ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পর্যটন

হাওরে ‘জলনিবাস’

মেহেদি হাসান শিপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
হাওরে ‘জলনিবাস’

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ফিরে: পাহাড়, সাগর, ঝর্ণা দেখা হয়েছে। শুধু ঘোরাফেরার তালিকায় নেই হাওর।

কয়েক বছর ধরে শুনছিলাম যে হাওরে ভেসে বেড়ানো নৌকার চালে বসে বৃষ্টির মৃদু ছন্দ শুনতে নাকি অপরূপ লাগে। সেটি এমন এক অনুভূতি যার অভিজ্ঞতা না হলে নাকি বিশ্বাস করাই কষ্টকর।

বিষয়টা কি আসলেই তাই নাকি মিথ্যা তা জানতে চলে গেলাম সেই অভিজ্ঞতা নিতে। আর প্রমাণও পেলাম সেই অসাধারণ অনুভূতির। সেখানে মনে হয় চারদিকে জলে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ। সেই দ্বীপে নৌকাগুলো যেন একেকটা বাড়ি, নেই কোনো রাস্তাঘাট। সেই সঙ্গে ভরা বর্ষা যেন তার যৌবন পুরোটা ঢেলে দিয়েছে হাওরে।

মূলত সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ৫১টি বিলের সমন্বয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। বর্ষায় ভ্রমণে এটি এখন পর্যটকদের প্রথম পছন্দ। টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা জলরাশি হচ্ছে এর আসল সৌন্দর্য। এছাড়া টেকেরঘাট ও শহীদ সিরাজ লেকে (নীলাদ্রি) সন্ধ্যা কাটান পর্যটকরা। আরও আছে শিমুলবাগান, বারিকটিলা, জাদুকাটা নদীসহ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বড় বড় পাহাড়গুলো। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে।

কয়েক বছর আগেও এই হাওরে ভ্রমণ, থাকা সবকিছুই ছিল বেশ কষ্টকর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে হাওর ভ্রমণের জন্য এখন মিলছে নানা সুযোগ-সুবিধা। আর এটি ভ্রমণকে করেছে সহজ ও আরামদায়ক। পর্যটকদের জন্য এখন সেখানে মেলে বিভিন্ন মানের হাউসবোট। সেই বোটগুলোতে থাকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।

নিজের প্রথম হাওর ভ্রমণ। তাই চাচ্ছিলাম না কোনো খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হই। তাই আগে থেকেই সব বন্দোবস্ত করে নিয়েছিলাম। হাওরে আমাদের বাসস্থান ‘জলনিবাস’ হাউসবোট। উন্নতমানের হাউসবোটগুলোর তালিকায় সেটি প্রথম কাতারে পড়ে।

সাধারণত ভালো মানের হাউসবোটগুলোতে থোকে সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা (হাওরের মাঝে জেনারেটর), কেবিনের সঙ্গে অ্যাটাচ ওয়াশরুম, দক্ষ সুকানি (মাঝি), পরিপাটি লবি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছাদ, দক্ষ ট্যুর গাইড ও আপ্যায়ন।

হ্যাঁ, ভাবতে পারেন আমি খাবারের কথা কেন বলছি না। এটা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না। কোথাও ঘুরতে গেলে মূলত সবার আগে খাবার নিয়ে ভাবতে হয়। কিন্তু টাঙ্গুয়ার বিলাসে খাবার ছিল অন্য ধরনের। সকালের খিচুড়ি, ডিমের কোপ্তা, আঁচার এখনও মুখে। আর দুপুর-রাতের মাছ, মুরগি, সবজি, ভর্তা, ডালের স্বাদ বলার অপেক্ষা রাখে না। হাউজবোটের রাঁধুনি তার পরম যত্নে ও এক মুখ হাসিতে প্রতি বেলার খাবার খাইয়েছেন। আর সারাদিনের জন্য আনলিমিটেড চা-তো ছিলই।

নানা বয়সী মানুষের আনাগোনা হয় নয়নাভিরাম টাঙ্গুয়ার হাওরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে নৌকা, হাউসবোটের সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাওরে ভাসলেই দেখা যায়- কেউ নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিচ্ছেন, সারি সারি করচগাছের ফাঁকে ফাঁকে হ্যামকে ঝুলছেন, ছবি তুলছেন, উল্লাস করছেন, করচগাছের ছায়ায় নৌকায় বসে কেউ শুনছেন হাসন রাজার গান, কেউবা শাহ আবদুল করিমের।

সবচেয়ে বেশি মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা হয় রাতে। দূর থেকে হাউসবোটগুলোর ঢিবি ঢিবি আলো হাওরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। নৌকার ছাউনিতে বসে হয় জোছনা বিলাস। যা পথের সব ক্লান্তি শেষ করে দেয়। গানের তালে নৌকা দুলাতে থাকে বিশাল জলরাশি। মাথার উপরের ওই আকাশের দিকে তাকিয়ে ভালোবাসার মানুষ গেয়ে উঠে ‘এই চাঁদ খুঁজবে না উত্তর, একবার যদি বলো আমাকে, আমি থাকবো না নির্বাক.....আমি তারায় তারায়, রটিয়ে দেব তুমি আমার। ’ সেই গান কান পেতে শোনে পাশের মেঘালয়ের পাহাড়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।