ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

সাঁতরে সিলেট থেকে ভৈরব যাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
সাঁতরে সিলেট থেকে ভৈরব যাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।

সিলেট: একাধিক জাতীয় রেকর্ডের পরও অবিরাম সাঁতারু হিসেবে বিশ্বরেকর্ডও করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। সেই ছাত্রজীবন থেকে তিনি অবিরাম সাঁতারু।

তবে এবার প্রায় ৭০ বছর বয়সে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়তে সাঁতারে নামছেন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা।  এ লক্ষ্যে তিনি সুরমা কিনব্রিজ পয়েন্ট সংলগ্ন চাঁদনিঘাট থেকে সাঁতার শুরু করবেন সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৬টায়।

শনিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে নগরের মেন্দিবাগস্থ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য।

এ সময় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সিলেট জেলা ইউনিট কমান্ডের সর্বশেষ কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলসহ বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
 
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলেন, আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ২০১২ সালের মে মাসে অবসর গ্রহণ করলেও এখনো কনসালট্যান্ট হিসেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অধিনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কাজ করছি। ছাত্রজীবন থেকে সাঁতার আমার নেশা। আমি একজন অবিরাম শৌখিন সাঁতারু।

তিনি বলেন ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট এবং ১৯৭৬ সালে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট অবিরাম সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করি। ২০১৮ সালে ১৮৫ কিলোমিটার দূরপাল্লার সাঁতার কাটি, যা ছিল আরেকটি স্থানীয় রেকর্ড। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার কেটে রেকর্ড করায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে রূপার নৌকা দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সাল থেকেই আমি দূরপাল্লার বা অবিরাম সাঁতারের সঙ্গে জড়িত। সেবার নিজের থানা নেত্রকোনার মদনে টানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলাম। তারপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশকে স্বাধীন করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ১৯৭৩ সালে সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে টানা ৮২ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলাম।

এছাড়াও সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন পুকুর, ধোপাদিঘীতে, সুনামগঞ্জ এবং ছাতকেও তিনি দীর্ঘসময় অবিরাম সাঁতার কেটেছেন বলে জানান।
 
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৯ সালে একুশে পদক পাওয়া এই শৌখিন সাঁতারুর এবারের লক্ষ্য ২৮৫ কিলোমিটার সাঁতার কাটা। যদি এতে তিনি সফল হন তাহলে বয়স্ক সাঁতারু হিসেবে এটা একটা বিশ্বরেকর্ড হবে, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক একটা ব্যাপার হতে পারে।
 
সোমবার সকাল ৬টায় সিলেটের চাঁদনিঘাট থেকে তিনি সাঁতার শুরু করবেন। ২৮৫ কিলোমিটার সাঁতরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফেরিঘাটে পৌঁছাতে প্রায় ৭০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে তার ধারণা।
 
তার এ যাত্রায় তিনি সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ, এই ৪ জেলা আংশিক বা সম্পূর্ণ অতিক্রম করবেন।
 
এ ব্যাপারে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, নৌ-পুলিশসহ সিভিল সার্জনের একাধিক টিম সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। পানিতে অবস্থানকালীন সময়ে তার যাতে শারীরিক বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না হয়, বা হলেও যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করবেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
 
তাঁর এই সাঁতারে সার্বিক সহযোগিতা করছে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।  

তিনি তার এই সাঁতারের বিষয়টি যাতে সঠিকভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়, এ ব্যাপারে তিনি সিলেটের সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা ও দেশবাসীর আশীর্বাদ চেয়েছেন।
 
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ উদ্দিন আহমদ, রজনীকান্ত দাশ, রাকেশ সরকার, প্রীতি কুসুম চৌধুরী, অমলেন্দু দাশ, পান্না লাল রায় ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২২
এনইউ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।