ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

ইচ্ছে করেই পঙ্গু রাখা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৪
ইচ্ছে করেই পঙ্গু রাখা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ইচ্ছে করেই পঙ্গু করে রাখা হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগকে। বছরের পর বছর ধরেই এই খাতটিকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে কিছু গোষ্ঠীর হীন স্বার্থে।



বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করছে না, তারা এটি চালাতে পারবে না-এই ধুয়া তুলে যাতে এটিকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যায় সেজন্যই কাজ করছে বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চলছে না এই অযুহাত দিয়ে এরই মধ্যে এই বিভাগটিকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ।

যে সংখ্যক লোকবল ও সরঞ্জাম প্রয়োজন তার অর্ধেকও নেই। স্বল্প লোকবল ও সরঞ্জাম দিয়েই বছর বছর ধরে চলছে বিভাগটি। বর্তমানে যে জনবল রয়েছে তাদের সবাই চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। একেকজন কর্মী ২০/২৫ বছর ধরেই চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতিতে কাজ করছেন। কিন্তু বিমানের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টির দিকে কখনোই নজর দেননি।

এক হিসাব মতে, বিমানে এই বিভাগে বর্তমানে লোকবল রয়েছে ১২২৭ জন। অথচ বিমানের হিসেবেই বিভাগটি যথাযথভাবে চালাতে নূন্যতম ২ হাজার ৫৪০ জন লোক প্রয়োজন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের ৯টি পুশকার্ডের মধ্যে ৫টি অকেজো। এর মধ্যে দু’টি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ৠাম্প কোচ, টো-ট্রাক্টর, হাই লিফটার, কনটেইনার লোডার, প্লেট ট্রলির স্বল্পতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রায়ই এসব সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু সময়মতো মেরামত করা হয় না। এতসব সরঞ্জামের স্বল্পতায় সময়মতো সেবা দিতে পারছে না বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগ।  

বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসি ভ্যান, গ্রাউন্ড জিপিইউ-এয়ার পাওয়ার, র‌্যাম্পকোচসহ যেসব সরঞ্জামের স্বল্পতা রয়েছে তা কাটাতে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

বিমান শ্রমিক দলের সভাপতি ফিরোজ উজ জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময়ই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের আধুনিকায়ন ও পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগের কথা বলে আসছি। কিন্তু বিমানের শীর্ষ কর্তারা কখনোই এই বিভাগের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি।

বিমান শ্রমিক লীগ সভাপতি মশিকুর রহমানের মতে, বিমানের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কখনোই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতের উন্নয়ন চাননি। যে কারণে বছরের পর বছর ধরে এই খাতটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩টি বিদেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে, কার্গো ফ্লাইট চলছে ৮টি।  

সপ্তাহে বিমান ১৬৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো করে ২০০টি। কার্গো ফ্লাইট ১৫টি। বিমান বছরে এই খাত থেকে ৫০০ কোটি টাকা আয় করে থাকে।     

২০১১ সালে আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং নামে একটি ভারতীয় কোম্পানি বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগে কত লোকবল প্রয়োজন তার ওপর একটি প্রতিবেদন দেয়। এজন্য আর্নেস্টকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের গ্রাউন্ড সার্ভিসের জন্য বিদ্যমান লোকবলের চেয়ে অনেক বেশি কর্মীর কথা বলে। বিমান অবশ্য এজন্য ২৫৪০ জন লোক চেয়েছে। অথচ এই শাখায় লোক হেলপারসহ লোক রয়েছে মাত্র ৭২২ জন।  
কার্গো শাখায় বর্তমানে লোক রয়েছে হেলপারসহ মাত্র ২৮০ জন। বিমান এই শাখায় লোক চেয়েছে ৬৭৯ জন। আর আর্নেস্ট শুধু সুপারভাইজার পদেই লোক চেয়েছে ২৯৫ জন।

গ্রাউন্ড সার্ভিস ইকুইপমেন্ট শাখায় বর্তমানে লোক রয়েছে মাত্র ২২৫ জন। বিমান এজন্য লোক চেয়েছে ৪৪১ জন আর আর্নেস্ট চেয়েছে ২৮৮ জন।     

প্রতি শিফটে ৩৫০ জন লোক প্রয়োজন। অথচ সেখানে লোক রয়েছে মাত্র ৬০ জন। বড় ধরনের উড়োজাহাজে ৩০ জন লোক প্রয়োজন হয়। ছোট উড়োজাহাজে ১৯ জন। অথচ বিমান এখানে মাত্র অর্ধেক লোকবল দিতে পারছে। ১৯৮৪-৮৫ সালে ১০৬৬ লোকবল ছিল। এতো বছর পরে বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়েছে ২০০ জনেরও কম।  

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ ও বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক লোকবল দিয়ে ভালো সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। ১৮/২০ বছর ধরেই চুক্তি ভিত্তিক কাজ চলছে। এটি টেকনিক্যাল জব। যারা এই বিভাগে কাজ করছেন তাদের ধারাবাহিক ট্রেনিংয়ের মধ্যে রাখা দরকার। কিন্তু আমরা আদৌ তা করতে পারছি না। ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতার দায়ে সেবা দিতে পারছি না। বিমান যদি এটি চালাতে না পারে তাহলে বিমানের হাতে এটি রাখার কোনো যুক্তি নেই।

কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এরই মধ্যে র‌্যাম্প কোচ টো-ট্রাক্টরসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে। অচিরেই এগুলো গ্রাউন্ড সার্ভিসে যুক্ত হবে।

ইচ্ছে করে এই বিভাগটিকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কি হয়েছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা কাজ করছি।   

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।