সচেতন। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ভবিষ্যতেও এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী হয়রানি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনঅনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি  সবাই সচেতন ও আন্তরিক হলে এ ধরনের যাত্রী হয়রানি কমে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।

তিনি আরও জানান, যাত্রীর লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে হয়রানির মাধ্যমে বিমান যাত্রী পরিবহনের আন্তর্জাতিক আইন ভেঙ্গেছে ইউনাইটেড। একই সঙ্গে লঙ্ঘন হয়েছে  বাংলাদেশের ভোক্তা অধিকার আইনও। তাই আইন অনুযায়ী ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অপারেশন পরিচালনার শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স। ভাঙ্গাচোরা এয়ারক্রাফটে যাত্রী বহনের পাশাপাশি যাত্রীদের প্রতি ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের অবহেলা চরম পৌঁছে গেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি ইউনাইটেডের। বরং দিন দিন  সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের অবহেলা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ এই জরিমানার ঘটনা তারই জ্বলন্ত প্রমাণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।