ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

খেলা

আশরাফুলের ওপর চড়াও তামিম

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১২
আশরাফুলের ওপর চড়াও তামিম

ঢাকা: মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবালরা তো ক্রিকেটই খেলেন। জাতীয় দলের এই দুই ক্রিকেটার প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে এবার মাঠের পরিবেশটাই করলেন কলুষিত।

উত্তেজক কথা চালাচালির একপর্যায়ে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়। তামিমের ক্রোধ এতটাই চড়ে গিয়ে গিয়েছিলো আরেকটু হলে আশরাফুলের গলা টিপে ধরতেন! ভাগ্যিস আম্পায়ার শরফদ্দৌলা ইবনে শহীদ আশরাফুলকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। অগ্রজের প্রতি তামিমের আচরণ ছিল এতোটাই মারমুখি।

নেপথ্যের ঘটনাটি খুবই তুচ্ছ। অথচ তুচ্ছ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে লঙ্কাকাণ্ড  বেঁধে যাবে স্বপ্নেও ভাবেনি কেউ। ঘটনার সূত্রপাত মাঠের বাইরে, ওল্ড ডিওএইচএস’র ক্রিকেটার ফয়সাল হোসেন ডিকেন্সের এলবিডব্লু  আউট হওয়া নিয়ে সতীর্থরা আপত্তি করেন। এ সময় ভিক্টোরিয়ার তাঁবু থেকে  ক্রিকেট কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বাদল তাদের উত্যক্ত করার চেষ্টা করেন। আশরাফুল বিষয়টা মাঠের আম্পায়ার আনিসুর রহমানের নজরে আনলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন ভিক্টোরিয়ার ব্যাটসম্যান তামিম। এককথায় দুইকথায় তামিম ইকবাল আশরাফুলের ওপর চড়াও হন।

তামিমের ঔদ্ধত্য দেখে সতীর্থ খেলোয়াড়রাও মর্মাহত। নাম গোপন রাখার শর্তে তামিমের দলের একজন ক্রিকেটার বাংলানিউজকে বলেন,“আপনারা তো দূর থেকে দেখেছেন, আমরা কাছে ছিলাম। আশরাফুল ভাই’য়ের উদ্দেশ্যে যে ভাষা তামিম ব্যবহার করেছে একজন সুস্থ মানুষ তা করতে পারে না। আশরাফুল ভাই না হয় একটা কথা বলেই ফেলেছেন,  সেজন্য উনার সঙ্গে যা-তা ব্যবহার  তামিমের উচিৎ হয়নি। আমরা তো বস্তিতে বড় হইনি, তাই না?”

খেলার মাঠে অসংযত হওয়ার অপরাধে তামিমকে পরের ম্যাচের ম্যাচে নিষিদ্ধ এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার ক্রিকেট কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বাদলকেও সাজঘরে একম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন ম্যাচ রেফারি জিয়াউল হক।

তামিমেরও উপলব্ধি হয়েছে আশরাফুলের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারের ওপর ওভাবে চড়াও হওয়া ঠিক হয়নি,‘এটা ঠিক আমি অনেক আক্রমণাত্মক ছিলাম। যা হয়েছে তা খেলার মাঠেই থাকবে আশা করি। খেলা শেষে আমি আশরাফুল ভাইয়ের কাছে দুঃখ (সরি) প্রকাশও করেছি। আমার সঙ্গে যে কয়জন ক্রিকেটারের সুসম্পর্ক আছে, আশরাফুল ভাই তাদের একজন। আমিও নিশ্চিত আশরাফুল ভাই ওই ঘটনা মনে রাখবেন না। ”

যদিও তামিমের দাবি আশরাফুলই আগে অশালীন হয়েছে,“আমি উনাকে বলেছি ভাই মাঠের বাইরে যা হয় হোক আমরা ওসবে কান না দিয়ে ক্রিকেট খেলি। এরপরই তিনি আমাকে খারাপ কথা বলেন। তা না হলে আমি রাগবো কেন! একজন সিনিয়র ক্রিকেটারেরও তো কথাবার্তায় দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ, তাই না। ’

মাঠের একজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে জানা গেছে ফয়সাল হোসেন ডিকেন্সকে উত্যক্ত করার জন্য কভার অঞ্চল থেকে দৌঁড়ে পয়েন্টে চলে আসেন তামিম এবং কটুক্তি করেন। এরপরই বাদলের হয়ে আশরাফুলকে হাত-পা ভেঙ্গে  দেওয়ার হুমকিধামকিও দেন। তামিম অবশ্য এসব অস্বীকার করেছেন,“আমি অত খারাপ কথা বলতে পারি না। ম্যাচরেফারি যে আমাকে শাস্তি দিয়েছে তাও মেনে নিয়েছি, সরি বলেছি। ”

আশরাফুল অবশ্য ঘটনার বর্ণণা দিয়েছেন অন্যভাবে, ডিকেন্স ভাই আউট হয়ে চলে যাওয়ার সময় ভিক্টোরিয়ার ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে এসে তাদের কর্মকর্তা বাদল গালাগাল দিচ্ছিলেন। আমি ওটা আম্পায়ার আনিস ভাইকে দেখাচ্ছিলাম। তামিম এতে আপত্তি তোলে। এরপর কথা কাটাকাটি হয়। সাকিব তখনই আমার কাছে ঘটনার জন্য দূঃখ প্রকাশ করে, সরি বলে। অথচ তামিম বলে কি না সরি বলার কিছু নাই। অবশ্য খেলা শেষে তামিম আমাকে সরি বলেছে।

অপ্রীতিকর ওই ঘটনা আশরাফুলও মাঠের ভেতরেই রাখতে চান,‘আমি ওসব ভুলে গেছি। খেলার মাঠে অনেক কিছুই হয়। তা মনে রাখতে নেই। ’

ম্যাচরেফারি জিয়াউল হক মাসুদ জানালেন,‘মাঠে যে অপরাধ করেছে তামিম তার ভিডিও চিত্র আমাদের কাছে আছে। খেলা শেষে সে বিনয়ী না হলে এবং তার ইমেজের কথা বিবেচনা না করলে অর্থদন্ডের পাশাপাশি অন্তত তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হতো। ”

মাঠে তামিমের এমন অশালীন হয়ে ওঠার ঘটনা নতুন নয়। ২০০৬ সালে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের খেলায় তালহা যুবায়েরের সঙ্গে অখেলোয়াড়ি আচরণ করায় নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তামিম। এই তো বেশিদিন আগের কথা নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টেও তামিমকে সতর্ক করেছিলেন আইসিসির আম্পায়ার প্যানেল। আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সব সময়ই জাতীয় দলের এই ক্রিকেটারের মাঠের আচরণ প্রশ্নবৃদ্ধ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড’র আম্পায়াররা তো একবাক্যে বলে দিলেন,“তামিমের আচরণ সব সময় উগ্র। জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার বলে সে পার পেয়ে যায়। আমরা সব সময় তাকে ছাড় দিয়েছি। কিন্তু আজ যা করেছে তা অমার্জনীয়। ”
       
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।