ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নিয়ে দর্শকের প্রশ্ন, ফারুকীর উত্তর

উপসংহার গল্পের প্রাণ সংহার করে

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
উপসংহার গল্পের প্রাণ সংহার করে বাংলানিউজ কার্যালয়ে এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আড্ডার মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেছেন নূর

দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলে দেওয়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নিয়ে অনেকের মধ্যে আছে নানা কৌতূহল। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নানারকম মন্তব্য করেছেন, কেউবা আলোচনা ও আড্ডায় তুলে আনছেন ছবিটির কথা।

এসব কৌতূহলকে সামনে রেখে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ নিয়ে দর্শক ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে প্রশ্ন আহ্বান করেছিলো। তারা বিপুল সাড়া দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এজন্য বাংলানিউজ কার্যালয়ে এসেছিলেন জনপ্রিয় এই নির্মাতা। বাংলানিউজের এডিটর-ইন-চিফ আলমগীর হোসেনের সঙ্গে অনেকক্ষণ আড্ডাও দিয়েছেন তিনি। বাংলানিউজের আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়ার জন্য ফারুকীকে ধন্যবাদ। চলুন পড়ি, দর্শকদের কোন কোন প্রশ্নের কী কী উত্তর দিলেন ফারুকী।

শাহীন পারভীন
আগে কখনও ছবি দেখতে গেলে শেষ হওয়ার আগেই আমরা প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হয়ে আসতাম। অনেকদিনআগে হুমায়ুন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ শেষ হওয়ার পর যখন এন্ড টাইটেল উঠছিলো, তখনও আমরা কেউ চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো, আরেকটু যদি দেখতে পেতাম! ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ দেখার পর একই ঘটনা ঘটেছে। মিঠুর চোখে আমরা নিজেদের খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। অসাধারণ একটা ছবি। শুধু মনে হচ্ছিলো, কেনো শেষ হলো! কেনো আরেকটু দেখলাম না!
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : আমি অতটা উন্নাসিক নই যে বলবো, প্রশংসায় কিবা যায় আসে! প্রশংসায় আমার অনেক কিছু যায় আসে। আমি উৎসাহিত হই। যে প্রশ্নটা করেছেন, ছবিটা ওখানে কেনো শেষ হলো? ছবি আসলে ওখানে শেষ হয়নি। আমি তো মনে করি, ওখানে ছবিটা শুরু হয়েছে! তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা। যেখানে আমার এন্ড-টাইটেল উঠলো, সেখান থেকেই ছবিটা আপনার মাথায় ক্রিয়া করতে শুরু করলো। আপনি আপনার মতো একটা এন্ডিং ভাবতে শুরু করলেন বা বিরক্ত হলেন বা যন্ত্রণার মধ্যে পড়লেন অথবা ভালোবাসলেন। এভাবে আমার ছবিটার সঙ্গে আপনার একটা সামাজিক সম্পর্ক স্থাপিত হলো।

নূরউদ্দিন কবির
দরজার সামনে পানি বয়ে যাওয়া এবং তাতে স্যান্ডেল ভেসে যাওয়ার অর্থ বুঝিনি। এটা কী?
ফারুকী : সিনেমার সৌন্দর্য আসলে এখানে যে, একটা দৃশ্য দেখে আপনি যদি অ্যাপারেন্টলি কিছু বুঝতে না-ও পারেন, তাও আপনার চিন্তার মধ্যে এটা কিছু গেঁথে দেয়। এই যেমন জুতা ভেসে যাওয়া আপনার মাথায় গেঁথে রয়েছে। পানিতে জুতো ভেসে যাওয়ার দৃশ্যের মধ্য দিয়ে আমি আসলে খুব সাধারণ একটা বিষয় বোঝাতে চেয়েছি। এটাকে অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমার মনে পড়ছে, একটা আলোচনা অনুষ্ঠানে কয়েকজন বলেছিলেন- এই শটটি দেখে তাদের মনে হয়েছে, উদ্বাস্তু মিঠুর মতো জুতো ভেসে যাচ্ছে। আসলে আমি ওইটাই বোঝাতে চেয়েছি। জলে ভাসা পদ্ম আমি...আমার নাই তো কোনো ঠাঁই। এই যে কচুরিপানার মতো ভেসে চলা। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিঠুর অবস্থা কিন্তু এরকমই। সে শেকড় খুঁজছে, কোথাও শেকড় গাড়তে চাচ্ছে। কিন্তু তার তো শেকড় গাড়ার মতো অবস্থাটা নেই। ফলে সে জলে ভাসা পদ্ম। এক্ষেত্রে হবে-জলে ভাসা জুতো!


ফাহিম হোসেন
হঠাৎ করে মিঠুকে আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানে ঘুমাতে দেখা গেলো কেনো? দোকানের কর্মচারী তার সঙ্গে খারাপ আচরণের কারণ কী? আর কেনই বা সাবেক বান্ধবীর সঙ্গে চাকরি নিয়ে নাটক?
ফারুকী : এই ডিটেইলটা আমি চাইলে দিতে পারতাম। কিন্তু ওই লোকটার ধমকানোর ভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে, মিঠুর প্রতি তার কোন দায় বা মায়া আছে। সে মিঠুকে এতো বকাবকি করছে; কিন্তু তারপরও বের করে দিচ্ছে না। এটাও বলছে যে, তুমি প্রতিদিন এতটার পরে আসবে এবং এতটার পরে বের হয়ে যাবে। তার মানে বোঝা যাচ্ছে, ওই ছেলেটি মিঠুকে খুবই অপছন্দ করলেও থাকার জায়গা দিচ্ছে। দ্বিতীয় প্রশ্নটা হচ্ছে, সাবেক বান্ধবীর সঙ্গে চাকরি নিয়ে কেন সে নাটকটা করলো? আমি তো মনে করি, এ নাটকটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ খেয়াল করেন। তাহলে দেখবেন, এটি ‘টেলিভিশন’-এর এক্সটেনশন। ভাবগত দিক থেকে, গল্পের দিক থেকে না। আমি এখানে কিছুটা ব্যাখ্যা করতে চাই, ‘টেলিভিশন’ বাহ্যিক দিক থেকে প্রগতির সঙ্গে রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্ব। কিন্তু ভেতরে ছবিটি খুব সামান্য একটা জিনিসকে স্টাডি করার চেষ্টা করেছে। সেটা হচ্ছে, আমরা একই সাথে দু’টি জগতে বসবাস করি। একটা বাস্তব জগত, অন্যটি কল্পনার জগত। এক পর্যায়ে তিশাকে মোশাররফ বলে, ‘তুমি আমার সঙ্গে প্রেম না করলে কি হবে? আমি মনের টেলিভিশন চালিয়ে তোমার সঙ্গে প্রেম করবো, বাচ্চার জন্ম দেবো, সংসার করবো। আমাদের মেয়েকে চা খাওয়ানো নিয়ে তোমার সঙ্গে খুনসুটি করবো। ’ এই যে একটা কল্পনার জগতসৃষ্টি করেছে সে, তার কাছে এই জগতটা খুবই শক্তিশালী। তার কাছে বাস্তবের যে জগতটা আছে, সেটা বঞ্চনার। সে ওই মুহূর্তে তার কল্পনার জগতকে অস্বীকার করে কল্পনায় এক আরামের জগত তৈরি করছে। আমি ‘টেলিভিশন’-এ দেখানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের দু’টি জগতের মধ্যে কোনটা বেশি শক্তিশালী? কোনটা আমাদের ওপর বেশি প্রভাব রাখে? কোনটা আমরা বেশি আঁকড়ে ধরতে চাই, এবং কোন পরিস্থিতিতে? ছবির শেষ দৃশ্যে খেয়াল করবেন চেয়ারম্যান সাহেব হোটেলের কক্ষে অবস্থান করছেন। তার সামনে টেলিভিশনে হজ্জ দেখানো হচ্ছে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন। চোখ বন্ধ করে কাঁদছেন। তিনি বলছেন, ‘হে আল্লাহ আমি কল্পনার ঘোড়ায় চড়ে তোমার কাছে পৌঁছে গেছি। ’ তিনি তার শারীরিক অবস্থানকে অস্বীকার করছেন। বলছেন যে, তিনি ওই হোটেলে নেই। কল্পনার ঘোড়ায় চড়ে আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। তার মানসিক অবস্থানটা তখন আল্লাহর দরবারে। শারীরিকভাবে কোথায় আছেন, না আছেন ম্যাটার করছে না। ঠিক ওই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়, শারীরিক জগতের চেয়ে তার মানসিক জগতটা বেশি সত্য। এই স্টাডিটা আমার অনেক বেশি প্রিয়। আমি মনে করি, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ ছবির আত্মা আসলে এই জিনিসটা। উপরে উপরে এটা একটা ভিডিও ক্লিপ পাওয়া, এবং সেটা নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা, সেটাকে কেন্দ্র করে অপরাধের গল্প, আতংকের গল্প। কিন্তু ভেতরে ভেতরে দেখার চেষ্টা আসলে, কোনটা বেশি স্ট্রং? কল্পনার জগত না বাস্তবের জগত? আপনি মিঠুকে যদি দেখেন, পুরো ছবিতে তার যে আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা আছে, তার যে অভিলাষ, এই মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রভাবে, আর যাই বলেন তার মধ্যে যে অভিলাষের জন্ম হয়েছে, এবং সেই অভিলাষ ও আকাঙ্ক্ষার কারণে তার মধ্যে যে বঞ্চনার বোধ তৈরি হয়েছে, অপ্রাপ্তির বোধ তৈরি হয়েছে, এটাকে সে মেকআপ করার জন্যে একটা কল্পনার জগত তৈরি করছে। সে জগতে সে নিজে যেমন বিশ্বাস করতে শুরু করে, অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চায়। আমি মনে করি এটা মিঠু চরিত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। সুতরাং সে যে সাথীকে দেখাতে চায়, ‘দেখো আমি এখন কতবড় হোমড়াচোমড়া, আমার এখন অনেক অবস্থা ভালো, চাইলেই তোমার স্বামীকে চাকরি দিয়ে দিতে পারি। ’  এই যে, কল্পনার বাবল সে তৈরি করেছে। এই বাবলটাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার অস্তিত্বের জন্য।
এখানে আমি আরেকটা জিনিস যুক্ত করতে চাই। এটার সঙ্গে সামাজিক-অর্থনৈতিক কনটেক্সট জড়িত। আমি যখন এর সম্পাদনা করছিলাম, তখন একজন কোরিয়ান নির্মাতার সঙ্গে আমার অনেক দার্শনিক বিষয় নিয়ে কথা হতো। একটা পর্যায়ে আমি তাকে বলেছিলাম- আপনি যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন চায়ের দোকানে যান, দেখবেন মানুষ প্রচুর গল্পবাজি করছে। চাপামারা আমাদের একটা ফেভারিট পাসটাইমের মতো। এটা শুনতে হাস্যকর মনে হয়। কিন্তু আমি ব্যাপারটাকে গভীরভাবে দেখতে চাই। আমি মনে করি এই যে মানুষ বিভিন্ন টি-স্টলে গপ্পো করে। কেউ বলে- আরে তুমি জানো, ঢাকায় আমার মামাবাড়িতে পাহারাদার আছে ১২ জন। তুমি যদি মামার সঙ্গে দেখা করতে চাও, তিন দিন আগে গিয়ে স্লিপ দিয়ে আসতে হবে। মামার গাড়ি আছে ২১টা। মামা সকালবেলা একটা গাড়িতে চড়ে, দুপুরবেলা আরেকটাতে- এই যে বিভিন্ন গল্প। এটা তারা কেন বলে? তার জীবনটা আসলে খুবই বঞ্চনার জীবন। তার জীবনে কোন গ্ল্যামার নাই। কিন্তু সে কল্পনা করে তার জীবনটা ওইরকম গ্ল্যামারাস হোক। তখন সে কি করে, চায়ের দোকানে বসে কল্পনার একটা বাবল তৈরি করে। প্রথমে গল্পটা সে নিজে বিশ্বাস করে। তারপর অন্যদেরকে আহবান জানায়, এই যে আসো আসো, তোমরা আমার এই গল্পটা বিশ্বাস করো। এই যে সে নিজে বিশ্বাস করে, এবং অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করে- এর মাধ্যমে তার প্রাচুর্যের আনন্দটা পাওয়া হয়ে যায়। শারীরিকভাবে না হলেও, মানসিকভাবে সে প্রাচুর্যে না থেকেও প্রাচুর্যের আনন্দ পেয়ে ফেললো। এটা আমি মনে করি, বাস্তবের সত্যের চেয়ে কোন অংশে কম না। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র জন্য কল্পনার সত্যটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।


 রেহমান জিয়া
‘পিঁপড়াবিদ্যা’য় কেনো শুধু শাহবাগের নাম উল্লেখ করা হলো? অন্য জায়গা নয় কেনো? আমার মনে হয়, এমএলএম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের এই ছবিটা দেখা উচিত। আপনি কি মনে করেন?
ফারুকী : আমি তো আসলে চাই এমএলএম ব্যবসায়ী, এবং এমএলএম ব্যবসায়ী নয়, সবাই ছবিটা দেখুক। শাহবাগের নাম বলতে কোন জায়গাটা বুঝিয়েছেন, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। যেখানে মিঠু বলে যে, দারিদ্র্যকে খুঁজতে আপনাকে যেতে হবে ন্যাশনাল মিউজিয়াম শাহবাগে। এখানে শাহবাগের নাম বলা হয়েছে খুব সহজ কারণে, কারণ ন্যাশনাল মিউজিয়ামটা শাহবাগে আছে। আর কোনো কারণ নেই।

সাইন্টার জুয়েল
মিঠুর সাবেক প্রেমিকার জামাইয়ের এমন নতুন অভিনয় কেনো দরকার ছিল?
ফারুকী : এ প্রশ্নের উত্তরটা বোধহয় এর আগেও দিয়েছি যে, কল্পনার জগতের খেলাটা কি জিনিস! আরেকটা উদাহরণ দিতে পারি। আমি যখন বেকার ছিলাম। তখন আমি প্রতিদিন বাইরে বের হতাম কাজের সন্ধানে এবং রাতের বেলায় বাসায় গিয়ে আম্মাকে বিভিন্ন সান্ত্বনা দিতাম। তাকে বলতাম- আমার সঙ্গে অমুকের কথাবার্তা হয়ে গেছে। সামনের মাস থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করছি। সেখান থেকে মাসে ৩৫-৪০ হাজার টাকা আয় করবো। পরদিন গিয়ে বলতাম- আম্মা, কাজ আরেকটু এগিয়েছে। আমরা শো রুম দেখছি। বাস্তবে ওই শো রুমের কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। শুধু আম্মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে আমি প্রথমে ব্যবসার আইডিয়া তৈরি, তারপর ব্যবসায় সাহায্য করতে পারে এমন লোকসৃষ্টি করেছি, শোরুম আবিষ্কার করেছি- সব কল্পনায়। আমার ধারণা, নিজের জীবনের ওই জায়গাটা ছবির এক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব রেখে থাকতে পারে। ধরা যাক, সাথীর স্বামী মিঠুর কাছ থেকে অভিনয়ের হাস্যকর প্রস্তাব শুনে প্রথমে পাত্তা দেয়নি, ভাবেওনি এইরকম কাজ সে করবে। কিন্তু বাসায় গিয়ে তার মনে হলো, বউ তাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না। ক্যাটক্যাট করছে। তখন মনে হলো, চমকটা এভাবে দেই না কেনো, ফোনে একটু টাকা-পয়সার আলাপ করি। তাহলেই তো বউ মনে করবে, কাজ পেয়ে যাচ্ছে। তখনই তার গুরুত্ব আরেকটু বাড়লো। ব্যস, এইভাবে সে খেলার ফাঁদে ঢুকে গেলো।


এসএস শাকিব

ছবিটিতে কি কোনো ডিরেক্টরস কাট থাকবে?
ফারুকী : আমি যেদিন প্রথম প্রিমিয়ার করেছি দুবাইতে, তখন সেটা ছিলো ৯৭ মিনিটের ছবি। এরপর যখন বাছাইপর্বে পাঠাই তখন আমি এটাকে বানাই ৯৫ মিনিটের। এরপর যখন সিঙ্গাপুরে পাঠাই, স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসের জন্য, তখন এটা হয়ে গেছে ৯২ মিনিটের। সেটাই বাংলাদেশে দেখানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৯২-ই ডিরেক্টরস কাট। এরপর আরও কমে যায় কি-না জানি না!

শেখ মনির
সবচেয়ে ভালো লেগেছে ইঙ্গিতপূর্ণ পরিসমাপ্তির জন্য। এ প্রবণতা হলিউড বা ইরানি ছবিতে প্রচুর দেখা যায়। আমার ব্যক্তিগতভাবে এটা খুব ভালো লেগেছে। বিশেষকরে যে দৃশ্যের কথা বলতেই হয়, সমুদ্রের পাড়ে মুখোশের প্রতীকি চিত্রায়ন। অভিনেতার শব্দ উচ্চারণে ও অভিনয়ে কৃত্রিমতা বোঝা যাচ্ছিল; এটা সাবলীলমনে হয়নি। এ দিকটায় আপনি আরও খেয়াল রাখতে পারতেন কিনা? ছবির দ্বিতীয়ার্ধ খেই হারিয়ে ফেলেছে কি আপনার মনে হয়?
ফারুকী : আপনার প্রশ্নের কয়েকটা ভাগ আছে। যে ভাগগুলোতে আপনি প্রশংসা করেছেন, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অভিনয়ের সাবলিলতা না থাকা প্রসঙ্গে আমি জানি না কোন অভিনেতার ব্যাপারে কথা বলেছেন। নির্দিষ্টভাবে না বললে, বোঝা মুশকিল। আমার কাছে তো বেশ সাবলিলই মনে হয়েছে। আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারিয়ে ফেলেছে কি-না। মেনি ম্যান, মেনি মাইন্ডস। দ্বিতীয়ার্ধের ব্যাপারে এ কথা আমি শুনিনি তা কিন্তু না। শুনেছি। অনেকেই বলেছেন যে, প্রথমার্ধে ছবিটা বেশ মজার লেগেছে। দ্বিতীয়ার্ধে এই মজাটা আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। খেই হারিয়ে ফেলেছে। এটা আপনাদের মতামত, আমি শ্রদ্ধা করি। আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে, প্রথমার্ধে অনেক হিউমার ছিল, গল্পে অনেক সম্ভাবনা ছিল। কারণ তখনও মিঠু তার পাখনাগুলো লাগাচ্ছে এবং দেখে আপনি বুঝতে পারেন, গল্প নানান দিকে উড়তে পারে। দ্বিতীয়ার্ধে এসে আপনি আবিষ্কার করলেন, তার যে পাখাগুলো আপনি খুব শক্তিশালী ভেবেছিলেন, ওগুলো আসলে খুব ওইরকম পাখনা না। ডানা ভেঙে, পাখনা ভেঙে পড়ে যাচ্ছে সে গর্তের মধ্যে। দ্বিতীয়ার্ধ আসলে সম্ভাবনার নয়, ক্রমে সংকটের ভেতরে ডুবে যাওয়ার। এ অংশ অনেক বেশি মনস্তাত্ত্বিকভাবে সফোকেটিং। এ কারণে হয়তো এ অংশটা আপনার কাছে সাফোকেটিং লেগেছে। সেটা হতে পারে। মিঠু দ্বিতীয়ার্ধে ওই গর্তের মধ্যে নিজে একা পড়েনি, পুরো গল্পটা নিয়ে পড়ে গিয়েছিলো।
 

ইশতিয়াক আহমেদ, পাবনা
ছবিটি দেখলাম। দ্বিতীয়ার্ধ অসাধারণ হয়েছে। দেখে মনে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের কোনো প্রথম সারির আন্তর্জাতিক ছবি দেখছি। কিন্তু প্রথমার্ধটাকে দ্বিতীয়ার্ধের মতো করলেন না?
ফারুকী : আগেই বলছিলাম যে, ‘ম্যানি ম্যান, ম্যানি মাইন্ডস’। একজন বলছেন, প্রথমার্ধ ভালো হয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধ ওইরকম নয়। আবার আপনার কাছে মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়ার্ধ খুবই আন্তর্জাতিক মানের, প্রথমার্ধ কেনো ওইরকম নয়? আসলে যেটা বললাম, ছবির একটা শরীর থাকে। এই শরীরের পায়ের দিকটা পায়ের দিকের মতো হয়, বুকের দিকটা বুকের দিকের মতো হয়, মাথার দিকটা মাথার মতো; আমার এই গল্পেও কিন্তু একটা শরীর আছে। প্রথম দিকে অনেক সম্ভাবনা। সে মিথ্যাচার করছে, নানান কিছু করছে। সবমিলিয়ে একটা হিউমার তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে সে একটা অন্ধকারের চক্রের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। ফলে তখন আমার ট্রিটমেন্টগুলো আরও বেশি মনস্তাত্ত্বিক হয়ে উঠেছে। সেটা হয়তো আপনার ভালো লেগেছে। সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। প্রথমার্ধের পুরো সময়টা লেগেছে ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য। মানে দ্বিতীয়ার্ধের এই ট্রিটমেন্টে পৌঁছানোর জন্য আমাকে প্রথমার্ধটা ব্যয় করতে হয়েছে।
 
আনোয়ারুল মারুফ, বুয়েট, ঢাকা
‘পিপড়াবিদ্যা’র পোস্টারে দেখা যায়- একটা কালো রঙের পিঁপড়া লালরঙা লিপস্টিকওয়ালা ঠোঁটের ওপর বসে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি মেয়েদের ঠোঁটকে এখানে খাদ্য হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন? আপনি এই ছবিটি দিয়ে কি নারী জাতির অবমাননা করেননি? যদি তা না হয়, তবে ছবিটি দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ফারুকী : না মারুফ ভাই, আমি কাউকে অবমাননা করার চেষ্টা করিনি। ছবিতে কি বোঝাতে চেয়েছি, সেটা ছবি দেখলেই বুঝবেন। আপনি যে পোস্টারের প্রসঙ্গে বললেন, ঠোঁট এবং পিঁপড়া, আমি জানি না এখানে অবমাননার কি দেখলেন। ঠোঁট একটি শক্তিশালী রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বশিল্পকলায়। আপনি অনেক জায়গায় দেখতে পাবেন। এটাকে যদি অবমাননা বলা হয়, তাহলে বহু শিল্পকর্মকে খারিজ করে দিতে হবে। এখানে ঠোঁট ও পিঁপড়া ব্যবহার করার কারণ হিসেবে আমি খাদ্য হিসেবে দেখছি কি-না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যিনি পিঁপড়া, নূর ইমরান মিঠু, তিনি রসগোল্লা হিসেবে ভাবছেন কি-না। তবে তার ভাবনার ফল যে আখেরে ভালো হয়নি, সেটা তো ছবির শেষে বোঝাই যাচ্ছে। আমি তো বলবো, এ ছবিতে আমি অনেক মোরাল থেকেছি। যদিও আমি শিল্পকর্মে মোরালিটি ব্যাপারটা নিয়ে খুব বেশি উত্তেজিত না।
 

ফারাবি আহমেদ
আমার মতে, ‘পিঁপড়াবিদ্যা’য় সামাজিক বক্তব্য বেশি। এর কারণ কী?
ফারুকী : সামাজিক বক্তব্য কেনো বেশি, সেটা আমি জানি না। আমি একটা চরিত্রে কিছু কথা বলতে চাই। কিছু অনুভূতি ছড়িয়ে দিতে চাই। সেটা বলেছি, ছড়িয়ে দিয়েছি। একপক্ষ বলছেন, এতে সামাজিক বক্তব্য একেবারেই নেই। আপনার মতে, সামাজিক বক্তব্য বেশি। আমি দুই মতকেই শ্রদ্ধা করি। সালাম জানাই।

কাউসার আলম, রাহুল কাদের, ভক্ত ধর, যারসিস।
চলচিত্র শিল্প একটি জাতির চেতনা, শিল্প, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। অথচ সারা বিশ্বের স্বীকৃত শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং। এই সিস্টেমের ওপর উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন ভার্সিটিতে ৩-৪ বছর মেয়াদি পড়াশোনার কোর্স চালু আছে। সেখানে ‘পিঁপড়াবিদ্যা’য় এমএলএম প্রতিষ্ঠানকে এতোটা নেতিবাচকভাবে দেখানোর কারণ কী? ছবিটির মাধ্যমে কী বাংলাদেশের সমস্ত এমএলএম প্রতিষ্ঠান নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে? নাকি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এমএলএম নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে?
ফারুকী : জানি না আপনি কোথায় পেলেন আমি এমএলএম সম্পর্কে কটুক্তি করেছি। আমি কটুক্তি কিংবা মিঠা উক্তি কোনোটাই করিনি। একজন ফিল্মমেকার হিসেবে আমার কাজ কোন বিষয় সম্পর্কে কটুক্তি কিংবা মিঠা উক্তি প্রত্যক্ষভাবে করা নয়, কিংবা কোন রায় দেওয়া নয়। আমার কাজ হচ্ছে অবস্থাটা দেখানো। আমরা দেখিয়েছি, স্বপ্নবাজ মিঠু এমএলএম নামক একটা সিঁড়ি পেয়ে যায়, যেটা পেয়ে সেভাবে স্বপ্নের শীর্ষে পৌঁছে যাবে। কিন্তু পৌঁছানোর আগেই নানান কিছু হয়ে যায়। এগুলো তো সত্য। বাংলাদেশে এটা হয়েছে। বহু মানুষ সেখানে গিয়ে টাকা হারিয়েছে। এটাও সত্য। আমার নিজের বোন, বোনের হাজবেন্ডই তো এমএলএম-এ বিনিয়োগ করে ধরা খেয়েছে। ফলে এটা কটুক্তি করার কি আছে? নাকি আপনি চেয়েছিলেন যে, আমি দেখাই এমএলএম-এ বিনিয়োগ করে কেউ ধরা খায়নি, সরকারও এটা বন্ধ করেনি?
 

আরএস সোহান
‘স্পার্টাকাস ৭১’, ‘ফোর টোয়েন্টি’ ‘ঊনমানুষ’ দেখে জানতে চাই, আপনার কী মনে হয়, এখনকার গল্পগুলোর বৈচিত্র অথবা গভীরতা কমে যাচ্ছে?
ফারুকী : আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার মতামতকে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এটা নির্ভর করছে, গভীরতা মাপার মাপকাঠিটা কি সেটার ওপর। কারও কারও কাছে তো মনে হচ্ছে, আমার ইদানীংকার কাজে গভীরতা বাড়ছে। আবার আপনার কাছে মনে হতে পারে, আমার আগের কাজগুলো অনেক বেশি গভীর, মানবিক, জীবনবোধসম্পন্ন। এখন এটা নির্ভর করছে, আপনি কোন কাঠি দিয়ে মাপছেন তার ওপর। আমি দুই মতকেই শ্রদ্ধা করি।


মাসুদ রানা, চট্টগ্রাম
আপনার ছবিটা দেখলাম। একটা অসাধারণ সাইকোলজিক্যাল ড্রামা রয়েছে। কিন্তু ছবিটিতে সম্ভবত একটি বড় রকমের ভুল রয়েছে, যা আমি আবিষ্কার করতে পেরেছি। আপনি কিছু মনে না করলে প্রশ্নটি করতে চাই। মিঠু বহুবার ভিডিওটি দেখেছে এবং সে ভিডিওতে নায়িকার বয়ফ্রেন্ড অয়ন ছিল। কিন্তু মিঠু যখন প্রথমবার অয়নকে দেখল, সে তাকে চিনতে পারল না কেন?
ফারুকী : এ প্রশ্ন বোধহয় আমরা সর্বাধিকবার শুনেছি। আপনি যদি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যান, গেলে দেখবেন, এসব ভিডিও নানানরকম হয়। কিন্তু কিছু ভিডিওতে দু’জনই দু’জনের ছবি তোলে, আবার কিছু ভিডিওতে ছেলেরা ক্যামেরাটা কৌশলে নিজের পেছন দিকে রাখে। ফলে মেয়েটাকে পুরো দেখা যায়, ছেলেটার শুধু পেছন দিকটা দেখা যায়। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এরকম। এখন পশ্চাৎদেশ দেখে মানুষের চেহারা চেনার কোনো উপায় আছে বলে আমার জানা নেই।


তালাত, সিলেট
আপনি এই ছবিতে সাইলেন্সকে অসাধারণভাবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু ছবির শেষে যখন মিঠুর ছোট বোন তাকে প্রশ্ন করে, ‘ভাইয়া, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, নাকি অভিনয় করছ?’,  আমি সহ্য করতে পারিনি। ছবির শেষে আমরা একটা উপসংহার চাই। এই নীরবতা সেই উপসংহার দেয় না। আপনি ছবিটি এভাবে শেষ করলেন কেনো?
ফারুকী : এটাও আরেকটা সর্বাধিক প্রশ্ন যে, ছবির কেনো উপসংহার নেই? উপসংহারকে আমি অন্যভাবে দেখি। আমার মনে হয়, উপসংহার গল্পের প্রাণ সংহার করে। আগের বেশিরভাগ ছবিতে দেখবেন আমার উপসংহার কিন্তু যতিচিহ্নের মতো না। আমি একটা জায়গায় পৌঁছাই, শেষ করে দিই। শেষ করে দেওয়ার পরও গল্পের রেশটা রয়ে যায়। আমি এভাবেই গল্প বলতে পছন্দ করি। ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র ক্ষেত্রে শেষটা কি হতে পারতো? একটা দেখানো যেতো যে মিঠু পাগল হয়ে গেছে। আরেকটা হতে পারতো, মিঠুকে দেখিয়ে দেওয়া যে সে অভিনয় করছে। এতে গল্পের কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি হতো না। সে চারপাশে এমন ফাঁদ তৈরি করেছে, শেষে এসে সে আবিস্কার করছে সে নিজেই একটা বড় ফাঁদে আটকে পড়ে আছে। সেই ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য তাকে পাগলের অভিনয় করতে হচ্ছে। অথবা সে যদি আসলেই পাগল হয়ে যায়, তাহলেও তো সেই একই ব্যাপার। ফাঁদেই আটকা পড়েছে সে। পাগলের অভিনয় করলেও, তার অবস্থা করুণ। সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেলেও তার অবস্থা সেই করুণই থাকছে। দু’টোই উপসংহার হতে পারে। আমি একটা ব্যাপার খুব পছন্দ করি, একটা গল্পের ডালপালা অনেক বিস্তৃত করে এমন জায়গায় ছাড়তে চাই, যেখানে দর্শক নিজের মাথাটা খাটিয়ে নিজেই একটা উপসংহার তৈরি করে নেবে। আমি বিশ্বাস করি, আমার দর্শক যেমন বিনোদন নিতে জানে, হাততালি দিতে জানে, তেমনি চিন্তা-ভাবনা করে একটা উপসংহার তৈরি করে নিতেও জানে।
 

আরিফুর রহমান, ঢাকা
সমালোচক ও নিন্দুকদের সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
ফারুকী : হা হা হা হা... আমি বুঝলাম না, আপনি লাখ লাখ ভালোবাসার মানুষকে বাদ দিয়ে গুটিকয় সমালোচক এবং নিন্দুক নিয়ে কেনো প্রশ্ন করলেন? আমি তো অনেক বেশি কৃতজ্ঞ বাংলাদেশের মানুষের কাছে। একজন ফিল্মমেকার হিসেবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, আমি তো মনে করি এটা আল্লাহর রহমত। ফলে আমি সমালোচক-নিন্দুকদের নিয়ে ভাবি না। তারা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। সত্যি কথা বললে সমালোচকদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। আপনি দেখবেন প্রথম থেকেই আমার সকল সমালোচনার উত্তর দিচ্ছি। আমি মনে করি, কেনো কাজ করছি- সেসব প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে রয়েছে। নিন্দুকদের প্রতি আমার সহানুভূতি রয়েছে এ কারণে যে, নিন্দা খুব কঠিন একটা কাজ। আমি অনেক নিন্দুককে চিনি যারা ১৫-১৬ বছর ধরে আমার নিন্দা করে যাচ্ছে। এতদিন ধরে একজন মানুষের প্রতি ঘৃণা, রাগ পুষে রাখা; এটা কিন্তু অনেক কষ্টের কাজ! আপনি এই মানুষগুলোর কষ্টের কথা একটু ভাবেন। তারা কষ্ট করে পেশাদার নিন্দাকারীর মতো বছরের পর বছর ধরে একই চাকরি করে যাচ্ছেন। এ চাকরিটা কিন্তু কঠিন চাকরি। এতে তাদের আত্মা কষ্ট পায়। আমি বরং তাদের প্রতি সত্যি সত্যি সহানুভূতি বোধ করতে চাই। আমি আশা করি, এ চাকরিটা তাদের বেশিদিন করতে হবে না। আর যদি করেনও, তাহলে সুস্থ শরীরে যেন করতে পারেন। আমি অনেক ছবি দেখি, বই পড়ি, যেগুলো আমার ভালো লাগে না পর মুহুর্তেই আমি ভুলে যাই সেগুলোর কথা। কিন্তু এই মানুষগুলোর অবস্থা দেখেন- তারা কিছুতেই আমাকে ভুলতে পারে না। ছবি বের হলে, তাকে হলে যেতে হয়। চরম ঘৃণা নিয়ে পুরো ছবিটা দেখতে হয়। তারপরেও মুক্তি নাই। বাসায় এসে সেটা নিয়ে লিখতে হয়। বোঝেন কত কষ্টের কাজ এটা! চাইলেও তারা আমাকে এড়াতে পারে না। সে আমার হাত রাখে হাতে। শেষ কথা, পৃথিবীর কোথাও এমন একটা মতবাদ, সংগীত, চলচ্চিত্র দেখাতে পারবেন না যার পক্ষে-বিপক্ষে মত নেই। ঘুরে-ফিরে আবার আমি ইতিবাচক জায়গায় আসতে চাই- পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষী মানুষের তুলনায় নিন্দুকদের সংখ্যা এতই কম যে, তাদের দিকে আমাদের তাকানোরও প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ